ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গুণে ভরা তুলসী

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

গুণে ভরা তুলসী

রোগ সারাতে তুলসী পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। আসলে এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত বেশকিছু শক্তিশালী উপাদান নানাবিধ রোগ সারাতে দারুণভাবে সাহায্য করে থাকে, যার উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও। কিন্তু এ কথা জানা আছে কি তুলসীপাতা চিবোলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে শরীরের? এই বিষয়ে হওয়া বেশি কিছু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে তুলসীপাতা চিবানোর সময় তা থেকে প্রচুর মাত্রায় আয়রন এবং মার্কিউরি স্যালাইভা সঙ্গে মিশতে শুরু করে। ফলে দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি হয়। সেইসঙ্গে শরীরের ওপরও কু-প্রভাব পরে। তাই তো তুলসীপাতা না চিবিয়ে জলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। আর যদি জলের সঙ্গে খেতে ইচ্ছা না করে, তাহলে সরাসরি পাতাটা গিলেও ফেলতে পারেন। আর যদি এমনটাও করতে ইচ্ছা না করে, তাহলে তুলসীপাতা দিয়ে বানানো চা খেতে পারেন। এমনটা করলেও দারুণ উপকার মেলে। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে প্রতিদিন তুলসীপাতা খাওয়া শুরু করলে কী কী উপকার মিলতে পারে জানেন? রক্ত পরিশুদ্ধ হয় প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২-৩টি তুলসীপাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান এবং টক্সিন শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরের ভেতর থেকে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ডায়াবেটিস দূরে থাকে বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত তুলসীপাতা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে শুরু করে। সেইসঙ্গে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাও বাড়ে। ফলে শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনাই থাকে না। প্রসঙ্গত, মেটাবলিক ডয়ামেজ-এর হাত থেকে লিভার এবং কিডনিকে বাঁচাতেও তুলসীপাতা দারুণভাবে সাহায্য করে। ক্যান্সার দূরে থাকে তুলসী পাতায় উপস্থিত ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট শরীরের ভেতরকার ক্যান্সার সেল যাতে কোনভাবেই জন্ম নিতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে ক্যান্সার রোগ ধারের কাছে ঘেঁষার সুযোগই পায় না। প্রসঙ্গত, গবেষণায় দেখা গেছে তুলসীপাতা লাংস, লিভার, ওরাল এবং স্কিন ক্যান্সারের প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে ফাইটোনিউট্রেয়েন্ট-এর পাশাপাশি তুলসী পাতায় থাকা একাধিক এ্যান্টি-অক্সিডেন্টও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। স্ট্রেস কমায় তুলসীপাতা খাওয়া মাত্র কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ কমে যেতে শুরু করে। ফলে স্ট্রেস লেভেলও কমতে শুরু করে। কারণ কর্টিসল হরমোনের সঙ্গে স্ট্রেস-এর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। প্রসঙ্গত, ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমাতেও তুলসীপাতা দারুণভাবে সাহায্য করে। তাই তো এবার থেকে যখনই মনে হবে মানসিক চাপ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখনই তুলসীপাতা খাওয়া শুরু করবেন। দেখবেন উপকার মিলবে। মাথা যন্ত্রণা কমায় সিডেটিভ এবং ডিসইনফেকটেন্ট প্রপার্টিজ থাকার কারণে তুলসীপাতা যে কোন ধরনের মাথা যন্ত্রণা কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি প্রায়শই সাইনাস বা মাইগ্রেন-এর সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে কষ্ট কমাতে তুলসীপাতাকে কাজে লাগাতে পারেন। দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে একাধিক পুষ্টিগুণে ভরপুর তুলসীপাতা, দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ছানি এবং গ্লুকোমার মতো চোখের রোগকে দূরে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সেইসঙ্গে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন আটকাতেও সাহায্য করে। সর্দি–জ্বরের প্রকোপ কমায় তুলসীপাতা হলো প্রাকৃতিক এ্যান্টিবায়োটিক। তাই তো জ্বর এবং সর্দি-কাশি সারাতে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির কোন বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে তুলসীপাতা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র যে যে ভাইরাসের কারণে জ্বর হয়েছে, সেই জীবাণুগুলোকে মারতে শুরু করে। ফলে শরীর ধীরে ধীরে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ব্রণের প্রকোপ কমে তুলসী পাতায় উপস্থিত এ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুদের সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলে। ফলে ব্রণের প্রকোপ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে নানাবিধ সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, ব্রণের চিকিৎসায় তুলসীপাতা খেতে পারেন অথবা সরাসরি মুখে পেস্ট বানিয়ে লাগাতেও পারেন। দুই ক্ষেত্রেই সমান উপকার পাওয়া যায়। আচ্ছা, এখন আসি- কিভাবে তুলসীপাতা খাওয়া উচিত? চিবানো যখন যাবে না, তখন তো অন্য রাস্তা বের করতেই হবে। কি তাই তো? একেবারেই! কিন্তু অন্য কোন রাস্তা আছে কি? আছে তো! বিশেষজ্ঞদের মতে সরাসরি চিবিয়ে না খেয়ে বরং তুলসীপাতা দিয়ে বানানো চা খাওয়া যেতে পারে। অথবা অল্প করে মধুর সঙ্গে মিশিয়েও তুলসীপাতা গ্রহণ করতে পারেন। এমন পদ্ধতিতে খেলে শরীরের কোন ক্ষতি তো হবেই না বরং একাধিক উপকার হবে। দুটি রেসিপি বিভিন্নভাবে খাদ্য তালিকায় তুলসীর ব্যবহার করতে পারেন। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি রেসিপি- তুলসীর চা : আধা চামচ আদা কুচি, ১২-১৫টি তুলসীপাতা এবং এক চামচের চার ভাগের এক ভাগ এলাচ গুঁড়া তিন কাপ পানিতে ১০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিন। সামান্য মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে উপভোগ করুন তুলসীর চা। তুলসীর সালাদ : এক কাপ শসা কুচি, ১২-১৫টি তুলসীপাতা, ৫০ গ্রাম ট্রকরা পনির, একটি লেবুর রস, এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, সামান্য লবণ এবং স্বাদের জন্য মরিচ। সব উপকরণ মিশিয়ে উপভোগ করুন তুলসীর সালাদ। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য তুলসীকে রাখুন আপনার রেগুলার হেলথ কেয়ার রুটিন-এ। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। যাপিত ডেস্ক
×