ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাম্প্রদায়িক উস্কানি, উপাসনালয় ব্যবহার করে প্রচার নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

 সাম্প্রদায়িক উস্কানি,  উপাসনালয় ব্যবহার করে  প্রচার  নিষিদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে আজ থেকে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হচ্ছে। কিন্তু প্রচারণার ক্ষেত্রে বেশকিছু বিধিনিষেধ রয়েছে নির্বাচন কমিশনের আচরণ বিধিমালায়। এসব মেনেই সকল প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা সম্পন্ন করার নির্দেশ রয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী ২১ দিন প্রচারণায় মাঠে থাকতে পারবেন এমপি প্রার্থীরা। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে সকল প্রচার নিষিদ্ধ। নির্বাচনী প্রচারের সময় ২১ দিন। সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও ধর্মীয় উপাসনালয় ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচার নিষিদ্ধে বিধান রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা লঙ্ঘন করলে প্রার্থী ও দলের বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানা ও কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছানো হয়েছে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে এই বিধিমালা সরবরাহ করছে ইসি। আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী এখন থেকে সরকারী সুযোগ সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা, রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা যাবে না। এ বিধিমালা প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পীকার, সরকারের মন্ত্রী, চীফ হুইপ, ডেপুটি স্পীকার, বিরোধী দলীয় নেতা, উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী, সমমর্যাদাসম্পন্ন কোন ব্যক্তি সংসদ সদস্য এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এ বিধিমালায় বলা হয়েছে সরকারী সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তার সরকারী কর্মসূচীর সঙ্গে নির্বাচন কর্মসূচী যোগ করতে পারবেন না। সরকারী সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তার নিজের বা অন্যের পক্ষে প্রচারণায় সরকারী যান, সরকারী প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার বা অন্যবিদ সরকারী সুবিধাভোগ করতে পারবে না। এ ছাড়া একই উদ্দেশ্যে সরকারী আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা কর্মচারী বা অন্য কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে ব্যবহার করতে পারবে না। নির্বাচনী প্রচারণায় বড় বিষয় হলো পোস্টার। এবারের নির্বাচনে প্রার্থীরা নিজেদের ইচ্ছামত পোস্টার করতে পারবেন না। এ ব্যাপারে ইসির সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। প্রচারণায় ব্যবহৃত পোস্টার হবে সাদা কালো। আয়তন হবে ষাট সেন্টিমিটার গুণন পঁয়তাল্লিশ সেন্টিমিটার। সাদা কালো রঙের ব্যানার হবে অনধিক তিন মিটার গুণন এক মিটার। পোস্টার ও ব্যানারে প্রার্থী তার প্রতীক ও নিজের ছবি ছাড়া অন্য কোন ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন না। কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও মুদ্রণের তারিখবিহীন কোন পোস্টার লাগাতে পারবেন না। কোন প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে ভোটারদের প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে কোন প্রকার বলপ্রয়োগ বা অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না। প্রচারের ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাবে সকল প্রার্থী। তবে প্রতিপক্ষের সভা, শোভাযাত্রা, এবং অন্যান্য প্রচারাভিযান পন্ড বা তাতে বাধা দেয়া যাবে না। সভার দিন, সময় ও স্থান সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। তাছাড়া সভার অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে স্থানীয় পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জানাতে হবে। চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এমন কোন স্থানে সভা-সমাবেশ নয়। বিধিমালায় আরও বরা হয়েছে, সিটি করপোরেশন, পৌর এলাকায় অবস্থিত দালান, দেয়াল, গাছ, বেড়া, বিদ্যুত ও টেলিফোনের খুঁটি বা দন্ডায়মান বস্তুতে পোস্টার লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগানো যাবে না। দেশের সরকারী বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের স্থাপনার ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রয়োজ্য। বাস, ট্রাক, ট্রেন, স্টিমার, লঞ্চ, রিক্সা কিংবা অন্য কোন প্রকার যানবাহনের ক্ষেত্রে একই বিধি নিষেধ রয়েছে। তবে দেশের যে কোন স্থানে পোস্টার লিফলেট, হ্যান্ডবিল ঝুলিয়ে টাঙ্গানো যাবে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টারে কোন প্রকার পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল লাগানো যাবে না। এসব প্রচারে ক্ষতি সাধন বা বিকৃত করা যাবে না। প্রচারণায় কোন গেইট বা তোরণ নির্মাণ ও দেয়াল লিখন নিষিদ্ধ। প্রতি ইউনিয়নে সর্বোচ্চ একটি ও পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতি ওয়ার্ডে একাধিক নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করা যাবে। ক্যাম্পে ভোটারদের কোমল পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন বা কোনপ্রকার উপঢৌকন দেয়া চলবে না। সাম্প্রদায়িক উস্কানি নিষিদ্ধ ॥ প্রতি নির্বাচনেই দেখা যায় প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন প্রার্থীরা। এমনকি সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়ারও ঘটনা ঘটে। এ সব বিষয়ে আচরণ বিধিমালায় সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচন চলাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য বা কোন প্রকার তিক্ত বা উস্কানিমূলক কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোন বক্তব্য দেয়া যাবে না। মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোন ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোন প্রকার নির্বাচনী প্রচার নিষিদ্ধ। ভোটকেন্দ্রের নির্ধারিত এলাকার মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য ও অ¯্র বহন নয়। দুপুর ২টা থেকে রাত আটটার মধ্যে মাইক ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া আচরণ বিধিমালায় কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনী এলাকায় সরকারী উন্নয়ন কর্মসূচীতে কর্তৃত্ব করা কিংবা এ সংক্রান্ত সভায় যোগদান করতে পারবে না। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে পূর্বে প্রদত্ত মনোনয়ন হয়ে থাকলে নির্বাচন পূর্ব সময়ে তা অকার্যকর হবে। সরকারী সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনের দিন ভোটদান ব্যতিরেকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ কিংবা নিজে প্রার্থী না হলে গণনা কক্ষে প্রবেশ বা উপস্থিত থাকতে পারবে না। জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে অতিগুরুত্বপূর্ণ সরকারী সুবিধাভোগী ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট এলাকায় নির্বাচনপূর্ব সময়ের মধ্যে কোন সফর বা নির্বাচনী প্রচারণা যেতে পারবে না। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোটার হলে কেবল ভোট দানের জন্য তিনি এলাকায় যেতে পারবেন। এছাড়া আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী নির্বাচন পূর্ব সময়ে প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উন্মোচন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোন সরকারী আধাসরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তহবিল হতে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কোন প্রকার অনুদান ঘোষণা বা অর্থছাড় করা যাবে না। বিধিমালার আওতাধীন মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীসহ অন্যান্যরা সরকারী কর্মসূচীর সঙ্গে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী যোগ করতে পারবে না। আগে এ বিষয়টি উপনির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হলেও এখন তা জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হবে। এছাড়া সরকারী বাড়ি, সার্কিট হাউসে থাকতে হলে বিধিমালা অনুযায়ী কেবল থাকা ও খাওয়া দাওয়া করবে পারবে। কিন্তু এসব জায়গায় কোন সভা বা রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করতে পারবে না। নির্বাচনী এ বিধিমালা লংঘন করা হলে আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। এদিকে আচরণবিধিসহ নির্বাচনী অপরাধ তদন্তে আরও সক্রিয় হতে ‘নির্বাচন তদন্ত কমিটির’ বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, নির্বাচন আচরণবিধি প্রতিপালনসহ অপরাধ আমলে নিয়ে বিচার করার দায়িত্ব যাদের দেয়া হয়েছে, সেই দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করতে হবে। এ জন্য বিচারকদের আরও সক্রিয়ও হতে হবে। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন তদন্ত কমিটির (ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি) বিচারকদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান। ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্য ২৪৪ জন, যুগ্ম জেলা জজ ও দায়রা জজ এবং সহকারী জজরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ইতোমধ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গসহ নানা অপরাধের প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ আসা শুরু করেছে কমিশনে। মাঠ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি নীরব রয়েছে। এ সময় যুগ্ম জজ পর্যায়ের বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিগুলো তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করায় সিইসি তাদের ওপর ক্ষোভও প্রকাশ করেন। বলেন, তদন্ত কমিটির বিচারকদের দৃশ্যমান হয়ে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা প্রত্যেকদিন শ’ শ’ অভিযোগ পাই। কিন্তু এসব অভিযোগ আমাদের কাছে আসার কথা নয়। কারণ আপনারা সেখানে রয়েছেন। অভিযোগগুলো আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দেব। কেএম নুরুল এ সময় আরও বলেন, বিচারকদের সমন্বয়ে প্রতি জেলায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে নির্বাচন আচরণবিধি প্রতিপালনসহ অপরাধ আমলে নিয়ে বিচার কাজ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেই দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করতে হবে। প্রার্থীর অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। আপনাদের করণীয় যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে মানুষের অভিযোগ শুনবেন। আমলে নেবেন। যেন অভিযোগ ঢাকা পর্যন্ত না আসে। এলাকায় বসে সমাধান পেতে হবে। শাস্তি ॥ কোন প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি নির্বাচন পূর্ব সময়ে বিধিমালার কোন বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ছয় মাসের কারাদন্ড অথবা পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্ধদন্ড করা হবে। কোন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচন পূর্ব সময়ে এইন বিধিমালার কোন বিধান লঙ্ঘন করলে অনাধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদ- করা হবে।
×