ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ড. কামালসহ ঐক্যফ্রন্টের শরিক নেতারা বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

 ড. কামালসহ ঐক্যফ্রন্টের শরিক নেতারা বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের মূল শরিক বিএনপির কাছে ২০টি আসনে গণফোরামের প্রার্থী দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন দলটির সভাপতি ব্যারিস্টার ড. কামাল হোসেন। কিন্তু ভোটের হিসাব-নিকাশে শেষ পর্যন্ত পাঁচটি আসন পেয়েছে তার দল। যদিও অনেক নেতাই বলেন, বিএনপির কাছে ৩০টি আসন চেয়েছিল গণফোরাম। শেষ পর্যন্ত কাক্সিক্ষত আসনগুলো না পাওয়ায় বিএনপির ওপর ড. কামাল হোসেন ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে তার দলের সূত্র বলছে। শুধু তাই নয়, আসন বণ্টন ইস্যুতে গণফোরাম ছাড়াও ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলো বিএনপির প্রতি অসন্তুষ্ট। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়া নিয়ে অনেকটা টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল বিএনপি। দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা ও তারেক রহমানের অনুপস্থিতি দলটির ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়। এর মধ্যে বি চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠন করা হয় যুক্তফ্রন্ট। এতে কয়েকটি সমমনা রাজনৈতিক দল যুক্ত হয়। কথা ছিল কামাল হোসেন এই ফ্রন্টে যুক্ত হবেন। শেষ পর্যন্ত তিনি এই জোটে যুক্ত হয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নামে নতুন রাজনৈতিক মোর্চা গঠন করেন । জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের পর বিএনপির সঙ্গে ঐক্য নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়। শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারাসহ কামাল হোসেন নিজেও জামায়াত ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য গড়তে আপত্তি জানান। সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করতে দেখা যায় সাবেক মন্ত্রী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ কামাল হোসেনকে। উভয়পক্ষের আলোচনার মধ্যে ১৩ অক্টোবর এক ধরনের চমক নিয়ে জাতির সামনে হাজির হন কামাল হোসেন। তিনি বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের ঘোষণা দেন। গঠন করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে নতুন রাজনৈতিক মোর্চা। যার মধ্য দিয়ে প্রাণ ফিরে পায় দিশেহারা বিএনপি। তবে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে তিনি বাদ দেন বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টকে। শেষ পর্যন্ত কামাল হোসেনের সঙ্গে আছেন নাগরিক ঐক্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুরসহ বিএনপিপন্থী একাধিক বুদ্ধিজীবী। জোট গঠনের পর থেকেই নির্বাচনে আসন বণ্টন নিয়ে দেনদরবার শুরু হয়। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছিল, ২০ দলীয় জোট কিংবা ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের জন্য সর্বোচ্চ ৬০টি আসন ছাড় দেয়া হবে। হয়েছেও প্রায় কাছাকাছি। এতে বিএনপির মধ্যে যেমন গৃহদাহ শুরু হয়েছে তেমনি গণফোরামসহ অন্য শরিক নেতারাও সন্তুষ্ট নন। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিএনপির প্রার্থীরা দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালাসহ গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে ভাংচুর চালিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বাসা থেকেই মনোনয়নের চূড়ান্ত চিঠি বিতরণ করেছেন। জানা গেছে, প্রত্যাশিত আসন না পাওয়ায় বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের কিছুটা দূরত্বও তৈরি হয়েছে। তবে আসন ভাগাভাগি নিয়ে মনোমালিন্য থাকলেও এই মুহূর্তে ঐক্যফ্রন্টে থাকছেন ড. কামাল ও তার দল গণফোরাম। গণফোরামের ভাষ্য, বাকি ১৫টি আসনে তাদের শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন। ওই ১৫টি আসনের প্রার্থীরা গণফোরামের দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারেন। এতে আপত্তি জানাবেন না ড. কামাল হোসেন। গণফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জগলুল আফ্রিদী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে গর্ত থেকে তুলে এনেছেন। কিন্তু আসন ভাগাভাগির বিষয়ে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এর ফলে তৃণমূলের নেতাদের মনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিএনপির কাছ থেকে পাওয়া পাঁচটি আসন বাদে অন্য আসনে প্রার্থীরা যদি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে চায় তাহলে কোন আপত্তি আসবে না বলে মনে করি। এ অবস্থায় গণফোরাম ঐক্যফ্রন্ট কিংবা বিএনপির কাছ থেকে সরে যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ বলেন, আগামী ১৭ ডিসেম্বর ইশতেহার দেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই মুহূর্তে ঐক্যফ্রন্ট কিংবা বিএনপি ছেড়ে গেলে মানুষ ভাববে আমরা লোভী। আসন না পেয়ে ছেড়ে যাচ্ছি। মূলত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা জোটবদ্ধ হয়েছি। এই জোট থাকবে। ভবিষ্যতেরটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, কিছুটা ক্ষোভ তো থাকবেই। এটাই স্বাভাবিক। তবে আসন বাড়ানোর জন্য আমরা বিএনপিকে চাপ দিয়েছি। কিন্তু বিএনপির যুক্তির কাছে আমরা পারিনি। বিএনপি বলেছে, গণফোরামের প্রার্থীদের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট আসনে বিএনপির অনেক যোগ্য প্রার্থী আছে। ওই সময় আমি বলেছিলাম আমি তাহলে নির্বাচন করব না, আমার অন্য প্রার্থীদের যেন আসন বাড়িয়ে দেয়া হয়। জবাবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আপনি নির্বাচন করবেন না, আপনার সভাপতিও নির্বাচন করছেন না। এটা তো হতে পারে না। আমি চেয়েছিলাম আমার পরিবর্তে তৃণমূলের অন্য কোন প্রার্থী মনোনয়ন পাক। তারপরও নির্বাচনে আছি। সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মন্টু বলেন, আমাদের নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, এই মুহূর্তে কোন মতভেদ চাই না। যার যার মতো সবাইকে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা ঐক্যফ্রন্টেই আছি। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সর্বশেষ ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটকে ৫৭টি আসন ছেড়েছে বিএনপি। এরমধ্যে ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি, জামায়াতকে ২৩টি ও অন্যদের ১৫টি আসন ছাড় দেয়া হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক জেএসডিকে ৫টি, গণফোরামকে ৬টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে ৩টি, নাগরিক ঐক্যকে ৫টি এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে একটি আসন ছেড়েছে। বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। জোটের যারা চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলেন ॥ জেএসডির আসম আবদুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪), আবদুল মালেক রতন (কুমিল্লা-৪), শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন (ঢাকা-১৮), সাইফুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ-৩), নূরুল ইসলাম (শরীয়তপুর-১)। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ॥ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকী (টাঙ্গাইল-৮) ও টাঙ্গাইল-৪ আসনে রফিকুল ইসলাম, গাজীপুর-৩ আসনে ইকবাল সিদ্দিকী। গণফোরাম ॥ মোস্তফা মহসিন মন্টু (ঢাকা-৭), এএইচএম খালেকুজ্জামান (ময়মনসিংহ-৮), রেজা কিবরিয়া (হবিগঞ্জ-১), অধ্যাপক আবু সাঈয়িদ (পাবনা-১), আমসা আমিন (কুড়িগ্রাম-২)। এছাড়া সুব্রত চৌধুরী জানিয়েছেন- তিনি ঢাকা-৬ আসনে জোটের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া: সুলতান মোহাম্মদ মনুসর (মৌলভীবাজার-২)। নাগরিক ঐক্য ॥ মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-২), এসএম আকবর (নারায়ণগঞ্জ-৫), শাহ রহমত উল্লাহ (রংপুর-১), মোফাখখারুল ইসলাম (রংপুর-৫), নূরুর রহমান জাহাঙ্গীর (বরিশাল-৪) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন।
×