ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আয়নার সামনে দাঁড় করানো অরিত্রী

তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর ’পরে রাগ করো তোমরা যেসব...

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর ’পরে রাগ করো তোমরা যেসব...

মোরসালিন মিজান ॥ তেলের শিশি ভাঙল বলে/খুকুর ’পরে রাগ করো/তোমরা যে সব বুড়ো খোকা/ভারত ভেঙে ভাগ করো!/তার বেলা? অন্নদা শঙ্করের বিখ্যাত পঙ্ক্তি। জরুরী প্রশ্ন। প্রায় একই প্রশ্ন ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে। শিক্ষকদের কাছে। বাবা-মায়েরাও সন্তানকে নামী-দামী স্কুল-কলেজে ভর্তির জন্য মরিয়া। ‘আমরা আমাদের অসাধারণ তবলা বাদক ছেলেটির পেছনে আটটা প্রাইভেট টিউটর রেখে তাকে একটা তৃতীয় শ্রেণীর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ম্যানেজমেন্ট কোটায় ভর্তি করাব।’ কেন? জিপিএ ফাইভ না পেলেই নয়। কিন্তু ‘দেখেশুনে পাই ভয়!/শুধু এত এত নম্বর পেলে কি ভাল ছেলে, মেয়ে হয়?’ হয় না। বরং অতিরিক্ত চাপে ন্যূনতম চাওয়াও চিরতরে হারিয়ে যায়। হারিয়ে যে যায়, দায় শুধু শিক্ষার্থীর? মূল আলোচনায় আসা যাক। ভিকারুননিসার কথা হোক। স্কুলের ছাত্রী অরিত্রীর মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড়। মানবিক মানুষ মাত্রই হতভম্ব। সহপাঠীদের চোখের দিকে তাকানো যায় না। কান্না, অভিমান, আতঙ্ক সব একসঙ্গে দৃশ্যমান হচ্ছে। মানবিক মানুষের মনে হাজারো প্রশ্ন। অরিত্রী নামের এটুকুন মেয়ে। মেয়েটিকে আপনারা শিক্ষকরা মেরে ফেললেন! সত্যি কী অপরাধ করেছিল সে? কত বড় অপরাধ? শিক্ষকতা পেশা নয়। ব্রত। অথচ মানুষ গড়ার কারিগরদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়। কিছু পুরনো। নতুন করে সামনে এসেছে আরও কিছু। সবই ঘোরতর। স্বনামধন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভেতরে ভেতরে অন্তঃসারশূন্য করে দিচ্ছেন আপনারা। আনন্দময় পরিবেশে পাঠদানের পরিবর্তে আগামী প্রজন্মকে রেসের ঘোড়া বানাচ্ছেন। চাবুক মেরে চলেছেন। ওরা ঘাগুলো দেখাতে পর্যন্ত পারবে না? দোষ কেবল ওদের? শুধু অরিত্রীর দোষ? অভিযোগ করা হচ্ছে, নিষেধ থাকা সত্ত্বেও মেয়েটি মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেছিল। আস্ত বই তাবিজ বানিয়ে ফোনের ভেতরে নাকি ঢুকিয়ে নিয়েছিল সে। দেখে দেখে লিখছিল। প্রকৃত ঘটনা তা-ই হয়ে থাকলে আমরা একে শুদ্ধ বলতে পারব না। ভুল করেছে মেয়েটি। অন্য অনেক শিক্ষার্থী যে ভুল করে না, অরিত্রী করেছে। কিন্তু সবে যে ক্লাস নাইন! ইউনিফর্ম। দুই বেণী করা চুল। এখন ভুল করবে না? কখন করবে? ভিকারুননিসার মতো নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হওয়ার পর? শাখা প্রধান বা শ্রেণীশিক্ষক হওয়ার পর? গবর্নিং বডির প্রধান হওয়ার পর ভুল করার কথা ছিল? অরিত্রীর বয়স মাত্র ১৫। এই বয়স কি ভালমন্দ বোঝার পক্ষে যথেষ্ট? ধরে নেয়া যাক, যথেষ্ট। ধরে নেয়া যাক, শিক্ষার্থী ভুল করেছে। অরিত্রী পেটে ব্যথা হতে পারে জেনেও স্কুলের সামনে থেকে ময়লা মেশানো জীবাণুযুক্ত আচার কিনে খেয়েছে। পরীক্ষায় দু’লাইন দেখে লেখাকে লুকিয়ে আচার খাওয়ার চেয়ে বড় অপরাধ সে নাও ভাবতে পারে। বড়দের মতো করে ভাবতে না পারার ব্যর্থতা তার আছে। এ অবস্থায় শিক্ষকের কী কাজ? ব্যবস্থা গ্রহণ করা? নামীদামী স্কুল- কলেজগুলোতে যে চোটপাটের নীতি বহাল আছে, তাতে করে ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তাই আগে মাথায় আসার কথা। তো নিন না ব্যবস্থা। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নেয়া ব্যবস্থা কারও শিক্ষাজীবনকে সামান্যতম বিঘিœত করার কথা নয়। শিক্ষার্থীকে শুধরে নেয়ার জরুরী প্রয়োজনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতেই পারে। কিন্তু আমরা দেখলাম উল্টো ছবি। অরিত্রীর শিক্ষাজীবন পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হলো। অঙ্কুরিত হতে না হতেই পিষে ফেলা হলো অরিত্রী নামের চারাগাছটি। মেরে ফেলা হলো! নিজের গলায় ফাঁস সে নিজেই দিয়েছে। দোষ তার বটে। স্কুল কর্তৃপক্ষ যে ক্ষেত্রটা প্রস্তুত করে দিলো, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিলÑ তার বিচার হবে না? ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুচকি হাসি মুখে ধরে রেখেই বললেন, ‘দুঃখজনক ঘটনা।’ এমনকি তার ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিটিকে চাকরি রক্ষার শেষ চেষ্টা ছাড়া কিছু মনে হয়নি। মেয়ের সামনে বাবা-মাকে অপদস্ত করা হলো। কাউকে অপদস্ত করার যে বিকৃত আনন্দ, যে মজা লোটার নিকৃষ্ট মানসিকতা, সে তো রাস্তাঘাটের দৃশ্য। নিত্য দেখা যায়। ভিকারুননিসার মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন দেখতে হবে? দেখতে হলো। শিক্ষার্থীর সামনে তার বাবা-মাকে অপমান করা হয়েছে। কতটা অপমান করা হয়েছে তা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অনুমান করা মুশকিল। তবে এটুকু স্পষ্ট যে, সামনে শূন্য চেয়ার থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীর বাবা-মাকে বসতে বলার মতো সৌজন্যতা দেখানো হয়নি। বাবা কাঁচুমাঁচু করে একটি চেয়ারে নিজ থেকেই বসেছিলেন বটে। মা দাঁড়িয়ে ছিলেন। বসতে বলা হয়নি। একজন নারীর প্রতি বড় চেয়ারে বসা আরেক নারীর এমন আচরণ তার ভেতরের সীমাবদ্ধতাকে প্রকাশ করেছে। শাখাপ্রধানসহ কেউ কেউ অভিন্ন আচরণ করেছেন বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। সব দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছে মেয়ে। অভিমানী হয়েছে। দোষ এখানে কার বেশি? সন্তানহারা বাবা-মা জানাচ্ছেন, একাধিক শিক্ষয়িত্রী তাদের সঙ্গে যারপরনাই নিষ্ঠুর এবং অমানবিক আচরণ করেছেন। তারা বার বার হাত জোর করে ক্ষমা চেয়েছেন। আর এমন ভুল মেয়ে করবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন। কিছুতেই কিছু হয়নি। অরিত্রীর মা অসুস্থ। সম্প্রতি তার একটি অপারেশন হয়েছে এমন তথ্য জানানোর পর অধ্যক্ষ বলেন, এসব আপনাদের ব্যক্তিগত বিষয়। ভাবা যায়? মেয়ের সামনে এক রকম দুরদুর, ছিঃ ছিঃ করে তাড়িয়ে দেয়া হয় অভিভাবকদের। কাকুতি-মিনতির জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, কাল এসে টিসি নিয়ে যাবেন। প্রথম কথাটি ছিল, টিসি নিয়ে যাবেন। শেষ কথাও তাইÑ টিসি নিয়ে যাবেন। নিজের ছাত্রীকে টিসি ধরিয়ে দিচ্ছেন। এতটুকু খারাপ লাগা নেই। উল্টো চোর ধরার আনন্দ! গণপিটুনি দেয়ার স্থূল সুখ! অরিত্রীর মনোজগতে তখন কী চলছে? না, ওই কথা ভেবে সময় নষ্ট করার মতো সময় ছিল না শিক্ষকের হাতে। হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়া শিক্ষার্থীর বয়স তাই বাড়তে শুরু করেছিল। নিজের স্কুলের আচরণ দেখে সমাজ বাস্তবতাও যেন বুঝে গিয়েছিল সে। সমাজ তাকে মেনে নেবে না। বরং এভাবেই অপদস্ত করতে থাকবে। একটু একটু করে গিলে খাবে। নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু হলো। শেষ কোথায় কে জানে? তাই পৃথিবী থেকেই টিসি নিয়ে চলে যায় অরিত্রী! বুঝতে বাকি থাকে না, নিজের প্রতিষ্ঠান থেকেই এমন টিসি দেয়া-নেয়া শিখেছিল মেয়েটি। ঘটনার পর তার সহপাঠীরা একযোগে বলছে, কথায় কথায় তাদের টিসি ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। একেবারে সামান্য ঘটনা। একবাক্যে মীমাংসা করে দেয়া যায়। সেদিকে না গিয়ে টিসি দেয়ার তোড়জোর শুরু করে দেন টিচাররা। এতে করে মানসিক চাপে ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে পড়তে থাকে তারা। এর আগে ২০১২ সালে আত্মহত্যা করে চৈতী নামের আরেক শিক্ষার্থী। সেও ক্লাস নাইনে তখন। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। ক্লাসে ভাল করতে পারছিল না। কেন পারছে না? অধৈর্য হয়ে ওঠে ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষ। তাকে জোর করে মানবিক বিভাগে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। লজ্জায়-অপমানে আত্মহননের পথ বেছে নেয় চৈতী। ওই ছাত্রীর মৃত্যু দেখে অরিত্রী কিছু শিখেছিল। শিখেছিল বৈকি! স্কুল কর্তৃপক্ষের যা শেখার ছিল, শেখেনি। ফলে আরও একটি করুণ মৃত্যু। দায় কার? অরিত্রীর মৃত্যুর পর ক্রমেই সামনে আসছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতির খতিয়ান। আগে মুখ খোলার সাহস পেতেন না অভিভাবকরা। মেয়েটি মরে গিয়ে অনেকের ঘুমন্ত বোধকে জাগিয়ে দিয়েছে। ফেসবুক-ইউটিউবের যুগ হওয়ায় একটি নাড়া দিতে পেরেছে। প্রতিবাদ হচ্ছে এখন। বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে যত ক্ষুদ্রতা, সামনে আসছে। শৃঙ্খলা বজায় রাখার নামে ছোট ছোট বাচ্চার ওপর এত চাপ সৃষ্টি করা, এত অবদমিত করে রাখার নোংরা কৌশল সম্পর্কে জানা হয়েছে সবার। শিক্ষক তার যোগ্যতা দিয়ে, ব্যবহার দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠবেন। শ্রদ্ধা-ভালবাসা অর্জন করে নেবেন তিনি। অথচ তাদের অনেকের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ব ফলানোর অভিযোগ। ক্ষমতা দেখানোর অভিযোগ। যে ধরনের ভাষ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে করে শিক্ষকদের কোন কোন আচরণ মস্তানির পর্যায়ে পড়ে। ভিকারুননিসার মতো নামকরা স্কুলের শিক্ষক। পা তাই মাটিতে পড়ে না। কোমল স্বভাবের হলে চলে? অথচ এ কথা সবার জানা যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বেছে বেছে সেরা ছাত্রীদের ভর্তি করে। সেরা ছাত্রী নিয়ে সেরা রেজাল্ট। সেরা স্কুল হওয়া। শিক্ষকদের এ ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা নেই, তা নয়। কিন্তু মূল কারণ তো মেধা নিয়ে ভর্তি হওয়া ছাত্রীরা। তাহলে শিক্ষকদের এত দম্ভ কেন? কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অযুত অভিযোগ আসছে। ভর্তি বাণিজ্যের কথাই ধরা যাক, খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংবাদ সম্মেলন করে ভর্তি বাণিজ্যের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সেখানে (ভিকারুননিসায়) ১০ লাখ টাকা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সেটা বন্ধ করতে আমরা লটারী সিস্টেম চালু করেছি। কিন্তু তার পরও দেখা যাচ্ছে অনুমোদনের চেয়ে অনেক বেশি ছাত্রছাত্রী তারা ভর্তি করে। তার মানে, বোঝাই যায় কেন তারা অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রী ভর্তি করেন। তিনি বলেন, আমরা নতুন কোন শাখা খোলার অনুমোদন দেই না। কিন্তু তারা একটার পর একটা শাখা খোলে। এর উদ্দেশ্য সহজেই বোঝা যায়। একই ধরনের অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ছাত্রী বের কয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে কী এ্যাচিভ করতে চায় কর্তৃপক্ষ? উত্তর খুঁজতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কথারই প্রতিধ্বনি শোনা যায়। অভিভাবকরা জানান, একজনকে টিসি দিলে কর্তৃপক্ষ শূন্য আসনে আরেকজনকে ভর্তি করতে পারেন। তাতে করে বাড়তি ১০ লাখ টাকা আয় হয়। অভিভাবকরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি সেশনে ছাত্রী থাকার কথা ৭০জন। ভর্তি করা হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০জন। একজন অভিভাবক তো বললেন, এত ছাত্রী একসঙ্গে পড়ানো হবে জানলে আমি আমার মেয়েকে এখানে ভর্তি করাতাম না। সব দেখে-বুঝে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ঘোরতর সব অপরাধ অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ জড়িত। শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা আছে। অথচ তেলের অরিত্রীর তেলের শিশি ভাঙার অপরাধ তারা ক্ষমা করতে পারেননি। উল্লেখ করা আবশ্যক যে, নামকরা আরও অনেক স্কুল- কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিগৃহীত হওয়ার তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করছেন। তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে বিষয়টা? ভাবার আছে অবশ্যই। আগেই বলা হয়েছে, বাবা-মায়েদের কথা। তারাও দায় এড়াতে পারবেন না। অভিভাবকদের জন্য বিশেষ বার্তা দিয়ে গেছে অরিত্রী। বড় স্কুলে, বিখ্যাত কলেজে ভর্তি হতে হবে। হবেই। তা না হলে সব শেষ? জিপিএ ফাইভ পেতে হবে। না হলে ভাবিদের সঙ্গে কি নিয়ে কথা বলবেন মায়েরা? সোশাল স্ট্যাটাস অর্জনে মরিয়া তারা। ছেলেমেয়ে বিরাট স্কুল-কলেজে চান্স পেলে অভিভাবকদের স্ট্যাটাস বাড়ে। সোশাল ভ্যালুজ নিয়ে তাই ভাবেন না তারা। ছেলেমেয়েদের আলাদা করে সততা শেখানো হয় না। কবি কার্তিক ঘোষ ব্যাঙ্গ করে লিখেছিলেন: ভাল মেয়ে ঠিক কাকে বলে জানো! ভাল ছেলে মানে কি?/তুমিও বলবে সহজ প্রশ্ন, মাপকাঠি একটি।/যে মেয়ে পেয়েছে অংকে একশ, যে ছেলে ভূগোলে সেরা/ তারাইতো ভাল বলছে সবাই, হিরের টুকরো এরা...। সবার প্রত্যাশা মতো অরিত্রীও হিরের টুকরো হওয়ার চেষ্টা করেছে। সব ধরনের চেষ্টাই তাকে করতে হয়েছে। এবং অতঃপর দায় মেনে, দোষ স্বীকার করে চলে গেছে কিশোরী। চলে গেছে কিন্তু আয়নার সামনে ঠিক দাঁড় করিয়েছে শিক্ষকদের। অভিভাবকদের। বাকি অরিত্রীদের বাঁচাতে হবে। আহ্বানটুকু জানিয়ে গেছে সাম্প্রতিক মৃত্যু। সান্ত¡না বলতে এই। বাকিটুকু বেদনা। অরিত্রীর জানা হলো না, জীবন অনেক বড়। আরও অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় পাস করে পরেই টিকে থাকতে হয়। তথাকথিত পাস-ফেল, টিকে থাকার উর্ধে এখন সে। ভাল করে খাওয়া, ঘুম, খেলাধুলা, নাচগান কিছুই ছিল না তার। শুধু পড় পড় পড়। পড়ার চাপ আর থাকল না। বইয়ের ভারি ব্যাগটি কাঁধ থেমে নামিয়ে মনের মতো করে বিশ্রাম নিচ্ছে সে। বিশ্রাম নাও খুকু। রেস্ট ইন পিস।
×