ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুর হানাদার মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

 মাদারীপুর হানাদার মুক্ত দিবস আজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৯ ডিসেম্বর ॥ রবিবার মাদারীপুর মুক্ত দিবস। ’৭১ এর এই দিনে একটানা ৩৬ ঘণ্টা সম্মুখ যুদ্ধে পর্যুদস্ত হানাদার বাহিনীর ৫৩ জল্লাদ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে জেলা শত্রু মুক্ত হয়। এ সংবাদে হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলার সবকটি থানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। এ কারণেই হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা মাদারীপুর শহরের এআর হাওলাদার জুট মিলের অভ্যন্তরে ও নাজিমউদ্দিন কলেজে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে তাদের ঘিরে রাখে। ৮ ডিসেম্বর দুপুরে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক আবদুল মতিনের ড্রাইভার আলাউদ্দিন কলাগাছিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সংবাদ পৌঁছে দেয় যে, ৯ ডিসেম্বর ভোরে পাকিবাহিনী মাদারীপুর থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে পালিয়ে যাবে। এ সংবাদ পেয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের ৩ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা বর্তমান সদর উপজেলার ঘটকচর থেকে সমাদ্দার ব্রিজের পশ্চিম পাড় পর্যন্ত মহাসড়কের দুপাশে প্রায় ৪ কিমি. ব্যাপী অবস্থান নেয়। ৯ ডিসেম্বর ভোর ৫টায় হানাদার বাহিনী গোলবারুদ, অস্ত্র ও কনভয়সহ তাদের বাঙালী দোসর রাজাকার, আলবদর, আলসামস ও মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঘটকচর ব্রিজ পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাদের তাড়া খেয়ে হানাদার বাহিনী দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা একটি কনভয় থেকে নেমে কভার ফায়ার করতে করতে আরও দ্রুত সব গাড়ি নিয়ে এগোতে থাকে। এ সময় হানাদার বাহিনীর ফেলে যাওয়া কনভয় থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে নেয়। এদিকে সমাদ্দার ব্রিজে ৯ ডিসেম্বর সারা দিন রাত এবং ১০ ডিসেম্বর সারাদিন সম্মুখ যুদ্ধ চলে মুক্তিযোদ্ধা ও হানাদার বাহিনীর মধ্যে। তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনীর গোলাবারুদ স্তিমিত হয়ে আসলে ১০ ডিসেম্বর বিকেলে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে হ্যান্ডমাইকযোগে পাকি বাহিনীকে আত্মসর্পণের আহ্বান জানানো হয়। এতে সাড়া দিয়ে হানাদার বাহিনী রাইফেলের মাথায় সাদা কাপড় উড়িয়ে বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে আসে এবং পাশের খাল থেকে পানি, গাড়ি থেকে শুকনো খাবার ও গোলাবারুদ নিয়ে পুনরায় বাঙ্কারে ঢুকে গোলাগুলি শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে সন্ধ্যার আগেই হানাদার বাহিনীর মেজর আবদুল হামিদ খটক ও ক্যাপ্টেন সাঈদ ৩৭ পাকিসেনা এবং ১৪ মুজাহিদসহ ৫৩ জল্লাদ নিয়ে খলিল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। মিত্র বাহিনী ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে মাদারীপুর শত্রু মুক্ত হয়। নড়াইল নিজস্ব সংবাদদাতা নড়াইল থেকে জানান, ১০ ডিসেম্বর নড়াইল মুক্ত দিবস। একাত্তর সালের এই দিনে নড়াইলের মুক্তিপাগল দামাল ছেলেরা মিত্র বাহিনীর কোন প্রকার সহযোগিতা ছাড়াই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত করে নড়াইলকে মুক্ত করে। দিবসটি পালন উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে গণকবর ও বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, শহরে শোভাযাত্রা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে গণসঙ্গীত ও কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠান। নড়াইলের সংগঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের এক করে বিশাল বাহিনী যশোর অভিমুখে পাঠিয়ে দেন। ৬ এপ্রিল সকালে পাক হানাদার বাহিনীর দু’টি জেট বিমান হতে নড়াইল শহরের ওপর ব্যাপকভাবে মেশিনগানের গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা চালালে নড়াইল শহর জনশূন্য হয়ে পড়ে। ১৩ এপ্রিল হানাদার বাহিনীর একটি দল নড়াইল শহরের চৌরাস্তায় এক রেস্টুরেন্ট মালিক মন্টুকে গুলি করে আহত করে এবং হরিপদ সরদার, সরসপুরের প্রফুল্ল মিত্র ও ভাটিয়া গ্রামের কালু বোসকে ধরে নিয়ে দাইতলা কালভার্টের নিকট গুলি করে ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনার পর ৯ ডিসেম্বর বিজয়ের তীব্র আকাক্সক্ষা নিয়ে নড়াইলের মুজিব বাহিনীর কমান্ডার শরীফ হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে ভবানীপুর গ্রামের শরীফ বাড়িতে দুই শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা জড়ো হয়ে নড়াইলের দিকে রওনা হয় এবং কমান্ডার ফজলুর রহমান জিন্না, আমীর হোসেন, উজির আলী, আঃ হাই বিশ্বাসসহ মুক্তিযোদ্ধারা নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ চালালে হানাদার বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে সম্মুখযুদ্ধে বাগডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান শহীদ হন। ওই দিনই পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাংলোতে অবস্থানরত পাকিস্তান মিলিটারির ৪০জন সদস্যকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলে তারা আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা চতুর্দিক থেকে প্রচ- গোলাবর্ষণ শুরু করলে পাক মিলিটারিরা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।
×