ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী ইশতেহারে নাট্যকর্মীদের দাবি

প্রকাশিত: ০৭:২০, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচনী ইশতেহারে নাট্যকর্মীদের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এ মাসের ৩০ তারিখ। খুব শীঘ্রই শুরু হবে নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে নির্বাচনী ইশতেহার। মনে করা হয় ভোটার টানতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে সেই ইশতেহার। নানা রকম উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেবে রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের প্রতিশ্রুতির মধ্যে যেন উঠে আসে টেলিভিশন নাটকের উন্নয়নের বিষয়। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার হলে শনিবার দুপুরে টেলিভিশন নাটকের বিভিন্ন সংগঠন এক হয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। টেলিভিশন নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সঙ্কট উত্তরণের লক্ষ্যে প্রস্তাবনা জানায় তারা। এতে পাঁচটি দাবি তুলে ধরে নাটকের সংগঠনগুলো। এই প্রস্তাবনাপত্রটি পাঠ করেন নাট্যকার সংঘের সভাপতি মাসুম রেজা। তাদের প্রধান দাবি বাংলাদেশে সরকারীভাবে টেলিভিশন নাটককে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হোক। অন্য চারটি দাবি হলো- টেলিভিশন নাটক সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর পেশকৃত সুপারিশমালা তথ্যমন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়ন এবং সম্প্রচার নীতিমালা বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত করা। বর্তমানে দেশের নাটক অনেক উন্নত হওয়া সত্ত্বেও শুধু অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচারের কারণে দর্শক হারাচ্ছে এবং এই দর্শক ক্রমাগতভাবে ঝুঁকে পড়ছে বিদেশী চ্যানেলের দিকে। তাই পে-চ্যানেলের বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছেন তারা। তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যতীত সব দেশই পে-চ্যানেলের আওতাভুক্ত। টিআরপি পদ্ধতিকে গ্রহণযোগ্য ও বিজ্ঞানসম্মত করা হোক। টিভি চ্যানেলগুলোর কাছে প্রযোজকদের যে বকেয়া আছে তা সরকারের মধ্যস্ততায় পরিশোধের ব্যবস্থা করা হোক। টিভি নাটক নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহ উদ্দিন লাভলু বলেন, আমরা যে কাজটি করছি এটার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত মানুষের মন। সারা বাংলাদেশের মানুষের এবং প্রবাসী যারা বাংলাদেশী আছে সবার কাছেই নাটক প্রাত্যহিক সচেতনতার একটা বড় মাধ্যম। এভাবে যদি চিন্তা করি এটা অনেক জরুরী কাজের মধ্যেই পড়ে। সব কিছু বন্ধ হয়ে গেলেও টেলিভিশন চ্যানেল কিন্তু খোলা থাকে। নাটক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এই কাজটি সুষ্ঠুভাবে হওয়ার জন্য সরাসরি সরকারের দৃষ্টি খুব স্ট্রংভাবে থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। আমাদেরকে অল্প বাজেটের কাজ দিয়ে এখন কোটি কোটি টাকার বিদেশী অনুষ্ঠানমালার সঙ্গে ফাইট করতে হয়। স্বাধীনতার পরে যত গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো মঞ্চ নাটক ও টেলিভিশন নাটক। আমাদের নাটকের যে গৌরবময় সময় সেই জায়গা থেকে এখন আমরা অনেক দূরে সরে এসেছি। শুধু আমাদের সিস্টেমের জন্য সরে আসতে হয়েছে। আমরা এক সঙ্গে হয়েছি। সবকিছু ঠিক করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুল আলম সাচ্চু বলেন, আমরা আশাকরি যেন স্বাধীনতার স্বপক্ষের সরকার আসে। তাদের ম্যানুফেস্টতে চাই নাটককে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হোক। তাহলে যেটা হয়, প্রতিশ্রুতি রক্ষার দায়বদ্ধতা থেকে যায়। পরবর্তীতে আমরা বলতে পারব। আমরা দেখি অন্য খাত থেকে আমাদের সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে অনুদান দেয়া হয়। সেটা না করে টেলিভিশনের জন্য আলাদা বরাদ্দ চাই। আগামী ১১ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করবেন। এই ঘোষণার মধ্যে নাটককে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি যেন থাকে, এই দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, শুনেছি প্রধানমন্ত্রীকে যখন আমাদের সঙ্কটের কথা বলা হয় উনি নাকি বলেন, তোমাদের দুই দুইটি মন্ত্রী দিয়েছি। তোমাদের সঙ্কট থাকবে কেন? আমরা কিছু বলতে পারি না। ম্যানুফেস্টের মধ্যে প্রতিশ্রুতি দিলে আমরা পরে সেটা বলতে পারব। নাট্যকার সংঘের সাধারণ সম্পাদক এজাজ মুন্না বলেন, দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। কিন্তু একটি দেশের উন্নয়ন তখনই সার্থক হয় যখন সেই দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশের শিল্প সংস্কৃতির সকল শাখা বিকশিত হয়। আমাদের টেলিভিশন মিডিয়া সেভাবে প্রফেশনালি বিকশিত হয়নি। যে কোন প্রতিষ্ঠান নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলে। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন থেকেই অনিয়মের মধ্যে দিয়ে যাপিত হচ্ছি। আমরা আমাদের কাজ ঠিকভাবেই করে যেতে চাই। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রতিশ্রুতিতে যদি উল্লেখ করে যে, তারা কিভাবে টিভি নাটকের ইন্ডাস্ট্রিকে দেখতে চান তাহলে আমরা একটু হলেও শান্তি পাব। এই আয়োজনের সভাপতি ও টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মামুনুর রশীদ বলেন, বিদেশী সিরিয়াল একটা স্বাধীন দেশে ২৪ ঘণ্টা চলতে পারে না। পিকটাইমে তো চলতে পারেই না। ২০১৬ সালে শহীদ মিনারে আমরা বিশাল সভা করেছিলাম, সেখানে ১০টি দাবি জানিয়েছিলাম। সেই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হলেই আমাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। আমরা এখন সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। সামনে আমাদের সমস্যার সমাধান যেন হয়। রাজনৈতিক দলগুলো যেন তাদের ইশতেহারে এগুলো উল্লেখ করে এবং সরকার গঠন করার পর পরই এগুলো বাস্তবায়ন করে।
×