ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যাড থেটারের গুণীজন সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

ম্যাড থেটারের গুণীজন সংবর্ধনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ম্যাড থেটার প্রযোজিত সময়ের আলোচিত নাটক ‘নদ্দিউ নতিম’। এ বছর নাটকের সমাপনী প্রদর্শনী উপলক্ষে বিশেষ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে ম্যাড থেটার। কর্মসূচীতে নাটক মঞ্চানের পাশাপাশি ‘আনন্দে আটখানা’ শীর্ষক আয়োজনে দেশের ৮ গুণী ব্যক্তিকে সংবর্ধনা দেবে দলটি। আগামী ১১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটারে এ আয়োজন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ম্যাড থেটারের প্রধান আসাদুল ইসলাম আসাদ বলেন, আমাদের এই আয়োজনে নাটক একখানা আর সঙ্গে ফ্রি আনন্দে আটখানা। তিনি বলেন, ২০১৮ সাল চলে যাচ্ছে। বছরটি গত হওয়ার আগে ফিরে দেখতে চাই আমাদের শিল্প সাহিত্যাঙ্গনের সফল মুখগুলো। বছরজুড়ে দেশের সবপ্রান্তে যাদের হাতে উঠেছে সাফল্যের স্বীকৃতি তাদের প্রত্যেককেই জানাই অভিনন্দন শুভেচ্ছা। ২০১৮ সালে এমন কয়েকজন সফল মানুষকে ম্যাড থেটারের পক্ষ থেকে দেয়া হবে সংবর্ধনা। সবাইকে খুঁজে বের করে সংর্ধনা দেয়ার মতো সামর্থ্য না থাকায় ছোট পরিসরে এই আয়োজন। ২০১৮ সালে শিল্প-সাহিত্যের আটজন পদকপ্রাপ্ত ও সম্মাননা লাভকারী গুণী মানুষদের এক প্লাটফর্মে এনে একটি উপভোগ্য সন্ধ্যা উদযাপনের লক্ষ্যে একটি ম্যাড থেটার পাগলামি ‘আনন্দে আটখানা’। ম্যাড থেটারের আটজন নির্বাচিত প্রিয়মুখ হলো মণিপুরী থিয়েটারের জ্যোতি সিনহা জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার প্রবর্তিত ‘আলোক কুমার রায় পদক’, প্রাচ্যনাটের বাকার বকুল থিয়েটার আর্ট ইউনিট প্রবর্তিত ‘এস এম সোলায়মান প্রণোদনা’ ও নাট্যধারা প্রবর্তিত ‘তনুশ্রী পদক’, সুবচন নাট্য সংসদের সোনিয়া হাসান, জলসিঁড়ি পাঠাগার প্রবর্তিত ‘নাট্যজন সম্মাননা’, আইটিআইয়ের সাধনা আহমেদ, স্বপ্নদল প্রবর্তিত ‘বিশ্বনারী দিবস সম্মাননা’, জুয়েইরিয়াহ মউ, টঙ-ঘর টকিজ, দিল্লী আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বেস্ট শর্ট ফিল্ম এ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্ত, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের পান্থ শাহরিয়ার, থিয়েটার প্রবর্তিত ‘মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মৃতিপদক’প্রাপ্ত, বাংলা একাডেমির পিয়াস মজিদ, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল প্রবর্তিত ‘হুমায়ূন আহমেদ তরুণ সাহিত্যিক পুরস্কার’ এবং জীবন সঙ্কেত নাট্যগোষ্ঠীর রুমা মোদক, দেশ পাবলিকেশন্স প্রবর্তিত ‘দেশ পা ুলিপি পুরস্কার’ আনন্দে আটখানার আগে ‘নদ্দিউ নতিম’ নাটকের ৪৬তম প্রদর্শনী হবে। কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কালজয়ী সৃষ্টি ‘কে কথা কয়’ উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘নদ্দিউ নতিম’। নাটকটি ম্যাড থেটারের প্রথম প্রযোজনা। নাটক রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন আসাদুল ইসলাম। যিনি ম্যাড টোরের হেড ম্যাড। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন আসাদুল ইসলাম, সোনিয়া হাসান ও আর্য মেঘদূত। যারা একই পরিবারের সদস্য, বাংলা নাটকের ক্ষেত্রে যা অনন্য ও নতুন মেরুকরণ। নাটকটির সহযোগী নির্দেশক আনিসুল হক বরুণ, সেট ও লাইট ডিজাইন ফয়েজ জহির, পোশাক সোনিয়া হাসান, আবহসঙ্গীত আর্য মেঘদূত, আলোক নিয়ন্ত্রণে আরিফ আহমেদ ও আবহসঙ্গীত নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন আতিক ও আদর। নাটকটি ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। নাটকটি দর্শকদের আকৃষ্ট করেছে এর অভিনয় গুণে, কাহিনীর চমৎকারিত্বে, ঘটনার বিন্যাসে ও চরিত্রের বিচিত্রতায়। নাটকের গল্পে দেখা যাবে মতিন একজন কবি। মনে মনে নিজেকে কল্পনা করে নেয় সে একজন উজবেক কবি। নিজেই সে নিজেকে স্বপ্ন দেখে- ধবধবে ফর্সা গায়ের রং, পরনে জোব্বার মতো একটা পোশাক, লম্বাটে মুখ, চোখ তীক্ষè। মতিনের মধ্যে বাস করে অন্য এক মতিন। দিনে দিনে মতিনউদ্দিন হয়ে ওঠে নদ্দিউ নতিম। মতিনের হৃদয়ের সবটুকু দখল করে থাকে সহপাঠিনী নিশু। ভাবের ভেলায় ভেসে বেড়ালেও ভাবাবেগে মতিন ডুবে যায় না, সে বুঝতে পারে নিশুর মতো স্কলার মেয়ের যোগ্য সে নয়। মতিনের একদিন চোখে পড়ে পত্রিকার পাতায় তিন লাইনের ছোট্ট একটা বিজ্ঞাপন- একজন সার্বক্ষণিক টিউটর প্রয়োজন, টিউটরের সৃজনশীলতা ব্যক্তিগত যোগ্যতা হিসেবে ধরা হবে, বেতন আকর্ষণীয়। বেতনের আকর্ষণীয় ক্ষমতায় মতিন তার কবি সত্তাকে সাময়িক স্তিমিত রেখে কমল নামের একজন মানসিক প্রতিবন্ধী বাচ্চার টিউটর পদে অভিষিক্ত হয়। মতিনের কর্মকাে অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হওয়ায় তাকে টিউটর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু প্রতিবন্ধী বাচ্চাটি কবিকে ভোলে না। বাচ্চাটি কবির সঙ্গে কথা বলতে চায় কিন্তু সে সুযোগ তো আর নেই। কবি চলে গেছে। বাচ্চাটি জেদ ধরে- সে কথা বলবেই বলবে। এক পর্যায়ে সুযোগ হয় কবির সঙ্গে কথা বলার। কমল মতিনের সঙ্গে তার জীবনের একটি সিক্রেট শেয়ার করে, যে সিক্রেটের জন্য মতিনকে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়াতে হয়। হাসপাতালের এক হিমশীতল ঘরে সে শুয়ে থাকে। তার কাছে মনে হয়, সে যেন অনন্তকাল এভাবেই শুয়ে ছিল। কী সেই সিক্রেট যার জন্য কবিকে জীবন দিতে হলো? প্রথমত বাংলাদেশের মূলধারার নাটকে ‘নদ্দিউ নতিম’ই প্রথম নাটক যেখানে একজন শিশু একটি কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছে। দ্বিতীয়ত- বর্তমান সময়ে একজন মানুষ অন্য একজনকে হত্যার জন্য নিজেকে আত্মাহুতি দিচ্ছে। এই নাটকে দেখা যায় একজন মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুকে বাঁচাতে একজন কবির নির্বিকার আত্মাহুতি। অর্থাৎ অন্যকে হত্যা করতে নয় বরং বাঁচাতেই আরেক মানুষের জীবন উৎসর্গ যা এই সময়ের জন্য এক অনন্য আদর্শ হিসেবে পরিগণিত। তৃতীয়ত- এই নাটকে একটি কাল্পনিক পরিবারের কাহিনী মঞ্চস্থ হয় যা একটি বাস্তব পরিবারের সদস্যরা অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের সামনে ফুটিয়ে তোলে। আসলে মানুষের অবচেতনে এক ধরনের সূক্ষ্ম পাগলামি কাজ করে। এই পাগলামি ব্যবহার করে কেউ কেউ প্রথাগত যুক্তি বুদ্ধির দেয়াল ভেঙ্গে নতুন সমীকরণ আমাদের সামনে দাঁড় করায়। যারা এই পাগলামি ব্যবহার করতে পারে তারা প্রচলিত ধারার বাইরে নতুন কিছু করার সম্ভাবনা তৈরি করে। সেই সম্ভাবনাকে থিয়েটারের মাধ্যমে প্রকাশ করার জন্য ম্যাড থেটার।
×