ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিন ম্যাচের প্রথম ওয়ানডে আজ

২০০৯ ফিরবে ২০১৮ সালে?

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

২০০৯ ফিরবে ২০১৮ সালে?

মিথুন আশরাফ ॥ নয় বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দারুণ সুখস্মৃতি মিলেছিল। টেস্ট, ওয়ানডে; দুই সিরিজেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। তাও আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। ২০০৯ সালের সেই স্মৃতি কী এবার ২০১৮ সালেও ফিরবে? টেস্ট সিরিজ জেতা হয়ে গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করা গেছে। এবার ওয়ানডে সিরিজের পালা। আজ দুই দলের মধ্যকার প্রথম ওয়ানডে দিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে। এ সিরিজে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যবধান ৩-০ হলেই ২০০৯ ফিরে আসবে। এবার দেশের মাটিতে সেই স্বাদ পাবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ১৯৮৬ সাল থেকে ওয়ানডে খেলে। ২০০০ সাল থেকে টেস্ট খেলে। কিন্তু ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কখনই টেস্ট কিংবা ওয়ানডেতে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সাল থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে শুরু করে বাংলাদেশ। ১০ বছর ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট কিংবা ওয়ানডেতে হারাতে পারেনি। ২০০৭ সালে টি২০ বিশ্বকাপে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একটি ম্যাচে হারানো যায়। ২০০৯ সাল থেকেই দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। এই বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যায় বাংলাদেশ দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে তখন তুলকালাম অবস্থা। পারিশ্রমিক নিয়ে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ডের সেইরকম দ্বন্দ্ব চলছে। বোর্ডও বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে সব তারকা ক্রিকেটারদের দলের বাইরে রেখে দেয়। বাংলাদেশ সুযোগ পেয়ে যায়। সেই সুযোগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্টে ও ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করে দেয় বাংলাদেশ। শুরুতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে। এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে কোন টেস্ট খেলুড়ে দলকে এমন হারের মুখে ফেলা যায়। প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশও করে বাংলাদেশ। সেই জয়গুলো নিয়ে তর্ক থেকে যায়। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যে হারানো যায়, সেই বিশ্বাস ক্রিকেটারদের মধ্যে তৈরি হয়ে যায়। এরপর ২০১২ সালে সর্বশেষ যখন বাংলাদেশের মাটিতে পাঁচ ওয়ানডের সিরিজ খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেইবারও ক্যারিবীয়দের সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকেও যে হারানোর ক্ষমতা রাখে বাংলাদেশ তা বিশ্ব ক্রিকেটকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০০৯ সালে ওয়ানডে সিরিজ জয় নিয়ে যে তর্ক ছিল তা দূর হয়ে যায়। কিন্তু টেস্ট সিরিজ নিয়ে সেই ধারণা পুষেই থাকে। বাংলাদেশ যে ২০০৯ সালের পর আর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারেনি। এবার সেই ধারণাও পাল্টে দেয়া হয়। টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে দেয় বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে ৬৪ রানে জেতার পর দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ১৮৪ রানের বড় ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো কোন দলকে ইনিংস ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। এবার ওয়ানডে সিরিজেও সেই ফল আনার মিশন শুরু হচ্ছে আজ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর ১টায় আজ প্রথম ওয়ানডে শুরু হবে। এরপর একই স্টেডিয়ামে একই সময়ে ১১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ওয়ানডে শুরু হবে। তৃতীয় ওয়ানডেটি সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে যে আত্মবিশ্বাস মিলেছে তা এখন ওয়ানডে সিরিজেও কাজে লাগাতে পারলেই হয়। প্রস্তুতি ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যেভাবে সহজেই হারিয়েছে বাংলাদেশ, ওয়ানডে সিরিজে কি হতে পারে; তার আলামত অনেকটাই মিলে গেছে। এখন মাঠে প্রভাব বিস্তার করতে পারলেই হলো। এই সিরিজ দিয়ে আবার পাঁচ সিনিয়র একসঙ্গে হচ্ছেন। এশিয়া কাপ থেকেই মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ একসঙ্গে খেলতে পারছেন না। টেস্ট, টি২০ খেলেন না মাশরাফি। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচের পর ইনজুরিতে পড়া তামিম আর ফিরতে পারেননি। আজ আবার ফিরছেন। সাকিবও এশিয়া কাপের পর থেকে কোন ওয়ানডে খেলতে পারেননি। আজ তাই পাঁচ সিনিয়র একসঙ্গে খেলবেন। আর এই পাঁচজন যে কতটা ভয়ঙ্কর তাতো বিশ্ব ক্রিকেট আগে থেকেই জানে। আবার খেলাটি হচ্ছে ওয়ানডে ফরমেটের। খেলাটি হবে আবার দেশের মাটিতে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ কতটা আতঙ্কের দল তা বুঝে গেছে সবদলই। দেশের মাটিতে এই ফরমেটে বাংলাদেশ যে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে তাও টের পেয়ে গেছে সব দল। সর্বশেষ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের কথাই ধরা যাক। তামিম নেই। নেই সাকিব। তবুও তিন ওয়ানডেতেই জিম্বাবুইয়েকে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তামিমকে ছাড়া খেলেই অনায়াসে জিতেছে বাংলাদেশ। তাহলে এবার ওয়ানডেতে যখন সব অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, দেশের সেরা ক্রিকেটাররা এক হচ্ছেন; ওয়েস্ট ইন্ডিজেরতো বারোটাই বেজে যাওয়ার কথা। আর বারোটা বাজা মানেই হচ্ছে তিন ওয়ানডেতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হার হওয়া। তিন ওয়ানডেতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হার হওয়া মানেই হচ্ছে হোয়াইটওয়াশ হওয়া। হোয়াইটওয়াশ হলেই ২০০৯ সালের সুখস্মৃতি ২০১৮ সালে ফিরিয়ে আনাও হবে। সত্যিই কী ফিরবে সেই স্মৃতি? বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন সম্ভব। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের জিততে হবে। একটা একটা ম্যাচ ভাবা ছাড়া সুযোগ নেই। প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে তিনটা ম্যাচ নিয়ে ভাবলে অনেক চাপ আসে। প্রস্তুতি ম্যাচের উইকেট যেমন ছিল, এখানের (মিরপুরের) উইকেট নিশ্চিত ওরকম থাকার কথা না। কারণ এখানে তিন শ’ রানের ইনিংস আবার চেজ খুব কমই হয়। সেক্ষেত্রে ভলিউমটা ভিন্ন হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রস্তুতি ম্যাচে যেটা আত্মবিশ্বাস দরকার ছিল যা যা দরকার ছিল করতে পেরেছে। এখন আসল কাজ শুরু কাল (আজ) থেকে। প্রথম ম্যাচটা আসলে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার পরেরটা পরে ভাবা যাবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘অবশ্যই সাকিব তামিম দলে থাকা আমাদের জন্য বিরাট এ্যাডভান্টেজ। প্রস্তুতি ম্যাচেও তামিম দারুণ খেলেছে, এটা তামিমের জন্যও স্বস্তি, আমাদের জন্যও স্বস্তি। ওরা দুইজন থাকা আমাদের জন্য, প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জন্য স্বস্তিদায়ক ব্যাপার।’
×