ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী কে?

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

আজ ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী কে?

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছেন তামিম ইকবাল। একাধারে ওয়ানডে, টি২০ ও টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক তিনি। ইনজুরিতে পড়ার আগেও ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে। বাঁহাতি এ ওপেনার তাই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মূল একাদশের অপরিহার্য অংশ। কিন্তু ইমরুল কায়েস, লিটন কুমার দাস ও সৌম্য সরকারকে বাদ দেয়ারও অবকাশ নেই। তামিমের অনুপস্থিতিতে এ তিনজনই দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। তবে তামিমের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে সঙ্গী হতে অন্তত দু’জনকে ছাড়তে হবে জায়গা। বিষয়টি টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ ও অধিনায়কের জন্য বেশ ভাল রকমের মাথাব্যথা। বাঁহাতি-ডানহাতি কম্বিনেশনে রাখতে চাইলে তামিমের সঙ্গী হিসেবে শুধু লিটনের নামটাই থেকে যায়। পুরনো পরিসংখ্যানে তামিমের সঙ্গে সফলতম জুটি হিসেবে ইমরুলের নামই চলে আসে। আর সর্বশেষ ৩ ম্যাচে বিস্ময়কর পারফর্মেন্স দেখিয়ে ইমরুল তার দাবিটা জোরালো করেছেন। সে তুলনায় লিটন কিছুটা ধারাবাহিকতায় পিছিয়ে। আর সৌম্য সর্বশেষ ওপেনিংয়ে নেমে এশিয়া কাপে ভাল করতে পারেননি। ওয়ানডাউনে নেমে নিজের ফেরার ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। তবে সাকিব আল হাসান ফেরাতে সেখানেও তার সুযোগ নেই। তবে অতীতে ওপেনিংয়ে দুর্দান্ত কিছু ইনিংস খেলা সৌম্যের সাম্প্রতিক ফর্ম তাকেও রাখছে বিবেচনায়। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন না তামিম। সেই সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন ইমরুল ও লিটন। বিশেষ করে ইমরুল ৩ ম্যাচের সিরিজে দুটি সেঞ্চুরি ও একটি ৯০ রানের ইনিংসসহ ৩৪৯ রান করে ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের পক্ষে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। অল্পের জন্য পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান বাবর আজমের ৩৬৪ রানের রেকর্ডটি পেরোতে পারেননি। এই সময়ে লিটন নিজেকে ধীরে ধীরে প্রমাণ করেছেন। বিশেষ করে গত সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তার ১২১ রানের বিস্ফোরক ইনিংসটি এখনও ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে লেগে আছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮৩ রানের ঝকঝকে ইনিংস উপহার দিয়ে বাদ পড়ার মতো অবস্থানে নেই লিটন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আবার ওয়ানডে দলে ফেরেন সৌম্য। তৃতীয় ওয়ানডেতে ওয়ানডাউনে নেমে ৯২ বলে ১১৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে পুরনো রূপে ফেরার ইঙ্গিতটা দিয়ে রেখেছেন। আবার বিসিবি একাদশের হয়ে বিকেএসপিতে তিনদিন আগে সেই তিন নম্বরে নেমেই আরেকটি ঝড়ো শতক উপহার দিয়ে প্রথম ওয়ানডে খেলার দাবিটা জোরালো করেছেন সৌম্য। ক্যারিয়ারের শুরুতে ওপেনার হিসেবে দারুণ নজর কেড়েছিলেন এ বাঁহাতি দীর্ঘকায় ক্রিকেটার। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালের এপ্রিলে মিরপুরে ১১০ বলে অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংসটা সবারই চোখে লেগে আছে। ফর্মের তুঙ্গে থাকলেও এই তিনজনের মধ্যে এবার জায়গা ছাড়তে হবে দু’জনকে। হয়তো একজনকে ব্যাটিং অর্ডারে নিচের দিকেও দেখা যেতে পারে। এ বিষয়ে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, ‘ভাল (মধুর) সমস্যা হলো সবাই ফর্মে আছে টপঅর্ডারে। যেটা আমরা অনেকদিন থেকে চাচ্ছিলাম। একটা সিদ্ধান্তে যেতেই হবে। ভাল হলে মনে হবে এটাই ঠিক আছে। খারাপ হলে মনে হবে যে রান করেও বাদ গেছে হয়তো ওকেই খেলালে ভাল হতো। কথাবার্তা অনেক চলবে। এখনও অনেকের চিন্তা-ভাবনা আছে। কোচ, নির্বাচকদের সঙ্গে আলাপ করে একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। হতে পারে এমন অনেক কিছুই। সাম্প্রতিক অতীতে কয়েকজন ওপেনার নিচে ব্যাটিং করেছে। ইমরুল ছয়ে ব্যাটিং করেছে। অসামান্য একটা ইনিংস খেলেছে। সৌম্য ফাইনালে ৭ নম্বরে নেমে দারুণ ব্যাটিং করেছে। বিশ্বকাপের কথা ভেবে আমরা এমন কিছু করতেও পারি।’ এমন উদাহরণ আজ কাজে লাগানো হতেই পারে। তবে একজন একাদশের বাইরে থাকছেন এতে সন্দেহ নেই। কারণ, সাকিবও ফেরার কারণে এখন ব্যাটিং লাইনআপে জায়গাটাও কমে এসেছে। সাম্প্রতিক ফর্মের সঙ্গে এখন তাই টিম ম্যানেজমেন্টকে ভাবতে হবে তামিমের সঙ্গে সবচেয়ে ভাল ওপেনিং সঙ্গী কে হতে পারেন। তামিম এখন পর্যন্ত অভিষেকের পর ১৪ জন ভিন্ন ভিন্ন সঙ্গী দেখেছেন। তার সঙ্গে অতীতে ওপেনিং করেছেন- জাভেদ ওমর, জুনায়েদ সিদ্দিকী, শাহরিয়ার নাফীস, ইমরুল, সৌম্য, এনামুল হক বিজয়, মোহাম্মদ আশরাফুল, মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন, মেহরাব হোসেন জুনিয়র, শামসুর রহমান, নাঈম ইসলাম, মুশফিকুর রহীম, মোহাম্মদ মিঠুন ও লিটন। এর মধ্যে সর্বাধিক ৫৪ ম্যাচ ইমরুলের সঙ্গে ওপেনিং করে ৩১.৮১ গড়ে ২টি সেঞ্চুরি ও ১৫ হাফ সেঞ্চুরিসহ সর্বাধিক ১৭১৮ রান। এরপর সৌম্যর সঙ্গে ২৩ ইনিংসে ৩৯.২৬ গড়ে ৩টি শতক ও ৩টি অর্ধশতকসহ করেছেন ৯০৩ রান। বিজয়ের সঙ্গে ২৬, জুনায়েদের সঙ্গে ২৫ ও নাফীসের সঙ্গে ২৪ ইনিংসে ওপেনিং করেছেন। সবচেয়ে বাজে হয়েছে লিটনের সঙ্গে ২ ম্যাচে ওপেনিং। মাত্র ৩ রান হয়েছে জুটিতে। ওপেনিংয়ে বরাবরই অপরিহার্য তামিম। সেটা ইনজুরিতে পড়ার আগের ফর্মটাতেই দেখিয়েছেন। এ বছর মাত্র ৯ ওয়ানডে খেলে অস্বাভাবিক ৯০.০০ গড়ে তিনি ২ সেঞ্চুরি ও ৪ হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৫৪১ রান। ইনজুরির পর ফিরেই প্রস্তুতি ম্যাচেও ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে শতক হাঁকিয়েছেন। তামিমের সঙ্গে সর্বাধিক ম্যাচে অনেক বেশি রান করার অভিজ্ঞতার দিক থেকে অবশ্য ইমরুল এগিয়ে। আর সৌম্য তার ওপেনিং সঙ্গী হিসেবে এগিয়ে সর্বাধিক ব্যাটিং গড়ের কারণে। তবে এ বিষয়ে মাশরাফি আরও বলেন, ‘ওপেনিংয়ে ইমরুল শেষ তিনটা ম্যাচে দুইটা সেঞ্চুরি, একটা বড় হাফ সেঞ্চুরি আছে। এখন যদি ইমরুলকে বসিয়ে দেয়া হয়, লিটন খেলে, সেক্ষেত্রে ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনটা জরুরী কতটুকু এটা দেখতে হবে।’
×