ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাজিরহাট হানাদার মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

নাজিরহাট হানাদার মুক্ত দিবস আজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি, ৮ ডিসেম্বর ॥ চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নাজিরহাট হানাদারমুক্ত দিবস আজ। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর উত্তর চট্টগ্রামের অন্যতম রণাঙ্গন নাজিরহাটে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে টিকতে না পেরে ভোরে পাক হানাদার বাহিনী পিছু হটে। এরপর শুরু হয় মুক্তিগামী ছাত্রজনতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ উল্লাস। পাক হানাদার বাহিনী পিছু হটার পর ওই দিন ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জোয়ানরা চাদের গাড়িতে করে কামান এবং অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দেশের মানচিত্র অঙ্কিত পতাকা নিয়ে আনন্দ উল্লাস করে নাজিরহাটে সমবেত হয়। এদিকে পলাতক পাক হানাদার বাহিনী ঐ দিন সন্ধ্যায় হাটহাজারীর অদুদিয়া মাদ্রাসার সামনে থেকে ৩/৪ টি বাসে করে ফের নাজিরহাটে আসে। তারা উল্লাসরত মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ জনতার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ। ওই যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী বাংলার দামাল ছেলেদের কাছে পরাস্ত হয়। গফরগাঁও নিজস্ব সংবাদদাতা গফরগাঁও থেকে জানান, আজ ৯ ডিসেম্বর গফরগাঁও মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে গফরগাঁও মুক্ত করেন। ১৯৭১ সালে ২৩ মার্চ গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বেলাল আহম্মেদ স্বাধীন বাংলার পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করেন। ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত গফরগাঁও হানাদার মুক্ত ছিল। ১৭ এপ্রিল থেকে হানাদার বাহিনী স্থল ও আকাশপথে আক্রমণ করে ১৯ এপ্রিল গফরগাঁও দখল করে নেয়। এরপর অসংখ্যবার গফরগাঁওয়ের মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয় এবং অধিকাংশ যুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। সর্বশেষ যুদ্ধ হয় ৫ ডিসেম্বর, মশাখালী স্টেশনের দক্ষিনে শীলা নদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। ৯ ডিসেম্বর ভোরের সোনালী সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তির উল্লাসে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয় এবং হানাদার মুক্ত হয় গফরগাঁও। দাউদকান্দি নিজস্ব সংবাদদাতা দাউদকান্দি থেকে জানান, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচ- আক্রমণের মুখে পাক হানাদার বাহিনী হটতে শুরু করলে দাউদকান্দির মুক্তিযোদ্ধারা মানসিকভাবে দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ, শহিদনগর ওয়ারল্যাস কেন্দ্রে এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের দাউদকান্দি ডাকবাংলোতে অবস্থানরত পাক সেনাদের টার্গেট করে উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্ব হতে একযোগে আক্রমণ শুরু করে। মোহাম্মদপুর, ডাকখোলা, গোয়ালমারী, বাতাকান্দি প্রভৃতি এলাকার ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রসর হতে থাকে, পূর্বদিক হতে মিত্রবাহিনীর আর্টিলারির কভারিং ফায়ার ফ্রন্ট থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করলে পাক সেনারা পশ্চিম দিকে হটতে থাকে। মিত্রবাহিনীর শেলিং-এর কারণে শহিদনগর ওয়ারল্যাস এলাকা ছেড়ে পাক সেনারা দাউদকান্দি সদরের দিকে দৌড়াতে থাকে। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর জনসাধারণ উত্তরদিকে গোমতী নদীতে আতঙ্কিত অবস্থায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৮ ডিসেম্বর দিবাগত সমস্ত রাত এবং ৯ ডিসেম্বর সকাল ১১ টা পর্যন্ত যুদ্ধের পর পাক সেনারা দাউদকান্দিতে তাদের শেষ আশ্রয়স্থল সড়ক ও জনপথের বাংলোতে ওঠে এবং সেখান থেকে লঞ্চযোগে মেঘনা নদী দিয়ে গজারিয়া হয়ে ঢাকায় পালিয়ে যায়। দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা দাউদকান্দি পৌঁছে হানাদারমুক্ত দাউদকান্দিতে স্বাধীন বাংলার লাল সবুজ পতাকা ওড়ায়।
×