ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাকরাইল মসজিদের ঘটনায় তোলপাড়

বিদেশীদের পাসপোর্ট মালামাল আটকে রেখেছে সা’দবিরোধীরা

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

বিদেশীদের পাসপোর্ট মালামাল আটকে রেখেছে সা’দবিরোধীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টঙ্গীতে তবলীগ জামাতে হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যার পর এবার কাকরাইল মসজিদে আসা বিদেশীদের পাসপোর্ট, অর্থ ও মাল আটকে রেখে মহাকেলেঙ্কারির জন্ম দিলেন তবলীগের বিতর্কিতরা। দেশে তবলীগ জামাতের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে বিদেশ থেকে আসা তবলীগ কর্মীদের পাসপোর্ট আটকে রেখে লাঞ্ছিত করে দেশে ফেরত যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়া হয়েছে। তবলীগের বিশ^ মারকাজ দিল্লীর নিজামুদ্দীন থেকে বহিষ্কৃত ও সাদ বিরোধীদের হাতে শনিবার বিদেশীদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিদেশীরা বলছেন, আমাদের অপরাধ কী জানি না। আমাদের টাকাপয়সা, পাসপোর্ট কী কারণে আটকে রাখা হয়েছে, তাও বলা হয়নি। আমরা ভীত। এদিকে শনিবারই পাসপোর্টসহ মাল ফেরত পাওয়ার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ঢাকায় ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ করেছেন সেই দেশের নাগরিকরা। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, মরক্কোসহ অন্তত সাত দেশের নাগরিক কাকরাইল মসজিদে তবলীগের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ বিরোধীদের উগ্র তৎপরতার চিত্র তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে, তবলীগের মূল ধারার সাথীরা অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, তবলীগের আড়ালে পাকিস্তানপন্থীরা সক্রিয়। তারা একের পর এক হামলা ও কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়ে বিদেশে বাংলাদেশের তবলীগ জামায়াত ও মারকাজ সম্পর্কে নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরতে চায়। হত্যা ও বিদেশীদের সঙ্গে এ আচরণ বাংলাদেশ থেকে এজতেমা ও মারকাজ পাকিস্তানে নেয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ। সাথীরা বিদেশীদের সঙ্গে আচরণের বর্ণনায় বলেছেন, তবলীগ জামাতে অংশ নেয়ার জন্য বিদেশ থেকে আসা দুই শতাধিক নাগরিককে চরমপন্থায় বিশ্বাসী ও জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত মাওলানা জোবায়ের গ্রুপ জীবননাশের হুমকি দিয়েছে। তাদের শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে, পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়েছে, বিদেশে ফেরত চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে, দেশে এজতেমা জোড় হবে না বলেও অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্ত করছে। ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তবলীগের সাথীরা বলছেন, এটা বিশ্ব এজতেমাকে পাকিস্তানে নেয়ার চক্রান্তের অংশ। সাদ বিরোধী অবস্থান থাকলে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ বিদেশীরা এখানে আসবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। এখন যেটা করা হচ্ছে তা চক্রান্তেরই অংশ। এরা তবলীগ জামাতের মূলকেন্দ্র দিল্লী নিজামুদ্দীন মারকাজকে উপেক্ষা করে তবলীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানকে সহায়তা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যার নেপথ্যে কাজ করছেন তবলীগের সাদ বিরোধী কয়েকজন। এসব নেতা আবার বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত। শনিবার দুপুরে কাকরাইল মসজিদের সামনে কথা হয় কয়েক বিদেশী ও তাদের পাশে দাঁড়ানো কয়েক সার্থীর সঙ্গে। জানা গেছে, শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে বিদেশ থেকে আসা তবলীগ কর্মীরা মসজিদে রাখা তাদের পাসপোর্ট, টাকা ও মাল আনতে গেলে প্রথমে সেখানে ঢুকতেই বাধা দেয়া হয়। আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নেয়া সাদ বিরোধীরা তাদের হুমকি দেন, কিছু দেয়া হবে না। সাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। অন্যথায় কিছু ফেরত দেয়া হবে না। এছাড়া বিদেশী তবলীগ কর্মীদের ঢাকার বাইরে বিভিন্নস্থানে জামাতে যেতেও বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সাথীরা। ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকরা বলেন, পাসপোর্ট ও নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ফেরত না পাওয়ায় দেশে ফিরতে পারছেন না তারা। দুপুরেই তারা পাসপোর্টসহ মাল ফেরত পাওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে ঢাকায় ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কাকরাইল মসজিদ সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ থেকে আসা তবলীগ কর্মীদের জন্য কাকরাইল মসজিদে একটি আমানতখানা রয়েছে। এখানে বিদেশী তবলীগ কর্মীদের পাসপোর্ট, বিমানের টিকেট, টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র রাখা হয়। এমনকি অনেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বেশি টাকা সঙ্গে না নিয়ে এই আমানতখানায় রেখে যান। টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমার আগে থেকেই বিভিন্ন দেশ থেকে তবলীগের অনুসারীরা আসা শুরু করেন। অনেকেই এজতেমার আগে একচিল্লা (৪০ দিন) সময় দেন বাংলাদেশে তবলীগের কাজে। এজতেমা শেষ করে তারা দেশে ফেরত যান। আবার কেউ কেউ এজতেমা শেষে বাংলাদেশে তবলীগের কাজে সময় ব্যয় করেন। এজতেমা ও এজতেমাপূর্ব ‘জোড়’- এ অংশ নিতে ইন্দোনেশিয়াসহ কিছু দেশের তবলীগ কর্মী ইতোমধ্যেই ঢাকায় এসেছেন। এদের মধ্যে কয়েকটি জামাত (দল) ইন্দোনেশিয়া থেকে নবেম্বরে বাংলাদেশে আসে। তাদের কয়েকজন নিজেদের পাসপোর্ট, টাকা ও জিনিসপত্র নেয়ার জন্য কাকরাইল মসজিদে যান। তাদের সহযোগিতা করার জন্য সঙ্গে ছিলেন তবলীগ কর্মী খোরশেদ আলমসহ কয়েকজন। ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকরা রমনা থানায় মৌখিকভাবে অভিযোগ জানান। পরবর্তীতে ৮ ডিসেম্বর তারা ঢাকায় ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ করেন। ইন্দোনেশিয়া জামাতের পাঁচ অনুসারী বর্তমানে মিরপুরের একটি মসজিদে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে একজন ডিকি রোমানতাসা বলেন, আমাদের পাসপোর্ট, জামাকাপড় ও টাকা কাকরাইল মসজিদ থেকে ফেরত দেয়া হচ্ছে না। থানায়ও গিয়েছিলাম কোন সমাধান পাইনি। টাকার জন্য আমাদের চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে। আমাদের মধ্যে অনেকের দেশে ফেরত যাওয়ার কথা ছিল। পাসপোর্ট ফেরত না পাওয়ার কারণে তারা ফেরত যেতে পারছেন না। বিমানের টিকেটের তারিখ পরিবর্তন করতে হয়েছে। আমরা বুঝতে পারছি না, এখন কী করব। একই অভিযোগ সরওয়ার্দি রুস্তমেরও। তিনি বলেন, আমাদের অপরাধ কী জানি না। আমাদের টাকাপয়সা, পাসপোর্ট কী কারণে আটকে রাখা হয়েছে, তাও বলা হয়নি। আমরা ভীত এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা কামনা করে কাকরাইল মসজিদের মুকিম মাওলানা জোনায়েদ সিদ্দিকী তবলীগ নিয়ে রাজনীতি করা ও বিদেশীদের হয়রানি করার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলছিলেন, অরাজনৈতিক তবলীগ জামাতকে এভাবে রাজনীতিকরণ পছন্দ করছে না তবলীগের মূল ধারার কেউ। তবলীগের সব কার্যক্রম প্রচলিত রীতি ও রাজনীতির বাইরে ছিল। এ ধারা আজ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
×