ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চিত্রশালায় ১২ দেশের বৈচিত্র্যময় কারুশিল্প সম্ভার

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

চিত্রশালায় ১২ দেশের বৈচিত্র্যময় কারুশিল্প সম্ভার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কাঠখোদাইয়ে গড়া হয়েছে ষাঁড়ের মুখাবয়ব। মাথার ওপর থেকে দুই পাশে ছড়িয়েছে সুতীক্ষè শিং। আর মুখের ঠিক নিচ থেকে নেমে এসেেেছ লম্বাকৃতির ঝকমকে আয়না। শুধু ষাঁড় নয় প্রদর্শনালয়জুড়ে ছড়িয়ে আছে হাতি, ঘোড়া, বিড়ালসহ নানা কিছু। আছে যাপিত জীবনের বহুমাত্রিক প্রতিচ্ছবি। কোনটি নির্মিত হয়েছে সিরামিকে, কোনটি আবার ভেসে উঠেছে ট্যাপেস্ট্রিতে। কারুশিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে ভাস্কর্য থেকে মৃৎশিল্প। দেশ-বিদেশের কারুশিল্পের এমন বিচিত্র সম্ভার এখন শোভা পাচ্ছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৩ নং গ্যালারিতে। এখানে চলছে ব্রিলিয়ান্ট শীর্ষক আন্তর্জাতিক কারুশিল্প প্রদর্শনী। বাংলাদেশসহ বারো দেশের শিল্পীর শতাধিক শিল্পসম্ভারে সজ্জিত হয়েছে প্রদর্শনী। চতুর্থতম এই আন্তর্জাতিক শিল্পায়োজনের আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ এবং চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও সাংহাই আর্ট এ্যান্ড ডিজাইন একাডেমি। সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। শনিবার সকালে একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে আট দিনের প্রদর্শনী ও সেমিনার কর্মসূচীর উদ্বোধন হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথির ছিলেন ঢাকার চীন দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সিলর সান ইয়ান ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক নিসার হোসেন ও সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট এ্যান্ড ডিজাইন অনুষদের ডিন লু জিয়াও বো। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, কারুশিল্পের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে চীন। তাদের শিল্পের সেই গতিধারা প্রাণিত করবে আমাদের কারুশিল্পী ও শিল্পকে। আর শিল্পীরাই পারে বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারে শান্তির বারতা। তিনি আরো বলেন, শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্কই নয়, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও দার্শনিক মতাদর্শগত সম্পর্কও আছে। লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, চমৎকার একটি প্রদর্শনী অবলোকনের সুযোগ হয়েছে আমাদের। উপস্থাপিত বিভিন্ন শিল্পের মাঝে উপস্থাপিত হচ্ছে নতুন ভাবনা। পাশাপাশি নিজেদের কারুশিল্পের ক্ষেত্রে উদ্যোগের অভাবটাও বোঝা যাচ্ছে। কারুশিল্পের বিকাশে চীন যেভাবে উদ্যোগী হয়েছে আমরা সেভাবে পারিনি। আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ কারুশিল্পের ইতিহাস থাকলেও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা আধুনিক হতে পারছি না। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী ১২ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইরান, জাপান, কেনিয়া, কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। এই বারো দেশের শিল্পীদের কারুশিল্প, মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্যমাধ্যমের শতাধিক শিল্পকর্ম ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনীর সঙ্গে যুক্ত সেমিনারে অংশ নিচ্ছেন চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কার শিক্ষক ও শিল্পীবৃন্দ। বাংলাদেশ থেকে এ কার্যক্রমে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের কারুশিল্প, মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য মাধ্যমের শিক্ষকরা অংশ নিচ্ছেন । চিত্রশালার ৩ নং গ্যালারির চারপাশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে শতাধিক শিল্পকর্ম। কাঠের বুক চিরে মা ও শিশুর ভালবাসার দৃশ্যকল্প মেলে ধরেছেন অসীম কুমার রায়। ট্র্যাপেস্ট্রিতে নারীর মুখচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন প্রসূন কান্তি ভট্টাচার্য। গয়নার মাঝে শিল্পের অবয়ব দিয়েছেন চীনা শিল্পী লি কিন। রাজা হাতি নামে বাংলার ঐতিহ্যবাহী টেরাকোটার পুতুল উপস্থাপন করেছেন স্বপন কুমার শিকদার। আছে রূপার মাঝে ফুটিয়ে তোলা মাকড়সা। চীনা শিল্পীর রং-বেরঙের কাপড়ের বুননে গড়া জিহ্বা বের করা ড্রাগন ঝুলছে চিত্রশালায়। আছে নানা মাধ্যমে গড়া বিড়াল, হাতি, খরগোশ কিংবা বানর। চীনা শিল্পীর ট্র্যাপেস্ট্রিতে চমৎকার করে ধরা সূর্যোদয়ের দৃশ্য। শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় সেমিনার পর্ব। এ পর্বের উদ্বোধন করেন সিংহুয়া ইউনিভার্সিটির একাডেমি অব আর্ট এ্যান্ড ডিজাইনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং ডং জিয়াং। সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী অধ্যাপক রফিকুন নবী। আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।
×