ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিনহা ও ইউনূসকে বিদেশে অপপ্রচারে নামানোর চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

সিনহা ও ইউনূসকে বিদেশে অপপ্রচারে নামানোর চেষ্টা

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে লন্ডনে বসে গোপন বৈঠকে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিদেশে অবস্থানরত জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী ও আওয়ামী লীগ বিরোধী বিদেশে পরিচিত খ্যাতিমান প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। লন্ডনে ধারণ করা তারেক রহমানের বক্তৃতার অডিও, ভিডিও প্রচার করতে নির্দেশ দেয়া হতে পারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে অপপ্রচার, কুৎসা রটানো ভিডিও ক্লিপ, অডিও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ছক কষা হয়েছে লন্ডন বৈঠকে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এই ধরনের তথ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, গোলাম আযমের ছেলে আমান আযমী, মতিউর রহমান নিজামীর জামাই ব্রিটিশ নাগরিক ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত মইনুদ্দিন চৌধুরীসহ জামায়াত নেতৃবৃন্দ। গোপন বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তারা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের জন্য ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তৎপরতা শুরু করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনুস ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পা দেননি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশে বিভিন্ন সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার তাকে এবং গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার বিষয়ে উষ্মা প্রকাশসহ পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার করে যাচ্ছেন, যা নির্বাচনের প্রচারে কাজে লাগাচ্ছেন লন্ডন ষড়যন্ত্রকারীরা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে লন্ডন থেকে এক ভিডিও বার্তায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিলেন তারেক রহমান। আর এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে স্কাইপের মাধ্যমে মনোনয়ন বোর্ডে যুক্ত হয়ে নানা প্রশ্ন করেন তিনি। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও তারেক রহমানের বিএনপি দলীয় মনোনয়ন বোর্ডে দলীয় প্রার্থীদের সাক্ষাতকারে যুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে নিছক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার হিসাবেই মনে না করে ষড়যন্ত্রের অংশ ধরা হয়। নির্বাচনের প্রচারের সময়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত লন্ডনে বসবাসকারী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তৃতার অডিও, ভিডিও প্রচার করবেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা। এ ছাড়া তারেক রহমানের মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া, খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানের বক্তব্য লন্ডন থেকে অডিও ভিডিওতে প্রচার করে ভোটারদের সহানুভূতি অর্জনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অপ-প্রচার করার জন্য বিদেশে অবস্থানরত বিদেশীদের কাছে খ্যাতনামা পরিচিত ব্যক্তিদের ব্যবহার করার জন্য পরিকল্পনা করছেন লন্ডনে অবস্থানকারী তারেক রহমান। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত লন্ডনে অবস্থানকারী জামায়াত-বিএনপির নেতৃবৃন্দ। দেশের ভেতরে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব ঘটিয়ে দেশব্যাপী নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ছক কষছে তারা। তাদের চলমান ওই তৎপরতায় অত্যন্ত নীরবে ও গোপনীয়তা রক্ষা করে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে লন্ডনে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃতীয় শক্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মসূচী দিয়ে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। লন্ডন বৈঠক থেকে বিএনপি-জামায়াতের মদদে জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে সক্রিয় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে জামায়াতের সঙ্গে আইএসের সম্পর্ক আছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় দ-প্রাপ্ত হওয়ার পর তার ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছেন। কিন্তু দুর্নীতির দুই মামলায় এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাজার রায় মাথায় নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন তারেক রহমান। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, লন্ডনে গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলকে আসন্ন নির্বাচনে হারাতে এবং বেগম খালেদা জিয়ার দল বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ভোট প্রচারে নামানোর জন্য শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হবে। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে বিদেশে অপপ্রচার করানোর জন্য তাদের নামানোর জন্য যোগাযোগ করছেন তারেক রহমান। দুর্নীতি এবং নৈতিক স্খলনের অভিযোগে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আমেরিকায় থেকে বই লেখেন ‘এ ব্রোকেন ড্রিম’। শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্যসহ আমেরিকায় তার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ তৈরি করা হয়েছে। এসব ভিডিও ক্লিপে সরকারের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ উত্থাপন করেছেন যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে আমেরিকা, ইউরোপ ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ভিডিও ক্লিপে হাসিনার দলের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট না দেয়ার জন্য নানা ধরনের অপপ্রচার করে আহ্বান জানানো হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কণ্ঠে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও কুৎসা রটিয়ে বক্তৃতার ভিডিও ক্লিপ নির্বাচনী বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা হয়েছে।
×