ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মনোনয়ন বঞ্চিতদের প্রতি শেখ হাসিনার ‘বিশেষ অনুরোধ’

বিএনপি-জামায়াতের হিংস্র থাবা থেকে দেশ বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হোন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

বিএনপি-জামায়াতের হিংস্র থাবা থেকে দেশ বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হোন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা বিভিন্ন আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের ‘বিশেষ অনুরোধ’ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চিঠিতে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা ভোট করতে চাইছেন, তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে দলীয় ও মহাজোটের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। দলের জন্য ত্যাগ স্বীকারের সবকিছু তার বিবেচনায় রয়েছে বলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেরদিন শনিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার একটি চিঠি তার ধানম-ির দলীয় কার্যালয় থেকে সাংবাদিকদের দেয়া হয়। ধানম-ির কার্যালয় থেকে শনিবার বিদ্রোহী নেতাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর লেখা চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সবার উদ্দেশে চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে আসন্ন নির্বাচনে মহাজোটকে বিজয়ী করতে সবাইকে সর্বাত্মকভাবে নামার আহ্বান জানান। শনিবার ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর ওই চিঠি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের বলেন, অন্তত ২৪ প্রার্থী মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে ৬/৭ জন তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে রাজি হয়েছেন। বাকিরাও চিঠি পাওয়ার পর আগামীকালের (রবিবার) মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন বলে আশা করি। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা এ বিষয়ে ওই নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীদের উদ্দেশ করে লেখা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের হিং¯্র থাবা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে বাংলাদেশে টেকসই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমরা সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আপনাদের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ, ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে আপনার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে মহাজোটকে বিজয়ী করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। আপনার ত্যাগ, শ্রম ও আন্তরিকতা সবকিছুই আমার বিবেচনায় আছে। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে আবারও বাংলাদেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ পাবে। সেই বিজয়ের অংশীদার হবেন আপনিও। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে নৌকা মার্কাকে পরাজিত করার সাংগঠনিক শক্তি আর কারো নেই। আশা করি, আগামী নির্বাচনে আপনার নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ ও মহাজোট মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে আপনার সকল সাংগঠনিক দক্ষতা, শক্তি ও সামর্থ্য আওয়ামী লীগের বিজয়কে সুনিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের গত এক দশকের অর্জিত উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সংগঠনের একজন আদর্শবান, ত্যাগী ও বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থককে নিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার ও সার্বিক কর্মকা-ে আপনার স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্তভাবে প্রত্যাশা করছি। চিঠির শেষাংশে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নবঞ্চিত নেতা ও তাদের পরিবারেরও সার্বিক মঙ্গল কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিঠিতে লিখেছেন, আওয়ামী লীগের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রমের মতো যে কোন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াও পরিচালিত হয় একটি সুনির্দিষ্ট গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সুচিন্তিত মতামত, তৃণমূল নেতাদের পরামর্শ এবং আমাদের সংগঠন কর্তৃক পরিচালিত একাধিক নিবিড় জরিপ কার্যক্রমের সুপারিশের ভিত্তিতে দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়। দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার চিঠিতে লিখেছেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্য চার হাজারের অধিক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাদের প্রায় সকলেরই ত্যাগ ও অবদান রয়েছে। রাজনৈতিক ত্যাগ, দক্ষতা, যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার বিচারে প্রায় প্রত্যেকটি আসনেই ছিল একাধিক যোগ্য প্রার্থী। একাধিক আবেদনকারীর মধ্য থেকে একজনকে প্রার্থী হিসেবে নির্ধারণ করার কাজটি ছিল অত্যন্ত কঠিন ও দুরূহ। দলের সংসদীয় বোর্ড অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটি আবেদনপত্র প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত এবং মাঠ পর্যায়ে জরিপের ফল পর্যালোচনা করে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। মনোনয়ন প্রদানের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া ও সংসদীয় বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মনোনয়ন দিতে না পারায় মনোনয়নবঞ্চিতদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার চিঠিতে লিখেছেন, আওয়ামী লীগকে একটি শক্তিশালী ও কল্যাণমুখী রাজনৈতিক দলে পরিণত করার কাজে আপনার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন ও দেশের কল্যাণে আপনারা নিরবচ্ছিন্ন ভূমিকার জন্য আপনাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও প্রাণপ্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগের প্রতি আপনার ভালবাসা-আনুগত্য-বিশ্বস্ততা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য, একাদশ সংসদ নির্বাচনে চার হাজারের মতো ব্যক্তি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইলেও ৩০০টি আসনে আড়াই শ’ জনকে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে আওয়ামী লীগ; ৫০টির মতো আসন ছেড়ে দেয়া হচ্ছে জোটের শরিকসহ বিভিন্ন দলকে। এর পরও কয়েকটি আসনে যেমন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়ে গেছে তেমনি জোট শরিক দলকে আসন ছেড়ে দিতেও নারাজ স্থানীয় অনেক নেতা। এ কারণেই বিদ্রোহীদের বশে আনতে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নিজে তাদের কাছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন।
×