ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাসপোর্ট, ভিসা জালিয়াত চক্রের হোতা ৪ সঙ্গীসহ আটক

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

 পাসপোর্ট, ভিসা জালিয়াত চক্রের হোতা ৪ সঙ্গীসহ আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভিসা, পাসপোর্ট ও টিকেট জালিয়াতিচক্রের নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ (৩৯) ধরা পড়েছে। প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর উত্তরখান, উত্তরা ও মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসাদুজ্জামান আসাদসহ ৫ জনকে আটক করেছে র‌্যাব-১ সদস্যরা। জানা গেছে-রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে একাধিক অফিস খুলেছে সে। প্রতারণার প্রথম কৌশল হিসেবে প্রথম সারির দৈনিক ও ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতো। এছাড়া নিজস্ব দালালচক্রের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের নিজ অফিসে নিয়ে আসতো। পরে জালিয়াতির মাধ্যমে কখনও ট্যুরিস্ট ভিসা, জাল ভিসা, জাল টিকেট দিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়াই ছিল তার কাজ। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাব-১ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোঃ রাকিব উজ্জামান। তিনি জানান-আটককৃত অন্য সদস্যরা হলো-মোঃ ওসমান গাজী (৪৮), সিরাজুল ইসলাম (৫২), মোঃ টিপু সুলতান (৫৫), লিটন মাহমুদ (৩৫)। এ সময় তাদের নিকট থেকে ৩২টি পাসপোর্ট, সাতটি জাল ভিসা, একটি বিমানের জাল টিকিট, ৩৪ লাখ টাকার বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ১৫টি স্বাক্ষরিত ব্যাংক স্ট্যাম্প, একটি ল্যাপটপ, দুটি কম্পিউটার, একটি কালার প্রিন্টার, পাঁচটি মোবাইল ফোনসহ চাকরিপ্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত উদ্ধার করা হয়। মেজর মোঃ রাকিব উজ্জামান বলেন-এই চক্রটি জাল ভিসা দিয়ে ভুক্তভোগীদের ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে একেকজনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে। জাল ভিসা তৈরির জন্য চক্রের সহযোগী মোঃ ওসমান গাজী, টিপু ও লিটন তাকে সহযোগিতা করতো। আর সরকারী চাকরি দেয়ার কথা বলে ভুক্তভোগীদের আসাদুজ্জামানের অফিসে আনার জন্য ওসমান, টিপু ও সিরাজ দালাল হিসেবে কাজ করতো। চাকরি দেয়া ও বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে আগেই ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে নিতো তারা। এছাড়া সরকারী চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে ব্যাংক চেক ও স্বাক্ষরিত ব্যাংক স্ট্যাম্প নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিতো প্রতারক আসাদুজ্জামান। পরবর্তী সময়ে এসব দিয়ে প্রার্থীদের ব্ল্যাকমেলও করতো সে। আটকের পর আসামি আসাদুজ্জামান প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে জানায়, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর তার অস্থায়ী অফিস তালাবদ্ধ করে আবার অন্য জায়গাতে অফিস ভাড়া নিতো। আটক আসামি মোঃ ওসমান আলী পেশায় একজন কাপড় ব্যবসায়ী। আল আমিন নামে এক সিঙ্গাপুর প্রবাসীর মাধ্যমে আসাদুজ্জামানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওসমান জাল ভিসা প্রস্তুতের কাজ করতো। আর এই কাজ সে গত ৩ বছর যাবত করছিল। জাল ভিসা তৈরি করার জন্য সে ভিসা প্রতি ২০ হাজার করে টাকা পেতো। এ পর্যন্ত সে ৪০-৫০টি জাল ভিসা তৈরি করেছে বলেও স্বীকার করেছে। আসামি টিপু সুলতান বিভিন্ন মার্কেটে ভাসমান ইলেক্ট্রনিক ব্যবসা করার সুবাদে ওসমানের সঙ্গে পরিচয় হয়। সে লিটনের দোকান থেকে জাল ভিসা ও চাকরির বিভিন্ন নিয়োগপত্র সংগ্রহ করে ওসমানকে পৌঁছে দেয়ার কাজ করতো। সে গত ৩ বছর যাবত এই কাজ করছিল। আসামি সিরাজুল ইসলাম পেশায় একজন ঘড়ি বিক্রেতা। কাউরাইদ বাজারে তার একটি ঘড়ি মেরামতের দোকান আছে। ফরিদ নামে একজনের মাধ্যমে সে ওসমানের সঙ্গে পরিচিত হয়। এদিকে, আসামি লিটন মাহমুদ মিরপুর-১ এর কো-অপারেটিভ মার্কেটে অবস্থিত লিটন ডিজাইন হাউজের মালিক। সে ৭ বছর যাবত মিরপুরে ব্যবসা করে আসছে। সে জাল ভিসা ও ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে সরবরাহ করতো বলে স্বীকার করেছে। আটক আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
×