ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্ভীক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশীদ

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

 নির্ভীক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশীদ

শেখ আব্দুল আওয়াল, গফরগাঁও থেকে ॥ উদয়পুরের (ভারত) পালটানা ক্যাম্প। দ্বিতীয় ব্যাচে দুই হাজার মুক্তিকামী বাঙালীর প্রশিক্ষণ চলছিল। তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ এক দুরন্ত কিশোর। কিশোরের মুক্তির মননে অগ্নিমন্ত্র- ‘হত্যা না-হয় আত্মাহুতি।’ প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষক সুখবীর সিং কিশোরকে বুকে টেনে নিলেন। চোখে-মুখে পিতৃ¯েœহের চুম্বন দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বললেন, তোমার বয়সের আমার ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করতে স্কুল-কলেজে যায়। আর তোমাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে পাঠাচ্ছি। তোমরা শুধু যুদ্ধটা জিইয়ে রেখো, আমরা সহযোদ্ধা হয়ে বিজয় এনে দেব। যুদ্ধে অংশগ্রহণের আগে কম্পানির কমান্ডার হাবীবুল হক মন্টু বলেছিলেন, আমি এই মুহূর্তে ১০ জন যোদ্ধা চাই। যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পারবেন। পূর্বাপর না ভেবে দাঁড়িয়ে গিয়ে হাত উঁচিয়ে সেই দুরন্ত কিশোরই বলে উঠলেন, ‘দেশের জন্য আমি সবার আগে জীবন দিতে চাই।’ মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার দৃঢ়প্রত্যয়ী এই নিঃশঙ্ক কিশোর হলেন বীর মুক্তিসেনা সিএম আবদুর রশীদ। গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে রণাঙ্গন কাঁপিয়েছেন তিনি। সিএম আবদুর রশীদ ১৯৫৫ সালের ৩০ জুলাই ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার টাঙ্গাবো ইউনিয়নের ছাপিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৃত মোঃ হাছেন আলী। গত মঙ্গলবার রাজধানীর আজমপুরের বারেক ভান্ডারি রোডে তার ফ্লাটে বসে কথা হচ্ছিল। মুক্তিযুদ্ধের ভয়ঙ্কর সেই প্রতিমুহূর্তের স্মৃতি স্মরণ করে দুই চোখ ছলছল করে ওঠছিল তার। ১৯৭১সালের অকুতোভয় কিশোরটি জানান, তিনি তখন পাশের নান্দাইল চ-ীপাশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী। বড় ভাই এমএ জব্বার ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। পশ্চিম পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নিতে হবে বলে তিনি সরকারী চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। বড় ভাইয়ের কাছে বৈষম্যনীতি ও নিরীহ বাঙালীদের ওপর উৎপীড়নের নানা গল্প জেনে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ওপর আক্রোশ ও ঘৃণা জাগতে থাকে। আবদুর রশীদ জানান, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে তার শরীরে শিরা-উপশিরায় রক্ত টগবগিয়ে ওঠে। ১০ মার্চ ছাপিলা ও পাচাহার গ্রামের মাত্র ১৩ জনকে নিয়ে গঠিত হয় সংগ্রাম পরিষদ। সংগ্রাম পরিষদে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। তখন তার বয়স মাত্র ১৬ বছর।
×