ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই চিকিৎসক দিয়ে চলছে হাসপাতাল

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

দুই চিকিৎসক দিয়ে চলছে  হাসপাতাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ৭ ডিসেম্বর ॥ মাত্র দুইজন চিকিৎসক দিয়ে খুড়িয়ে-খুড়িয়ে চলছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নামে ৫০ শয্যা হলেও বাস্তবে নেই একটিও। দুই বছর আগে ৫০ শয্যার বেড আসলেও এখনও রয়েছে বাক্সবন্দী। ৫০ শয্যার বেড, এ্যাম্বুলেন্স, এক্স-রে, ইসিজি, ওটিসহ প্রয়োজনীয় প্রায় সকল যন্ত্রপাতি থাকলেও নেই কোন এর কার্যক্রম। নেই কোন ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী। যার ফলে ইনডোর চিকিৎসা একে বারেই চালু হয়নি। বহির্বিভাগের রোগীদের আসা-যাওয়া আর পরামর্শ নেয়াই হলো ৫০ শয্যা এই হাসপাতালের নিত্যদিনের চিত্র। ফলে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা জরুরী রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। কেউবা আবার দালালের খপ্পরে পড়ছেন। এ উপজেলার সোয়া ২ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার ভরসাস্থল এ হাসপাতাল চলছে দুইজন ডাক্তার দিয়ে। ফলে এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১২ সালের ২৮ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর বিগত ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর সাবেক খাদ্যমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি তৎকালীন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে সঙ্গে নিয়ে এ হাসপাতাল উদ্বোধন করেন। সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, আউটডোরের সরঞ্জাম দিয়েই চালানো হচ্ছে এখানকার চিকিৎসা কার্যক্রম। প্রতিদিন ২শ’ থেকে ২৫০ জন রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়। ইনডোর চালু না থাকায় গড়ে প্রতিদিন ৮-১০ জন রোগী অন্যত্র রেফার্ড করা হয়। হাসপাতালের স্টোরের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য পরিদর্শক নুরুল ইসলাম জানান, এ হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ পাওয়া ৫১টি বেড (রোগীর খাট ও বিছানাপত্র) থাকলেও তা বাক্সবন্দী অবস্থায়ই রয়েছে। জনবল ও অন্যান্য সরঞ্জামের অভাবেই মূলত চালু করা যায়নি এ হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডাঃ আমিনূর রসুল জাকি জানান, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে আমি এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কোন চিকিৎসক নেই। বেডসহ মালামাল আসলেও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় হাসপাতালের ইনডোর সেবা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সীমিতভাবে প্যাথলজি, এ্যাম্বুলেন্স, আউটডোর ও জরুরী বিভাগে সেবা চালু আছে। এ হাসপাতাল পুরোপুরি চালু করতে সকল শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। এখানে জুনিয়র কনসালট্যান্ট ১০ জন থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র একজন। তাও আবার প্রেশনে কাজ করছেন টাঙ্গাইলে। সহকারী সার্জন থাকার কথা পাঁচজন আছে মাত্র একজন। তার মতে সার্বিক স্বাস্থ্য চিত্রই এখানে একেবারেই নাজুক। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শূন্যপদ পূরণসহ সকল প্রকার চাহিদাপত্র উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের সকল শূন্যপদ পূরণ, অর্থ ছাড় এবং জিও (সরকারী আদেশ) হলে এ হাসপাতাল পুরোপরি চালু করা সম্ভব হবে। কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা রোগী নিজবর্ণি গ্রামের আব্দুল মালেক, ধনবাড়ী কলেজপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, নতুন বাজার গ্রামের আয়েশা বেগমসহ কয়েকজন রোগীর সঙ্গে। তারা জানান, সব ওষুধ এখানে পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে কিনতে হয়। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শাহনাজ সুলতানা বলেন, হাসপাতালে লোকবল ও সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এর পদসহ অন্যান্য চিকিসৎকের সকল পদ খালি রয়েছে। হাসপাতাল পুরোপুরি চালু করার বিষয়ে কোথায় ঘাপলা আছে এমপি স্যার তা খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এমপি স্যার ও ডিজি স্যার এ বিষয়ে যথাযথ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডাঃ শরিফ হোসেন খান জানান, এটা প্রশাসনিক বিষয়। জনবল নিয়োগ, অর্থ বরাদ্দ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আসলেই এ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে। আপনারা এ বিষয়ে লেখালেখি করেন যাতে সকল সমস্যা সমাধান করে শীঘ্রই এটা চালু করা যায়। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যন্ত এ এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবার কথা বিবেচনা করে ৫০ শয্যার হাসপাতাল দিয়েছেন এবং তিনি নিজে এসে এ হাসপাতালের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। দীর্ঘ দিনেও হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হওয়ায় তিনি নিজেও মর্মাহত। হাসপাতালটি যাতে অনতিবিলম্বে চালু করা যায় তার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান। কালকিনিতে রোগী আছে, সেবা নাই নিজস্ব সংবাদদাতা কালকিনি মাদারীপুর থেকে জানান, কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী আছে কিন্তু পর্যাপ্ত সেবা মিলছে না। চিকিৎসক সঙ্কটে স্থবির হয়ে পড়েছে এ উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউপি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মোট ২২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কাগজ কলমে আছেন ৫ জন। চিকিৎসক সঙ্কটের বিষয়টি একাধিকবার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগে জানা যায়। জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষ মানুষকে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার লক্ষে ২০০১ইং সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু নামেই ৫০ শয্যা করা হয় কার্যক্রমে কিছুই নেই। এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউপি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মোট ২২ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক আছেন মাত্র ৫ জন। তাদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আলবিধান মোহাম্মদ সানাউল্লাহ আছেন শুধু প্রশাসনিক কাজের দায়িত্বে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে। এছাড়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মোঃ রেজাউল করিমের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রোগীদের পেছনে সময় চলে যাচ্ছে তার। তাই তার পক্ষে এত চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন গড়ে ১শ’ থেকে দেড় শ’ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে এলেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। এদিকে বাকি তিনজন চিকিৎসকের মধ্যে কেউ থাকেন ছুটিতে আবার কেউ থাকেন বিভিন্ন ক্লিনিক নিয়ে ব্যস্ত। অন্যদিকে ১৫টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ১৫টি পদের মধ্যে প্রায় সবকটিই শূন্য থাকে। এতে করে উপজেলার চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অপরদিকে হাসপাতালে ব্যবহৃত একটি মাত্র এ্যাম্বুলেন্স আছে যা প্রায় সময়ই নষ্ট থাকে। একটি এক্স-রে মেশিন আছে বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। সব মিলিয়ে খুড়িয়ে-খুড়িয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী দেলোয়ার ও নাজমুল বলেন, আমরা হাসপাতালে গিয়ে ছিলাম চিকিৎসা নিতে। কিন্তু চিকিৎসকের অভাবের কারণে আমাদের ফেরত আসতে হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আলবিধান মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কটে রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে চিকিৎসক নেই। তারপরও চালিয়ে যাচ্ছি যতদূর সম্ভব কালকিনি মানুষকে ভাল স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য।
×