ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

২০০১-এ বিএনপিকে ক্ষমতায় না আনলে বাংলাদেশ হতো উন্নত দেশের ‘ব্র্যান্ড’

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

২০০১-এ বিএনপিকে ক্ষমতায় না আনলে  বাংলাদেশ হতো উন্নত দেশের ‘ব্র্যান্ড’

হাতের কর গুনে গুনে ২৪ দিন পর জাতীয় নির্বাচন। জনগণ ভোট দেবে পরবর্তী সরকার গঠনের। কে হবে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী? বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বা মহাজোট বিজয়ী হলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য-সাহসী কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা। তাহলে পরিসংখ্যানটি হবে এ রকমÑ টানা তিনবার এবং সর্বমোট ৪র্থ বার। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ প্রথমবার। তারপর ২০০৯ থেকে আজ অবধি টানা দুইবার। মাঝখানে ২০০১-২০০৬ এই মেয়াদটি হাতছাড়া না হলে টানা ৪ বার হতো এবং বাংলাদেশ এতদিনে শুধু ‘ব্র্যান্ড’ নয় ‘উন্নত দেশের ব্র্যান্ড’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতো। তারপরও গত দুই দশকে ‘উন্নয়নশীল দেশের ব্র্যান্ড’ হয়েছে এবং বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেশের অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গড় আয়ু, মাথাপিছু আয়, কৃষি, অবকাঠামো, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, রেল, বিদ্যুত, পরমাণু বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, সমুদ্র বিজয়, মহাকাশ বিজয়, গভীর সমুদ্র বন্দর এবং সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জাতীয় ৪ নেতা হত্যার বিচার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যার বিচার সম্পন্ন করে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ; শহীদানের রক্তঝরা বাংলাদেশ, ধর্ষিত মা-বোনের যন্ত্রণা বহনকারী বাংলাদেশ। দেশবাসী আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে এ বিশ্বাস বাংলার ভোটার জনগণের তো বটেই; উন্নয়নের সহযোগী থেকে শুরু করে উন্নত-উন্নয়নশীল তাবত বিশ্বের, বিশ্ব নেতৃবৃন্দেরও। মিডিয়ার জরিপ মতে, এশিয়ায় সর্বপ্রধান এবং বিশ্বে অন্যতম শীর্ষ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনেতা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ভারত বিভাগের বছর ১৯৪৭ সালে দক্ষিণ বাংলার ছায়া সুনিবিড় গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মার জ্যেষ্ঠ সন্তান। মা গৃহিণী বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের ব্যক্তি ও রাজনীতির বিশ্বস্ত বন্ধু, সহচর বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী এবং বাঙালী জাতির পিতা, তাঁর পরিচয় যে জানে না তিনি বঙ্গ সন্তান কী-না এমন প্রশ্ন সামনে আসে। দাদা শেখ লুৎফর রহমান, সরকারী চাকুরে। দাদি গৃহিণী। এই পরিবারের পৌনে তিন শ’ বছরের পাকা বসতবাড়ি আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে। লাল ইটের দালানটিতে এখন আর কেউ বাস করেন না। জনশ্রুতি আছে মাঝে-মধ্যে তাতে সাপ দেখা যেত। পাশেই ছিল শেখ লুৎফর রহমানের টিনশেড বাড়ি যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, শেখ হাসিনার জন্ম। বঙ্গবন্ধুর কেন এই বাড়িতে জন্ম হলো কিংবা এই বাড়ি কেন শেখ হাসিনাকে জন্ম দিল, সম্ভবত সেই ক্রোধেই বর্বর পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তা বাড়িটি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতার পর ওই ভস্মস্তূপের ওপর প্রথমে দেড়তলা পরে দোতলা করা হয়েছে। শেখ হাসিনার শৈশব কাটে এই গ্রামেরই আলপথ দিয়ে হেসেখেলে স্কুলে (প্রাথমিক) বন্ধুদের সঙ্গে। তারপর একদিন টুঙ্গিপাড়ার শৈশব পেছনে ফেলে বাবা-মার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। বাড়ির পাশেই বঙ্গবন্ধুর কবর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুকে টুঙ্গিপাড়ায় এনে সাধারণ নিয়মে দাফন করে। লক্ষ্য ছিল মানুষের সেন্টিমেন্ট আড়াল করা। পাশে দাদা শেখ লুৎফুর রহমান ও দাদি শেখ সাহেরা খাতুনের কবর। বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লে. শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেল, ভ্রাতৃবধূ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রীড়াবিদ সুলতানা কামাল, রোজি জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ নাসের, নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল, অন্য বাড়িতে ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি ও স্ত্রী আরজু মণি (অন্তঃসত্ত্বা)সহ ১৫ আগস্ট নিহত সকলকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার স্বামী ড. এম ওয়াজেদ আলী মিয়ার সঙ্গে (পোস্ট ডক্টরেট) (গবেষণারত) জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন বলে প্রাণে বেঁচে যান। হয়ত তাদের বেঁচে যাওয়া আজকের বাংলাদেশ ও বাঙালীর জন্য আল্লাহপাকের আশীর্বাদ। কিন্তু যন্ত্রণা তাদের পিছ ছাড়েনি। ১৫ আগস্ট বাংলার অবিসংবাদী নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতার দুই কন্যাকে একটু আশ্রয়ের জন্য এ-ওর কাছে ধরনা দিতে হয়েছে। ড. কামাল তখন ইউরোপে ছিলেন। শেখ রেহানা তার সাহায্য চেয়েছিলেন, পাননি। অবশেষে ভারতের মহীয়সী প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর ¯েœহের ছায়াতলে ৬ বছর কাটান। দেশে ফিরে তারা দুই বোন তাদের টুঙ্গিপাড়া ও ধানম-ি ৩২ নম্বরের দুটি বাড়ি দেশবাসীকে উৎসর্গ করেন। সন্তানদের বিদেশে শেখ রেহানার ছায়ায় রেখে সরাসরি রাজনীতিতে ফিরে আসেন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম, বেড়েওঠা, তিনি কি করে রাজনীতি ছেড়ে থাকবেন। যদিও তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন ইডেনের নির্বাচিত ভিপি হওয়ার আগে থেকেই । এখন নির্বাচনের মাস তাই নির্বাচন নিয়েই কথা বলতে হবে। শুরুও করেছি সেভাবেই। এবার অবশ্য একটা ভাল দিক হলো বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ২০১৪-এর নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যে ভুল করেছিল তার খেসারত ৫ বছর দিয়ে এবার আর সে ভুল করল না। ড. কামাল হোসেন, মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুলতান মনসুর, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, রেজা কিবরিয়া, আসম আবদুর রবদের সঙ্গে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কিছুটা ইমেজ ঘরে তুলে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণাটি দিয়েছিল। কিন্তু এক্ষেত্রেও কতক কালিমা ঢাকতে পারেনি। ১. কে হবেন বিএনপি বা তাদের ঐক্যজোটের প্রধানমন্ত্রী? ২. খালেদা জিয়ার নাম নেয়া যেতে পারে। কিন্তু তিনি দুর্নীতির দায়ে (তাও আবার এতিমের টাকা আত্মসাতের) কারাভোগ করছেন। ৩. অর্থাৎ অযোগ্য! ৪. তাছাড়া শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কোন তুলনাই চলে নাÑ না শিক্ষা-দীক্ষা, পারিবারিক ঐতিহ্যে, না রাজনীতিতে, না দল পরিচালনায়, না রাষ্ট্র পরিচালনায়, না গুড গবর্নেন্সে। ৫. শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট। ১৫ আগস্টের কারণে মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে পারেননি। জন্মের পর থেকেই পিতার রাজনীতি, বছরের পর বছর কারাভোগ, অর্থাৎ প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষা-উচ্চ শিক্ষা এভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন। আর খালেদা জিয়া, না কোন ঐতিহ্য না আছে লেখাপড়া। তাই বলা হয় স্বশিক্ষিত। হাস্যকর নয় কি? ৬. বিএনপির কিছু আনাড়ি নেতাকর্মী আছেন যারা খালেদা পুত্র তারেক রহমানকে সামনে আনতে চান। এই ছেলেটি মায়ের মতো লেখাপড়ায় গোল্লা। তার ওপর যেমন হাওয়া ভবন, খোয়াব ভবন, দুর্নীতির ডন হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে, তেমনি মায়ের ক্ষমতার সুবাদে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুট করে অর্থের পাহাড় বানিয়েছে এবং সাত বছর, দশ বছর সর্বশেষ যাবজ্জীবন কারাদন্ড মাথায় নিয়ে লন্ডনে পলাতক জীবনযাপন করছে। এত অর্থ লুট করে নিয়ে গেছে যে, লন্ডনেও পশ এলাকায় বিলাসী বাড়ি-গাড়ি নিয়ে জীবনযাপন করছে। তবে লন্ডনে পলাতক জামায়াত-শিবিরের কতিপয়ের তৈরি করা স্ক্রিপট নিয়ে হোটেলে হোটেলে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে বেশি দিন থাকতে পারবে না, ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে। ৭. তাহলে কি ঐক্য প্রক্রিয়ার ড. কামাল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী বানাবেন? তারও যে পুরো জীবনটা রহস্যময়- কখন যে কী বলবেন তার কি কোন ঠিক আছে। হয়ত গোঁ ধরবেন বিএনপির চেয়ারম্যান হবেন? তখন কি হবে? একটি বড় প্রশ্ন নয় কি? ৮. খালেদা জিয়াও রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন তিনবারের সাড়ে ১১ বছর। অথচ এই দীর্ঘ সময়ে একটি স্বল্প উন্নয়নের ছোঁয়াও দেশবাসীকে দেখাতে পারেননি। পারবেন কেমন করে। শিক্ষা-দীক্ষাহীন একজন নারীকে ইংরেজী শব্দ ‘ম্যাডাম’, ‘চেয়ারপার্সন’ বানিয়ে মাথার ওপর বসিয়ে রাখা যায়, যোগ্য করে তোলা যায় না। যোগ্যতা-দক্ষতা নিজের ভেতর থেকে আসতে হয়। যেমন শেখ হাসিনার মধ্যে রয়েছে। তারপরও বলব, এবার নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে কিছুটা বুদ্ধিমানের কাজ করেছে বিএনপি। কিন্তু ওই যে কথা আছে না ‘যার হয় না ৯ বছরে তার ৯০ বছরেও না।’ যেমন কোন এক প্রকৃতির সন্তানের লেজ ৯০ বছর চোঙ্গার ভেতর রাখলেও বাঁকা অবস্থায়ই বেরোয়, সোজা হয় না। তাই দেখা গেল জামায়াত-শিবিরের নির্বাচন করার সুযোগ না থাকলেও বিএনপির মনোনয়ন তালিকায় যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত-রাজাকার-আলবদরদের ধানের শীষ দিয়ে নমিনেশন দেয়া হয়েছে। তার মানে ‘যেই লাউ সেই কদু।’ যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা আলবদর প্রধান এবং জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র, মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা সাকা চৌধুরীর ভাই, আমৃত্যু কারাদন্ড ভোগরত দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর পুত্র ও ভাই, এমনি সব যুদ্ধাপরাধীকে নমিনেশন দেয়া হয়েছে। মূলত এটি নমিনেশন নয়, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের মুখে চপেটাঘাত’ নয় কী? খুব বেশি দিনের কথা নয়। এক মাস আগে ‘প্রত্যক্ষ এমনকি পরোক্ষভাবে যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের সঙ্গে কোন ঐক্য নয়’ ‘জামায়াত থাকলেও সেই ঐক্যে আমি নেই’ এসব কথা বলেছিলেন গণফোরাম সভাপতি বা ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ড. কামাল হোসেন। এক মাস না যেতেই নিজের কথাগুলো বেমালুম ভুলে গেলেন। জামায়াত-শিবিরাশ্রয়ী বিএনপির কাছে নাকে খত দিয়ে একাকার হয়ে গেলেন। ড. কামালরা এবং যুদ্ধাপরাধী গং এখন ধানের শীষ হাতে মির্জা ফখরুলের পেছনে হাঁটছেন। এ কি ক্ষমতার লোভ না কারও প্রতি ক্ষোভ? দুটোই হতে পারে। মিলিটারি জিয়া ১৯৮১ সালে মিলিটারি ক্যুতে নিহত হওয়ার পর ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাত্তার ৯ মাসের মতো রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দেন। আওয়ামী লীগ তথা স্বাধীনতার পক্ষের ১৫ দলের প্রার্থী করা হয় ড. কামাল হোসেনকে। তিনি হেরে গেলেও তার মধ্যে একটা আকাক্সক্ষা দানা বাধে। নিজেকে আওয়ামী লীগ তথা ১৫ দলের এক নম্বর নেতা ভাবতে শুরু করেন। যাকে ইংরেজী ভাষায় বলা হয় ‘ওভার এম্বিশাস’। কিন্তু ভদ্রলোক জানেন না ওটি আওয়ামী লীগ এবং তার এক নম্বর বা প্রধান নেতা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা। আন্তর্জাতিক জরিপেও শেখ হাসিনা শতকরা ৬৬ ভাগ মানুষের সমর্থন-শ্রদ্ধা ইনজয় করছেন। দলে জনপ্রিয়তা শতকরা ১০০ ভাগই। তাছাড়া ড. কামালের আইনের জ্ঞান থাকতে পারে কিন্তু রাজনীতি বিজ্ঞানে মানবতার মানদ-ে শেখ হাসিনা অনেক ওপরে। ড. কামাল ধারেকাছেও নেই। আসম আবদুর রবের কথা কী বলব! ষাটের শেষার্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমাদের কয়েক সাহসী নেতার একজন। লিডার বলে ডাকতাম, এখনও তাই ডাকি। মুক্তিযুদ্ধেও লিডার ছিলেন। স্বাধীনতার পর সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই)-এর পৌরহিত্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ গঠন করে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান। এই বিখ্যাত হওয়ার পেছনের কারণ ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরোধিতা। বঙ্গবন্ধু বাঙালীর অবিসংবাদী নেতা তো ছিলেনই, তৃতীয়বিশ্ব তথা বিশ্বের তাবৎ শোষিত-বঞ্চিত মানুষেরও মহান নেতা, পথ প্রদর্শক। তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললে বিখ্যাত হবেন এটাই স্বাভাবিক। বঙ্গবন্ধু এক বিশাল হৃদয়ের মানুষ বলেই তার বিরুদ্ধে বলা গেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মিলিটারি জিয়ার মিলিটারি বুটের মাড়ানিতে জার্মানিতে গিয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন। তারপরও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা তাকে মন্ত্রী বানিয়ে সম্মান দিয়েছিলেন। হয়ত আবার ’৭২-’৭৫-এর মতো গালাগাল দেবেন। ক্ষমা করবেন লিডার, আপনার মিছিলে স্লোগান দিয়েছি তো, সেই সুবাদে এটুকু বলার অধিকার নিশ্চয়ই সংরক্ষণ করি। তাছাড়া ড. কামাল, আসম আবদুর রব, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুলতান মনসুর এরা বিএনপির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে রাজাকারের কালিমা কিছুটা হলেও কপালে লাগালেন। দ্বিতীয় যে বিষয়টি ইমপোর্ট্যান্ট তা হলো। বিএনপি-জামায়াত অতীতে একাধিকবার ক্ষমতায় ছিল। মিলিটারি জিয়ার আমল থেকে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কোষাগার ব্যবহার করে কিংবা গড়হবু রং হড় ঢ়ৎড়নষবস পুঁজি করে রাজনীতিকদের জন্য রাজনীতি ডিফিকাল্ট করা ছাড়া আর কি করেছে? হ্যাঁ, একটা কাজ করেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসি দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু ও ৪ নেতার হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেছেন এবং যেটি সবচেয়ে আত্মঘাতমূলক তা হলো জামায়াত-শিবির, মুসলিম লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছেন; জাতির পিতা যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। খালেদা জিয়া-তারেক মাতাপুত্র মিলে জামায়াত-শিবির ক্যাডার দিয়ে জঙ্গী হিযবুল মুজাহিদীন, হিযবুত তাহ্রীর, বাংলা ভাই-ইংলিশ ভাইদের মতো জঙ্গী গোষ্ঠীর জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তানী জঙ্গীদের বাংলাদেশে এনেছে, আবার পাকিস্তানী সুহৃদ উলফা জঙ্গীদের আশ্রয়-প্রশিক্ষণ দিয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলে নাশকতা করিয়েছে। কয়েকটি প্রশ্ন : ক. বর্ডার এ্যাগ্রিমেন্ট, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ কে করলেন- শেখ হাসিনা। খালেদা পারলেন না কেন? উত্তর হলো যোগ্যতা নেই, ধারণাও নেই। খ. খালেদা জিয়া তো আগে ক্ষমতায় ছিলেন, পদ্মা সেতু বানালেন না কেন? গ. ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা দূরে থাক, ৩২০০ মেগাওয়াটের উপরে উঠতে পারলেন না কেন? ঘ. মানুষের মাথাপিছু আয়, জাতীয় প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, শিক্ষার হার, বয়স, জানুয়ারির এক তারিখ ৩৫ কোটি পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ, সোয়া লাখ টাকার মোবাইল ১২শ’ টাকায় নামিয়ে আনা, এসব খালেদারা করলেন না কেন? চ. বিশেষ করে ৪০টির মতো প্রাইভেট টিভি চ্যানেল, হাজার হাজার অনলাইন মিডিয়া করলেন না কেন? যোগ্যতা, দক্ষতা, শিক্ষা, মেধা দূরদর্শিতা, সাহস কোনটাই ছিল না বলে। অর্থাৎ হারু পাট্টি। তারপরও ড. কামাল হোসেনরা সেই হারুর আঁচল ধরেছেন সত্য। কিন্তু কোন দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, জঙ্গী সরকারে যেতে কিছুটা হলেও ভাববেন। ঢাকা ॥ ৬ ডিসেম্বর ২০১৮ লেখক : সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব ও সিনেট সদস্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]
×