ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে কানাডায় হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আটক

ফের বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

 ফের বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা

চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত গণমাধ্যম শুক্রবার হুয়াওয়ে প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান অর্থ বিষয়ক কর্মকর্তা (সিএফও) মেং ওয়াঝোকে মার্কিন দূতাবাসের অনুরোধে কানাডায় আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। আটকের ঘটনাকে তারা ঘৃণ্য কাজ বলে অভিহিত করেছে। এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো মেংকে আটকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই বলে জানান। এ ঘটনায় সরকারের কোন হস্তক্ষেপ ছিল না বলেও দাবি করেন তিনি। -খবর এএফপি ও বিবিসির হুয়াওয়ে জানিয়েছে, অভিযোগ সম্পর্কে তাদের কাছে তেমন কোন তথ্য নেই এবং মেং অন্যায় কোন কিছু করেছেন বলেও তাদের জানা নেই। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, কোন কারণ না জানিয়ে এভাবে কাউকে আটক করাটা তার মানবাধিকারের লঙ্ঘন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যেই মেংকে আটকের এ ঘটনা ঘটল। এতে দুদেশের মধ্যে বড় ধরনের কূটনৈতিক সংঘাতের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। অশুভ ছায়া পড়েছে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার আপাতত বাণিজ্যযুদ্ধ বিরতির সম্ভাবনাতে। কানাডা বলেছে, মেংয়ের আটকের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ না করার চেষ্টা নিয়েছেন এবং আদালত তা মঞ্জুর করায় তারা এ বিষয়ে বেশি কিছু জানাতে পারছে না। চীনের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস তাদের সম্পাদকীয়তে বলেছে, চীনা সরকারের উচ্চ প্রযুক্তির উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য আইনী পদ্ধতির অপব্যবহারে মার্কিন প্রবণতা সম্পর্কে আমরা উদ্বিগ্ন। তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে দেখছে। স্পষ্টতই ওয়াশিংটন ঘৃণ্য উপায় অবলম্বন করছে। তারা হুয়াওয়ের ৫জি সেটের বাজারে প্রবেশে বাধা দিতে পারবে না। চীনা দৈনিকটি সতর্ক করে দিয়েছে যে, হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চীন-মার্কিন সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হবে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ মেংয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রকাশ করেনি। এমনকি তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে তাও জানায়নি। এর একটি হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করছে প্রমাণ করতে হুয়াওয়ে কোম্পানির বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতিকে সহজভাবে নিতে না পারার বিষয়টি। এটি নিঃসন্দেহে সত্য ও প্রমাণিত যে প্রতিযোগিতামূলক প্রযুক্তি কোম্পনিটি অন্যদের চেয়ে সবচেয়ে ভালমানের। যদিও চীনের প্রযুক্তিখাত এখনও মাইক্রোচিপের মতো মার্কিন রফতানির ওপর নির্ভরশীল। বেজিং দক্ষতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রযুক্তিগত দিক থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার চেষ্ট করছে। যাতে তাদের প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়। এজন্য তারা মেড ইন চায়না ২০২৫ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। হুয়াওয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। যেটি ইউরোপ ও আফ্রিকাসহ সারাবিশ্বে গুণগত পণ্য সরবরাহ করে থাকে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগী বাজারে এটি একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা এটি মার্কিন কোম্পানিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদি এর সেলফোন ও নেটওয়ার্কিং যন্ত্রগুলো অন্যান্য দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। যা থেকে বেজিং গুপ্তচরবৃত্তির কাজটি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিরাপত্তার অজুহাতে ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ব্রিটেন এ বছর কোম্পানিকে প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের দেশীয় বাজারে প্রবেশ করাতে। চীনারাও ইতোমধ্যে মেংয়ের আটকের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে। চীনা টুইটারের মতো অন্যান্য অনলাইনে জাতীয়তাবাদী পক্ষের লোক ও সরকারপন্থীরা সমালোচনা করেছে। কিছু ইউজার একে বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে অভিহিত করেছে। যা বৃহৎ পরিসরে চীনা প্রযুক্তির উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে বলে জানায়। ওয়েবু ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ যে কেন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছে চীনের বিরুদ্ধে। এটি আসলে চীনা প্রযুক্তি ও তার মেড ইন চায়না ২০২৫ প্রকল্পকে লক্ষ্য করে নেয়া হয়েছে। লক্ষ্য হচ্ছে চীনের শিল্পকে জোর করে শেষ করে দিতে চাচ্ছে ও মধ্য আয়ের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে। অপর একজন লিখেছেন, মেংয়ের আটকাদেশ আসলে রাজনীতির একটি খেলা। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে ১ ডিসেম্বর হুয়াওয়ের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মেংকে আটক করা হয়। তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা অনেকের। চীন এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মেংকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অটোয়া ও ওয়াশিংটনকে এ আটকের কারণ স্পষ্ট করে জানাতে বলেছে তারা। টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতার মেয়ে ও গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী মেংয়ের এ আটকের ঘটনায় কানাডার ওপর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজরের মধ্যে ট্রুডো এ প্রসঙ্গে মুখ খোলেন। বৃহস্পতিবার মন্ট্রিয়লে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মেংকে আটকের বিষয়টি কানাডার সরকার দিনকয়েক আগে জেনেছে। যদিও কোনও ধরনের ভূমিকা রাখেনি। ট্রুডো বলেন, আমরা এমন একটি দেশ, যাদের স্বতন্ত্র বিচার ব্যবস্থা আছে, এ বিষয়ে আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই। ১ ডিসেম্বর আটক করলেও কানাডীয় কর্তৃপক্ষ মেংকে আটকে রাখার কথা বুধবারের আগে জানায়নি। তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে মেংয়ের আটকের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে বৃহস্পতিবার বেশকিছু পশ্চিমা গণমাধ্যম ইঙ্গিত দিয়েছিল। ওই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের সন্দেহে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে তদন্ত চলছে। মেংয়ের আটকের প্রসঙ্গে জানতে চাইলেও কিছু বলতে রাজি হননি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন। এর বদলে তিনি চীনা বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনার রীতি ও বিভিন্ন দেশে তাদের কর্মকান্ড নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান। শুক্রবার কানাডার আদালতে হুয়াওয়ের নির্বাহীর জামিনে শুনানি হয়েছে।
×