ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মানবাধিকার ঘোষণা ও ৭০ বছরের আকাক্সক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

মানবাধিকার ঘোষণা ও  ৭০ বছরের আকাক্সক্ষা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের বিরুদ্ধে মিত্রবাহিনীর জয়লাভের ৩ বছর পর ১০ ডিসেম্বর ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস বা সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা গ্রহণ করে। এর লক্ষ্য ছিল যুদ্ধের বিভীষিকার পর একটি উন্নত ও নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলার প্রত্যাশা। খবর এএফপির। এই প্রথম কতগুলো দেশ সকল মানুষের জন্য মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়। বলা হয়, এ মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা সংরক্ষিত হবে বিশ্বজনীন পর্যায়ে। এটি জাতিসংঘ গৃহীত প্রথম অর্জনগুলোর মধ্যে একটি। এ বিশ্বসংস্থা জাতিসংঘ গড়ে ওঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ থেকে। বিশ্ব আর কখনও অশউইজ ও অন্য কোন নৃশংসতা দেখতে চায় না এমন দৃঢ়তা নিয়ে প্রতিনিধিরা প্যারিসে গৃহীত ঘোষণার প্রতি অভিনন্দন জানান উচ্ছ্বসিত হয়ে। যদিও আইনী বাধ্যবাধকতা ছাড়া ঘোষণায় সংশ্লিষ্ট প্রতিটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং একই পর্যায়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার ওপর। মানবাধিকার কেবল আর অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে থাকছে না যেমন হিটলার তার নীতিতে বিদেশী হস্তক্ষেপ রোধের জন্য দাবি জানিয়েছিলেন। মানবাধিকার এখন থেকে বিশ্বজনীন বিষয় হিসেবে বিবেচিত হলো। মানুষের ইতিহাসে এ গুরুত্বপূর্ণ সনদ গ্রহণের ৭০তম বার্ষিকীতে কিছু পটভূমির উল্লেখ করা হলোÑ ১৯৪৬ সালে জাতিসংঘের প্রথম সাধারণ অধিবেশনে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিলের ওপর কাজ করার জন্য মানবাধিকারের ওপর কমিশন অন হিউম্যান রাইটস গঠিত হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পটভূমির ১৮ জন সদস্যকে নিয়ে এ কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিটির প্রথম বৈঠক বসে ১৯৪৭ সালে এবং বৈঠকে নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের বিধবা স্ত্রী এলিয়েনর রুজভেল্ট। অন্যান্য প্রতিনিধি ছিলেন ৮টি দেশের। কানাডার জন পিটার্স হামফ্রে ও ফ্রান্সের রেনে ক্যাসিন এ খসড়া প্রণয়নে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। কমিটি ১৯৪৮ সালে প্যারিসে জাতিসংঘের তৃতীয় সাধারণ অধিবেশনে একটি খসড়া উপাস্থাপন করে এবং এ চূড়ান্ত দলিলে অংশ নেয় ৫০ জনের বেশি প্রতিনিধি। কমিটি কাজ শুরু করে সেপ্টেম্বরে। ঘোষণাটি ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘে সে সময়ের ৫৮ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ৪৮ সদস্যের ভোটে গৃহীত হয়। ইয়েমেন ও হন্ডুরাস অনুপস্থিত ছিল এবং একটি দেশ আটটি বেলারুশ, চেকোস্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড, সৌদি আরব, সাউথ আফ্রিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইউক্রেন ও যুগোস্লোভিয়া ভোট দানে বিরত থাকে। এ ঘোষণা প্রতিষ্ঠার সময় সন্দেহ ও বিতর্ক সত্ত্বেও এ ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস যুদ্ধোত্তর সকল চুক্তি-স্বাক্ষরে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ভিত্তি বলে বিবেচিত হয়েছে। ১৯৭৯ সালে নারী বৈষম্যের বিরুদ্ধে ও ১৯৮৪ সালে নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং ১৯৯০ সালে শিশু অধিকারের ওপর আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও ১৯৯৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট প্রতিষ্ঠা- সবকিছুই ঘোষণার প্রত্যক্ষ ফল। কিন্তু ঘোষণা মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ করতে সমর্থ হয়নি। এ সনদ গৃহীত হওয়ার ৭০ বছর পর কেউ কেউ আহ্বান জানাচ্ছেন ঘোষণাদি আধুনিক করার জন্য। ফ্রান্সের হিউম্যান রাইটস লিগের প্রেসিডেন্ট মালিক সালেমকুর নবেম্বরে এএফপিকে বলেছেন, ঘোষণায় জলবায়ু পরিবর্তন। গণঅভিবাসন ও আধুনিক প্রযুক্তি বিষয়গুলোর মতো নতুন চ্যালেঞ্জ অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।
×