ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মস্তিষ্কের সঙ্গে ‘কথা বলে’ অন্ত্র

প্রকাশিত: ০৮:০১, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮

মস্তিষ্কের সঙ্গে ‘কথা বলে’ অন্ত্র

পেটের সমস্যা অনেকেরই আছে কিন্তু পেটের সঙ্গে মাথার যোগাযোগের কথা জানতেন কি? বিজ্ঞানীরা আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগের প্রমাণ পেয়েছেন। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে এই খবর জানা গেছে। খোশমেজাজ নাকি মনমেজাজ ভাল নেই? নিশ্চিন্তে রয়েছেন, নাকি উদ্বেগে ভুগছেন? খিদে মিটছে না, ফলে মোটা হয়ে যাচ্ছেন? নাকি বেশ রোগাপাতলা হয়ে গেছেন? এ সবের জন্য আমাদের আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া দায়ী হতে পারে। আমাদের জীবনের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ কতটা, গবেষকরা ধীরে ধীরে তা জানতে পারছেন। চিকিৎসক হিসেবে প্রো. মিশায়েলা আক্সট-গাডেরমান মনে করিয়ে দেন, ‘আমাদের অন্ত্রের মধ্যে ১০০ ট্রিলিয়ন, অর্থাৎ ১ কোটি কোটি জীবাণু রয়েছে, শরীরে কোষের সংখ্যার তুলনায় যা ১০ গুণ বেশি। সেই জীবাণুর নিজস্ব চরিত্র মোটেই ভাল বা খারাপ হয় না। আমাদের স্বাস্থ্যও ভাল থাকার জন্য এই জীবাণু অত্যন্ত জরুরী। জীবনধারা ও খাদ্যের মাধ্যমে আমরাই বরং তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করি।’ অন্ত্রের মধ্যে এই জীবাণু এমনকি আমাদের মস্তিষ্কের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করে। মিশায়েলা আক্সট-গাডেরমান তা নিয়ে গবেষণা করছেন। সবার আগে ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে। কিছু ইঁদুরকে এমন খাবার দেয়া হয়েছে, যাতে ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া মেশানো রয়েছে। বাকিদের স্বাভাবিক খাবার দেয়া হয়েছে। কিছুক্ষণ পর এক গোলকধাঁধার মধ্যে সব ইঁদুর ছেড়ে দিয়ে সেগুলোর আচরণ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। বিস্ময়কর ঘটনা হলো, দুই দলের আচরণের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য দেখা গেছে। প্রো. আক্সট-গাডেরমান বলেন, ‘অত্যন্ত ভীতু প্রজাতির ইঁদুরকে নির্দিষ্ট জীবাণু, অর্থাৎ ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া খাইয়ে দেখা গেছে, যে তাদের সাহস অনেক বেড়ে গেছে। অর্থাৎ আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া যোগ করে ইঁদুরের আচরণের উপর প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব।’ কিন্তু প্রশ্ন হলোÑ ইঁদুরের উপর পরীক্ষার ফলাফল কি মানুষের ক্ষেত্রেও খাটবে? আমরা ভীতু না সাহসি, তা কি ভাল বা খারাপ খাবারের উপর নির্ভর করে? অবশ্যই সেটা সত্য নয়। তবে ইঁদুর ও মানুষের অন্ত্রের গঠন ও কার্যপ্রণালীর মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। এটাও ঠিক, যে আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া দুই প্রাণীর ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য, ওজন ও আচরণের উপর প্রভাব রাখে। সেটা কীভাবে ঘটে, নিউরোপ্যাথোলজিস্ট হিসেবে প্রোফেসর মার্কো প্রিনৎস তা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, ‘মস্তিষ্ক ও অন্ত্রের পরস্পরকে প্রয়োজন হয়। তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগও থাকে। তবে মস্তিষ্ক যে সরাসরি অন্ত্রের কাছ থেকে সঙ্কেত পায়, তা জেনে আমাদের অবাক লাগছে। মস্তিষ্ক বিচ্ছিন্ন এক প্রণালী বলেই আমরা চিরকাল জানতাম। আমাদের গবেষণার ফল দেখিয়ে দিচ্ছে, যে অন্ত্রের সংকেত অবশ্যই মস্তিষ্কে পৌঁছয়।’ বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করতে পেরেছেন, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে যে ইঁদুরের অন্ত্রে কোন জীবাণু রাখা হয়নি, তার মস্তিষ্কে গুরুতর পরিবর্তন ঘটেছে। অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া না থাকায় মস্তিষ্কে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। মাইক্রোগলিয়া নামের বিশেষ ধরনের কোষ হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা পুরোপুরি লোপ পেয়েছে। অথচ এই কোষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেগুলো বাইরে থেকে জোর করে প্রবেশ করা জীবাণু ও মৃত স্নায়ুকোষ দূর করে এবং সংক্রমণের মোকাবেলা করে। সারা জীবন ধরে মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রেও সেগুলোর অবদান রয়েছে। প্রোফেসর মার্কো প্রিনৎস বলেন, ‘যে ইঁদুরের অন্ত্রে জীবাণু নেই এবং যার মাইক্রোগলিয়া কোষ নিষ্ক্রিয় রয়েছে, তাকে যদি একটি খাঁচার মধ্যে স্বাভাবিক ইঁদুরের সঙ্গে রাখা হয়, তাদের মাইক্রোগলিয়া কি আবার সক্রিয় ও বিকশিত হয়ে উঠে পারেÑ সেটাই ছিল প্রশ্ন।’ বাস্তবে দেখা গেল, খাঁচায় চার সপ্তাহ সহাবস্থানের পর তাদের অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা এবং মস্তিষ্কে মাইক্রোগলিয়া কোষের সংখ্যা সত্যি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে গেছে। সূত্র : বিবিসি
×