ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতা কাপ ফুটবল, চট্টগ্রাম আবাহনী ১-০ রহমতগঞ্জ, নোফেল স্পোর্টিং ২-০ মোহামেডান

শেষ আটে চট্টগ্রাম আবাহনী, মোহামেডানের হার

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮

শেষ আটে চট্টগ্রাম আবাহনী, মোহামেডানের হার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শেষ আটে নাম লেখাতে দরকার ছিল গোল এবং জয়। দুটোই আদায় করে নিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। এক ম্যাচ হাতে রেখেই তারা এখন স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে। বৃহস্পতিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘বি’ গ্রুপর খেলায় তারা ১-০ গোলে হারায় পুরনো ঢাকার দল রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটিকে। ২ খেলায় ৬ পয়েন্ট চট্টলার এই দলটির। প্রথম ম্যাচে তারা ৩-০ গোলে হারিয়েছিল নোফেল স্পোর্টিং ক্লাবকে। পক্ষান্তরে ২ খেলায় ১ পয়েন্ট রহমতগঞ্জের। নিজেদের প্রথম ম্যাচে তারা গোলশূন্য ড্র করে রুখে দিয়েছিল মোহামেডানকে। বৃহস্পতিবারের ম্যাচে হারলেও বেশ ভাল ফুটবল খেলে রহমতগঞ্জ। বিশেষ করে প্রথমার্ধে তারাই বেশি আধিপত্য বিস্তার করে খেলে। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় এবং ভাগ্য সহায় না হওয়াতে গোলের মুখ দেখেনি তারা। পক্ষান্তরে সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল আদায় করে নেয় ২০১৬ আসরের চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১৮ আসরের রানার্সআপ চট্টগ্রাম আবাহনী। খেলার ৩ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যেতে পারত রহমতগঞ্জ। আবাহনীর ডি-বক্সের ডান প্রান্তে ভেতরে বল পেয়েই ডান পায়ের জোরালো শট নেন মিডফিল্ডার রকিবুল ইসলাম। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই শট ফিস্ট করে রক্ষা করেন গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহাল। ২২ মিনিটে গোল করার আরেকটি সুবর্ণ সযোগ নষ্ট করে রহমতগঞ্জ। আবাহনীর ডি বক্সের মাঝামাঝি থেকে পোস্ট লক্ষ্য করে মিডফিল্ডার ফয়সাল আহমেদ যে শটটি নেন, তা পোস্টে লেগে গোললাইনে গিয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে ফিরে আসে। রহমতগঞ্জের খেলোয়াড়রা গোলের দাবি জানালেও রেফারি ভুবন মোহন তরফদার গোল হয়নি বলে খেলা চালিয়ে যান। ৩৮ মিনিটে খেলার ধারার বিপরীতে গোল করে এগিয়ে যায় চট্টগ্রাম আবাহনী। কর্নার পায় তারা। মিডফিল্ডার কৌশিক বড়ুয়ার কর্নার থেকে বক্সের ভেতবে জটলার মধ্যে হেড করেন গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড মমোদৌ বাও। তার হেড রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক তিতুমীর চৌধুরীর হাত ফস্কে ঢুকে যায় জালে (১-০)। চলতি আসরে এটা বাওয়ের ব্যক্তিগত তৃতীয় গোল। প্রথম ম্যাচে বাও করেছিলেন জোড়া গোল। ৬৬ মিনিটে একটি গোল করেছিল চট্টগ্রাম আবাহনী। কিন্তু অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। বাঁপ্রান্ত দিযে আক্রমণে যায় আবাহনী। বাও উড়ন্ত ক্রস ফেলেন বক্সে। সেটা ডান পায়ে পুশ করে জালে ঠেলে দেন নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড আওয়ালা মাগালান। কিন্তু সহকারী রেফারি জানিয়ে দেন এটা অফসাইড ছিল। বাকি সময়টাতে উভয় দলই গোল করার চেষ্টা করে এবং শরীরনির্ভর ফুটবল খেলার চেষ্টা করলে প্রচুর ফাউল হয়। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে রেফারি ভুবন মোহন তরফদারকে মোট ৫ বার হলুদ কার্ড দেখাতে হয়। এর মধ্যে ৪টি হলুদ কার্ডই দেখেন চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলোয়াড়রা। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে ওই এক গোলে জিতেই কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়ে উজ্জ্বল চক্রবর্তীর শিষ্যরা। জার্সি নম্বর বিভ্রাট নিয়েও নোফেলের জয় সর্বাধিক তিনবারের চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ২-০ গোলে হারিয়ে স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে নবাগত নোফেল স্পোর্টিং ক্লাব। ২ খেলায় ৩ পয়েন্ট নিয়ে চার দলের ‘বি’ গ্রুপের তলানি থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এলো তারা। পক্ষান্তরে সমান খেলায় মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে শেষ আটে খেলাটা অনেকটাই কঠিন করে ফেলল মোহামেডান। বৃহস্পতিবারের ম্যাচে নোফেল যে জার্সি পরে খেলতে নামে, সেটি নিয়ে প্রচুর ঝামেলা পোহাতে হয় প্রেসবক্সে খেলা কভার করতে আসা ক্রীড়া সাংবাদিকদের। খেলোয়াড় তালিকায় জার্সির রং হিসেবে লেখা হয় গ্রীন/গ্রীন। অথচ জার্সি ছিল গ্রীন/হোয়াইট ... অর্থাৎ সবুজ ও সাদা। সেটা না হয় মেনে নেয়া গেল। কিন্তু সমস্যা তৈরি হলো অন্য জায়গায়। নোফেলের কোন খেলোয়াড়েই জার্সির নম্বর পড়া যাচ্ছিল না! যদিও খুব কাছ থেকে পড়া যায়, কিন্তু সাংবাদিকরা তো খেলা চলাকালে এত কাছে যেতে পারেন না। তাদের খেলা দেখতে হয় সাইডলাইন থেকে প্রায় ৮০ গজ দূর থেকে দূরত্বে এবং খালি চোখে। খালি চোখের কথা বলা হচ্ছে, তার কারণ বাফুফে জোর গলায় ঘোষণা দিলেও স্বাধীনতা কাপের খেলা রহস্যজনকভাবে সরাসরি সম্প্রচার করছে না চ্যানেল নাইন! এমনিতেই নোফেলের কোন তারকা খেলোয়াড় নেই (সবই নতুন এবং অচেনা খেলোয়াড়), তার ওপর জার্সির নম্বরের এই বিভ্রাট। ফলে সাংবাদিকরা কোনভাবেই ম্যাচ রিপোর্ট লিখতে পারছিলেন না। বিরতির ঠিক আগে প্রেসবক্সে উপস্থিত ম্যাচ কমিশনার সাব্বির সালেক শুভর কাছে গিয়ে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চান। জার্সির নম্বরের এই সমস্যা তো ম্যাচ শুরুর আগেই তার দেখার কথা। তাহলে কেন তিনি এই সমস্যার সমাধান করলেন না? এই ব্যর্থতার দায়ভার স্বীকার না করে বরং শুভ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এমনকি তিনি বিরতির পর নোফেলকে বিকল্প জার্সি পরে মাঠে নামানোর কোন উদ্যোগও নেননি। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয় বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে। সোহাগ বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। উল্লেখ্য, ঘরোয়া ফুটবলে এমন সমস্যা এর আগেও দেখে গেছে। শেখ রাসেলও এমনটা করেছে অনেকদিন। এ নিয়ে লেখালেখিও হয়েছে। কিন্তু ম্যাচ কমিশনাররা বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন আর বাফুফেও এর কোন সুরাহা করেনি। অথচ আন্তর্জাতিক ফুটবলে এমন হলে ওই ধরনের জার্সি পরে খেলার অনুমতিই দেয়া হতো না! আর বাংলাদেশের ফুটবলে কি না সেটা স্বতঃসিদ্ধ! খেলার ২৮ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় নোফেল। কাউন্টার এ্যাটাক করে তারা। বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে মোহামেডানের ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন নোফেলের গিনি ফরোয়ার্ড ইসমাইল বাঙ্গুরা। বাঁ পায়ের গড়ানো ক্রস করেন তিনি। সেই বল চমৎকারভাবে ডান পায়ের গড়ানো প্লেসিং শটে জালে পাঠান মিডফিল্ডার খন্দকার আশরাফুল ইসলাম (১-০)। ৮৫ মিনিটে সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে মোহামেডান। ডান প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে আগুয়ান মোহামেডানের বদলি মিডফিল্ডার পাশবন মোল্লার ডান পায়ের উঁচু ও তীব্র শটটি নোফেলের মাঝ পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৯০ মিনিটে নোফেলের মিডফিল্ডার জমির উদ্দিনের শটও একইভাবে মোহামেডানের পোস্টে লেগে ফিরে আসে। খেলা শেষ হওয়ার মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে বদলি মিডফিল্ডার মোহাম্মদ রোমান ফাঁকা পোস্টে বল ঠেলে দিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন। মোহামেডানের গোলরক্ষক খন্দকার সাদ ইস্তিয়াক সতীর্থদের দিয়ে গোল করানোর চেষ্টায় মরিয়া হয়ে তখন মাঝমাঠে চলে এসেছিলেন! শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে জিতে ও শেষ আটে যাওয়ার স্বপ্ন জিইয়ে রেখে মাঠ ছাড়ে কামাল বাবুর শিষ্যরা।
×