ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াসির শাহর ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮

ইয়াসির শাহর ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একের পর এক বিস্ময় গড়েই চলেছেন পাকিস্তানের লেগস্পিনার ইয়াসির শাহ। পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্ট উইকেট পেয়েছিলেন সবচেয়ে কম টেস্ট খেলে। আর ১০০তম উইকেট পান টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম সময়ে। আর এবার গড়লেন বিশ্বরেকর্ড। সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ক্যারিয়ারের ২০০ উইকেট। আবুধাবিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান তৃতীয় টেস্টের চতুর্থ দিন সকালে উইলিয়াম সোমারভিলকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে এ মাইলফলক ছুঁয়েছেন ইয়াসির। এজন্য তাকে খেলতে হয়েছে ৩৩ টেস্ট। ৮২ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ান লেগস্পিনার ক্ল্যারি গ্রিমেট ৩৬ টেস্টে ২০০ উইকেট নিয়ে এতদিন বিশ্বরেকর্ড নিজের দখলে রেখেছিলেন। তাকে পেছনে ফেললেন ইয়াসির। ৩২ বছর বয়সী ইয়াসির চার বছর আগে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আবুধাবি টেস্ট খেলতে নামার আগে মাত্র ৩২ টেস্টে ১৯৫ উইকেট ছিল তার শিকারের ঝুলিতে। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৩ উইকেট নিয়ে কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন রেকর্ডের। আর দ্বিতীয় ইনিংসে তৃতীয় দিন শেষেই তুলে নিয়েছিলেন ওপেনার টম লাথামের উইকেট। তাই রেকর্ড গড়তে অপেক্ষাটা বেড়েছে ইয়াসিরের। কিন্তু চতুর্থ দিন আর বেশি সময় নেননি ইতিহাস গড়তে। দিনের সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই শিকার করেন সোমারভিলকে। আর এতেই অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে যান তিনি। ক্যারিয়ারের ৩৩তম টেস্টের শেষ ইনিংসে এসে এই বিশ্বরেকর্ড গড়লেন। তার আগেও দ্রুততম ২০০ টেস্ট উইকেটের মালিকানা ছিল এক লেগস্পিনারেরই দখলে। গ্রিমেট তার ক্যারিয়ারের ৩৬তম টেস্টে ওই মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জোহানেসবার্গে ১৯৩৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এই ৮২ বছরের মধ্যে শেন ওয়ার্ন, অনিল কুম্বলে, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল ও ইমরান তাহিরের মতো লেগস্পিনাররা দীর্ঘ সময় টেস্ট খেলেছেন। অসংখ্য রেকর্ডও গড়েছেন। কিন্তু তারা কেউ এত দ্রুত সময়ে ২০০ উইকেট দখল করতে পারেননি। ইয়াসির ৩২ বছর বয়সেই তা ছুঁয়ে ফেললেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বাংলাদেশ সফরে যখন এসেছিলেন, সে সময় বাংলাদেশ দলের তরুণ উদীয়মান লেগস্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখনকে দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন ইয়াসির। গুগলি ছোড়ার জন্য পরামর্শও নিয়েছিলেন লিখনের কাছ থেকে। তবে লিখন টেস্টের পাতা থেকে হারিয়ে গেছেন, আর ইয়াসির একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলেছেন। ক্যারিয়ারের ৫০ টেস্ট উইকেট নিতে তার সময় লেগেছিল ৯ ম্যাচ। সেটি ছিল পাকিস্তানের পক্ষে দ্রুততম। পাকদের পক্ষে আগের সেরা ছিল পেসার ওয়াকার ইউনূসের ১০ টেস্টে ৫০ উইকেট দখল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফয়সালাবাদে ১৯৯০ সালে সেই রেকর্ড গড়েছিলেন ওয়াকার ১৯৫৬ সালে করা খান মোহাম্মদের রেকর্ড ভেঙ্গে। পরের ৫০ উইকেট নিতে মাত্র ৮ টেস্ট খেলতে হয়েছে ইয়াসিরকে। এবার তিনি পাকিস্তানের তো বটেই, টেস্ট ইতিহাসেই দ্রুততম ১০০ উইকেট শিকারে দুই নম্বরে উঠে আসেন। এবার তার রেকর্ড ভাগাভাগি করতে হয় গ্রিমেট, সিডনি বার্নস ও চার্লি টার্নারের সঙ্গে। ইয়াসিরসহ এরা সবাই ১৭ টেস্টে ১০০ উইকেট ছুঁয়েছেন। আর ১৬ টেস্টে ১৮৯৬ সালে ইংলিশ পেসার জর্জ লোহম্যান ওই মাইলফলক ছুঁয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বরেকর্ড দখলে রেখেছেন। কিন্তু বাকি ১০০ উইকেট শিকার করতে সবারই সময় বেশি লাগলেও ধীরে ধীরে যেন আরও ভয়ানক হয়ে উঠছেন ইয়াসির। তিনি আর ১৬ টেস্ট খেলেই বাকি ১০০ উইকট তুলে নিয়েছেন। তাই ইতিহাসের সব বোলার তার পেছনে পড়ে গেছেন। গ্রিমেটের পেছনে আছেন ভারতের অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৩৭ টেস্ট) ও অস্ট্রেলিয়ার পেসার ডেনিস লিলি (৩৮ টেস্ট)। পাকিস্তানের পক্ষে আগে এই রেকর্ডটি ছিল ওয়াকারেরই দখলে। টেস্ট ইতিহাসের তালিকায় বর্তমানে ৫ নম্বরে নেমে যাওয়া এ সাবেক পাক পেসার ৩৮ টেস্টে ২০০ উইকেট ছুঁয়েছিলেন। ইয়াসির এ বছর মাত্র ৫ টেস্ট খেলেছেন। তার মোট শিকার সংখ্যা চলমান দশম ইনিংসে ৩৫টি। চলতি বছরের নৈপুণ্যে তার অবস্থান আট নম্বরে হলেও সবচেয়ে কম টেস্ট খেলেছেন তিনি। ৯ টেস্টের ১৮ ইনিংস বোলিং করে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা ৪৬ উইকেট নিয়ে এখন সবার ওপর এ বছরের নৈপুণ্যে। শ্রীলঙ্কার স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরাও সমান ম্যাচ ও ইনিংসে সমানসংখ্যক উইকেট নিয়েছেন। এ বছর আর টেস্ট খেলার সুযোগ নেই ইয়াসিরের, নয়তো সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার হয়তো সম্ভাবনাটা উজ্জ্বল ছিল। কারণ, ফর্মের তুঙ্গে আছেন তিনি সেটা তার নৈপুণ্যই বলে দেয়। কিইউদের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত এ সিরিজে ২৭ উইকেট নিয়েছেন ইয়াসির। এক্ষেত্রে আরেকটি পাক রেকর্ডও ভেঙ্গে ফেলার সুযোগ তার সামনে। ৩ টেস্টের সিরিজে এর আগে পাক লেগস্পিনার আব্দুল কাদির ৩০ উইকেট নিয়েছিলেন যা পাক রেকর্ড। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৮৮ সালে কাদির ওই কীর্তি গড়েছিলেন। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে নিজের সবচেয়ে ভয়ানক রূপটা দেখিয়েছেন ইয়াসির, দুই ইনিংসে তুলে নিয়েছিলেন ১৪ উইকেট। কোন পাকিস্তানী বোলারের এক টেস্টে এটিই সর্বাধিক উইকেট শিকারের যৌথ রেকর্ড। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক পেসার ইমরান খানও ১৪ উইকেট নিয়েছিলেন এক টেস্টে। তবে ক্রমেই ইয়াসির নিজেকে যে উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন, তাতে করে পাকিস্তান ক্রিকেটের সব রেকর্ডই হয়তো তার দখলেই চলে যাবে।
×