ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক পরিকল্পনা

ভোটকেন্দ্রে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাত লাখ সদস্য

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮

ভোটকেন্দ্রে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাত লাখ সদস্য

শংকর কুমার দে ॥ এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ‘সাধারণ’-দুই ভাগে বিভক্ত করে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সারাদেশের ৪০ হাজার ২৭৩ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৫ হাজার ৮২৭ কেন্দ্র ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ১৪ হাজার ৪৪৬ কেন্দ্র ‘সাধারণ’ ভোটকেন্দ্র হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে পুলিশ। দুর্গম এলাকায় ১ হাজার ৬৩২ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই উদ্যোগ। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, কোস্টগার্ড, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, আনসার সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাত লাখ সদস্য মোতায়েন থাকবে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে। এর মধ্যে পুলিশ বাহিনীর লক্ষাধিক সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে এবারের নির্বাচনে। বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। কোন ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা হলে স্ট্রাইকিং ফোর্স তাৎক্ষণিকভাবে ‘মুভ’ করার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষে ব্যাপক কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। যে কোন জাতীয় নির্বাচনের আগে রুটিন কাজের অংশ হিসেবে সার্বিক নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবারের নির্বাচনের আগে-পরের পরিবেশ নির্বিঘœ করতে অধিকমাত্রায় কৌশলী হতে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিট। এবার ভোটকেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন মাঠপর্যায়ের নেতৃত্বে থাকা উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। সার্বিক পরিস্থিতি, বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, মাঠের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নাশকতার আশঙ্কা মাথায় রেখে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আগের চেয়ে নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে পুলিশের কর্মপরিকল্পনা ও কৌশলসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠকে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়া তথা ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগে ভুয়া তথ্য দিয়ে গুজব ছড়ানো হতে পারে। কেউ যেন অপপ্রচার চালিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে, সে বিষয়ে তৎপর ও সজাগ থাকার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে এবারের নির্বাচনে। সামাজিক মাধ্যমে সাইবার টহলের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করতে গুরুত্বারোপ করা হবে বলে জানা গেছে। জাতীয় সংসদের তিন শ’ নির্বাচনী এলাকার কোন মেট্রোপলিটন ও বিভাগে কতটি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, কত পুলিশ সদস্য লাগবে, পুলিশের চাহিদা, রাজনৈতিক ক্যাডার ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোপনে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি থাকলে সে বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, জামায়াত-শিবির ও সরকারবিরোধী চক্রের অপতৎপরতা সম্পর্কে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা রেঞ্জাধীন ১৩ টি জেলার মোট ৭ হাজার ২শ’ ৩৪ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে চার হাজার ৭৪, ময়মনসিংহ রেঞ্জের দুই হাজার ৭১১ কেন্দ্রের মধ্যে এক হাজার ৭৫৩, চট্টগ্রাম রেঞ্জের পাঁচ হাজার ৭৯৮ কেন্দ্রের মধ্যে তিন হাজার ৮৮১, খুলনা রেঞ্জের চার হাজার ৫২৫ কেন্দ্রের মধ্যে দুই হাজার ৮৪৯, রাজশাহী রেঞ্জের চার হাজার ৮৯৫ কেন্দ্রের মধ্যে দুই হাজার ৮০৭, রংপুর রেঞ্জের চার হাজার ১৪৮ কেন্দ্রের মধ্যে দুই হাজার ৯০৭, সিলেট রেঞ্জের দুই হাজার ১৮৩ ও বরিশাল রেঞ্জের দুই হাজার ৩৩১ কেন্দ্রের মধ্যে এক হাজার ৬৯৭টি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের করা তালিকায় ঢাকা মহানগর এলাকায় দুই হাজার ১১২ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ২৬৭ কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ, রাজশাহী মহানগর এলাকার ১৯৬টির মধ্যে ১৬৮টি গুরুত্ব¡পূর্ণ কেন্দ্র ও ২৮টি সাধারণ, রংপুর মহানগর এলাকার ১৯৮ কেন্দ্রের মধ্যে ১১৮ গুরুত্ব¡পূর্ণ এবং ৮০ সাধারণ, চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় ৫৯১ কেন্দ্রের মধ্যে ৫৪৩ গুরুত্বপূর্ণ ও ৪৮টিকে সাধারণ, খুলনা মহানগর এলাকায় ৩০৯ কেন্দ্রের মধ্যে ২১০টি গুরুত্বপূর্ণ ৯৯টি সাধারণ, বরিশাল মহানগর এলাকার ১৯৭টির মধ্যে ১২৬টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ৭১টি সাধারণ, সিলেট মহানগর এলাকার ২৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ২০২ টি গুরুত্বপূর্ণ ৯১টি সাধারণ, গাজীপুর মহানগর এলাকার ৪২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৮টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৮৮ কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (এইচ আর এম) শফিকুল ইসলাম বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোকে ‘সাধারণন’ ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিভাজন করার কারণ হচ্ছে, কেন্দ্রের অবস্থান, প্রার্থীদের এলাকার অবস্থা, ভোটারদের অবস্থা এবং পরিবেশ-পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় এটা করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই এটা করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা রেঞ্জাধীন মহানগর ও জেলাগুলোতে অবস্থিত ৭ হাজার ২ শ’ ৭৪ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর পর নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী র‌্যাব, আনসার, বিজিবিসহ সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হবে। মোট কথা সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘেœ নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেটা নিশ্চিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা রেঞ্জে সাম্প্রতিক সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা এবং পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কোথাও বিশৃঙ্খলার কোন ঘটনা ঘটেনি। এর কারণ হচ্ছে, আমরা সব নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। সাধারণ মানুষ যদি মনে করে নিরাপত্তা বিঘিœত হবে না। তারা কিন্তু নিজেদের ভোটাধিকারটা প্রয়োগ করতে যায়। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতোমধ্যে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তাতে আশা করি কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা হবে না। তারপরও এ ব্যাপারে সংবাদকর্মী, ভোটার, এলাকাবাসীসহ সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতা গ্রহণ করা হবে, যাতে আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করে দেশ-বিদেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারি।
×