ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমা চেয়ে দাবি পূরণের আশ্বাসে ভিকারুননিসায় আন্দোলন স্থগিত

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮

ক্ষমা চেয়ে দাবি পূরণের আশ্বাসে ভিকারুননিসায় আন্দোলন স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গবর্নিং বডির সভাপতিসহ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে সকল দাবি পূরণের আশ^াসে আন্দোলন স্থগিত করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের ছাত্রীরা। আজ পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষায়ও তারা অংশ নেবে। তবে শিক্ষিকাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর পর শিক্ষকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এনেছে ছাত্রীদের একটি অংশ। গ্রেফতার করা শিক্ষিকাকে নিরপরাধ দাবি করে তার মুক্তির আহ্বানও জানিয়েছে তারা। এদিকে অধিকাংশ দাবি পূরণের পর ছাত্রীরা ক্লাসে ফিরলেও সঙ্কট জিইয়ে রাখতে সক্রিয় হয়েছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী অভিভাবকসহ স্থানীয় একটি বিশেষ গ্রুপ। গবর্নিং বডির নির্বাচনে পরাজিত কয়েক জন ও অভিভাবকদের একটি গ্রুপ বৃহস্পতিবার থেকেই ঘটনার দায় গবনির্ং বডির ওপর চাপানোর জন্য ভিকারুননিসার সাবেক কিছু ছাত্রী এনে আন্দোলন সক্রিয় করার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ এ গ্রুপটি হঠাৎ করে গবর্নিং বডির সকল সদস্যের পদত্যাগের দাবি এনে ‘শিক্ষার্থী অভিভাবক’ ব্যানান নাম দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ দাখিল করেছেন। বহিরাগত এসব ব্যক্তির সক্রিয় হওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারই বক্তব্য দিয়েছে ছাত্রীরা। তারা বলেছে, এখানে বহিরাগত ব্যক্তিরা প্রবেশ করেছে। কেউ যেন আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। এর আগে সহপাঠী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বুধবার ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’ দেয়ার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদাউসসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্দেশে বরখাস্ত করা হয় অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদাউস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার এবং শ্রেণীশিক্ষক হাসনা হেনাকে। অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্ত ছাড়াও তাদের এমপিও বাতিল করা হয়েছে। তারা তিনজনই সংশ্লিষ্ট মামলার আসামি। এর মধ্যে বুধবারই গ্রেফতার করা হয় শ্রেণীশিক্ষক হাসনা হেনাকে। শিক্ষক হাসনা হেনাকে বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সাঈদ শিক্ষকের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে নেয়ার আদেশ দেন। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে এই শিক্ষককে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কামরুল হাসান তালুকদার। অপরদিকে তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। জামিনের বিরোধিতা করে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, জামিন পেলে পলাতক হয়ে মামলার তদন্তে তিনি বিঘœ সৃষ্টি করবেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম জামিন আবেদন করে বলেন, তিনি এ ঘটনায় জড়িত নন। তার সম্পর্কে বাদী কোন অভিযোগও করেননি। এদিকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার মধ্যেই বেইলি রোডে ভিকারুননিসার প্রধান ফটকের সামনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে নামে কিছু ছাত্রী ও অভিভাবক। তারা গবর্নিং বডির পদত্যাগ এবং অরিত্রীর মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার শর্ত দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এ দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন বন্ধ হবে বলে সকালেই ঘোষণা দেয় তারা। এমন এক পরিস্থিতিতে দুপুর দেড়টার দিকে স্কুলের গবর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার সাংবাদিকদের মাধ্যমে অরিত্রীর বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজন হলে পদত্যাগ করতেও আমি রাজি। তিনি বলেন, পদত্যাগের বিষয়টি আমরা গবর্নিং বডির সভায় তুলব। এটা সদস্যদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, তারা পদত্যাগ করবেন কিনা? নিজের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে আমি পদত্যাগ করতে রাজি। তবে নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের মাধ্যমে স্কুল ও কলেজকে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে নিতে দু-একদিনের মধ্যে গবর্নিং বডি সভায় বসবে। শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবির মধ্যে প্রথম চারটি বাস্তবায়নের পর্যায়ে আছে। দুটি দাবি সময়সাপেক্ষ বিষয়। আমরা আগেও বলেছি, অরিত্রীর ঘটনার জন্য আমরা মর্মাহত। আমরা গবর্নিং বডির পক্ষ থেকে এমন ঘটনার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। এরপরও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় আড়াইটার দিকে কয়েক শিক্ষক এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় শিক্ষকদের কয়েকজনকেও ছাত্রীদের সঙ্গে কাঁদতেও দেখা যায়। এক পর্যায়ে প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভেতরে নিয়ে যেতে সক্ষম হন তারা। শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। কাল শুক্রবার থেকে পরীক্ষা দেবে শিক্ষার্থীরা এবং ক্লাসে ফিরে যাবে তারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কয়েক জন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে। তারা জানায়, তাদের ছয় দফা দাবির মধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষের আয়ত্তের মধ্যে যেগুলো তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শিক্ষকরা। আর অন্যান্য দাবি আইনী প্রক্রিয়ায় চলছে তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বলার কিছু নেই। দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার কারণেই শিক্ষার্থীরা শুক্রবার থেকে পরীক্ষা দেবে। শিক্ষার্থীদের একজন আনুশকা রায় সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষকরা আমাদের সব দাবি পর্যায়ক্রমে মেনে নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা এখন ক্লাসে ফিরে যাব। আর যেগুলো আইনী বিষয় সেগুলো আইনের মাধ্যমে সমাধান হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। তবে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের আন্দোলন স্থগিত করলেও শিক্ষিকাকে গ্রেফতার ও কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছে ছাত্রীদের একটি অংশ। গ্রেফতার করা শিক্ষিকাকে নিরপরাধ দাবি করে তার মুক্তির আহবানও জানিয়েছেন তারা। আন্দোলন স্থগিতের পরই বেশকিছু শিক্ষার্থী স্কুলের ১ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান করে গ্রেফতার শিক্ষিকা হাসনা হেনার মুক্তির দাবি করেছেন। ‘অপরাধীর শাস্তি চাই, হাসনা হেনা আপার মুক্তি চাই’ স্লোগানের মাধ্যমে শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে নির্দোষ বলেও দাবি করে। বেশকিছু শিক্ষার্থী প্ল্যাকার্ড হাতে তাদের শিক্ষিকা হাসনা হেনার মুক্তির দাবি জানায়। নিশাত সুমাইয়া হক নামে এক ছাত্রী জানায়, অরিত্রীর হত্যার প্ররোচনাকারী দোষীদের শাস্তি চাই। আমাদের শিক্ষিকা হাসনা হেনা সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমরা তার মুক্তি চাই। আরেক ছাত্রী বলেন, অরিত্রী অধিকারী যেমন আমাদের সহপাঠী তেমনি শিক্ষিকা হাসনা হেনাও আমাদের মা। শিক্ষিকার মুক্তির দাবির বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি আনুশকা রায় অবশ্য বলেছেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। যারা মুক্তি দাবি করছে তারা আমাদের সঙ্গের নয়।
×