ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টিআইবির পুরস্কার প্রদান

সাংবাদিকতার স্বার্থেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জরুরী

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮

সাংবাদিকতার স্বার্থেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জরুরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সমাজের মঙ্গল ও সাংবাদিকতার স্বার্থেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জরুরী। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য প্রতিবন্ধক হয় এমন আইন প্রয়োজনে পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং পরিমার্জন করতে হবে। দরকার হলে পুরনো আইন বাতিল করে নতুন করে গণমাধ্যমবান্ধব আইন প্রণয়ন করতে হবে। বৃহস্পতিবার সকালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ধানম-ির কার্যালয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৮ ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ বিষয়ক আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন। জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদ্যাপনে টিআইবির সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপার্সন এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। বক্তারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ বিষয়ক আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ এ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম। প্রবন্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারাসমূহ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। পরে এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, দৈনিক প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন, ঢাকা বাংলা (ডিবিসি) চ্যানেলের সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু এবং ইউএনবির সাবেক নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমদ। এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রফেসর ড. গওহর রিজভী বলেন, সভ্যতার শুরু থেকেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি প্রাসঙ্গিক। স্বাধীন মত প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে এটা কোথায় গিয়ে থামবে তা কেউ জানে না। সরকার বা বিরোধী যেই হোক না কেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছাড়া আমরা যে সমাজ চাই তা সম্ভব নয়। তাই একটা আইন হয়েছে মানে এটা পরিবর্তন করা যাবে না এমন নয়। অনেকবার আইন হয়, আবার তা পরিবর্তনও হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এই ধরনের আলোচনাটা চলতে থাকুক। এটা একসময় অবশ্যই পরিবর্তন হবে। টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপার্সন এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, একটা সমাজের বাক স্বাধীনতা থাকতে হবে, চিন্তার স্বাধীনতা থাকতে হবে এবং তার সঙ্গে বিবেকের স্বাধীনতাও থাকতে হবে। আর আমাদের সজাগ হওয়ার জন্য বড় ভূমিকা রাখে গণমাধ্যম। যদি এটাই নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাহলে আমাদের সজাগ হওয়ার আর সুযোগ নেই। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা এজন্যই করছি, কারণ এখানে আশঙ্কা আছে যে, এর মাধ্যমে বিবেক বন্দী আছে। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সরকারের স্ববিরোধিতার পরিচায়ক। কারণ জাতিসংঘের যে সনদের ওপর ভিত্তি করে আমরা আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদ্যাপন করছি তার ১৩ অনুচ্ছেদে দুর্নীতি প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জনগণ, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের সম্মিলিত প্রয়াসকে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ, গণমাধ্যম ও বেসরকারী সংগঠনসমূহ যাতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে পারে, তার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্বও সরকারের। সুতরাং অবিলম্বে এই আইনটি পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংশোধন এমনকি প্রয়োজনে বাতিল করে আবার নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে।
×