ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১০ বছরেও শেষ হয়নি প্রকল্প

কিশোরগঞ্জে দুই লাখ মানুষের ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮

কিশোরগঞ্জে দুই লাখ মানুষের ভোগান্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ, ৬ ডিসেম্বর ॥ ১০ বছর ধরে অর্ধনির্মিতই রয়ে গেছে। ফাঙ্গাস আর আগাছায় ছেয়ে গেছে ভবনগুলো। প্রতিটি ভবনের ফাটল ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে। সীমানা প্রাচীর ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিণত হয়েছে অসামাজিক কর্মকা-ের অভয়াশ্রমে। ফলে জেলার নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পটির এ হেন অবস্থায় নিরাপত্তা, চিকিৎসক, জনবলের অভাবে সেবা কার্যক্রম যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতে করে হাওর জনপদের প্রায় দুই লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে সারা দেশের ন্যায় জেলার নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। তখন এটি নির্মাণ কাজের দায়িত্ব নেয় ঢাকার মেসার্স কাজল বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মূল হাসপাতাল ভবনসহ কয়েকটি কোর্য়ার্টার নির্মাণে প্রাক্কলিত দর ধরা হয় ৫ কোটি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। কার্যাদেশ চুক্তি মূলে ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবরে শুরু হয়ে ২০১০ সালের ১২ এপ্রিলের মধ্যে ভবন নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ সমাপ্তি হওয়ার কথা। কিন্তু ৪০% কাজ শেষ হওয়ার আগেই উত্তোলন করা হয় ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। পরে অজ্ঞাত কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নিকলীতে আগমন উপলক্ষে ফাটল আর ছেয়ে যাওয়া ফাঙ্গাসের ওপর তড়িঘড়ি করে শেষ করা হয় বাকি প্রায় ৬০% কাজ। এরপর থেকে আর দেখা নেই নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মেসার্স কাজল বিল্ডার্সের কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির। এ অবস্থায় ৪০% কাজ শেষ না হওয়ায় ইতোমধ্যেই ভবনগুলোর নানা অংশ খসে পড়েছে। দেখভালের কোন লোক না থাকায় অর্ধনির্মিত ভবনগুলো এখন পরিণত হয়েছে অসামাজিক কর্মকা-ের আখড়া হিসেবে। বর্তমানে জুয়া, প্রমোদ ও নেশার জন্য ভবনগুলো আলাদা আলাদা নামকরণে পরিচিতি পেয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় বেড়েছে চুরি। নিরাপত্তাহীনতায় কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরা রাত যাপন করতে পারছেন না। ভবন সঙ্কটে পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। এতে করে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। মা ও শিশুদের জন্য নির্মিত দ্বিতল ভবনটি ব্যবহৃত হচ্ছে অফিস ও ডরমিটরি হিসেবে। নারী ডাক্তারদের থাকার ব্যবস্থা না থাকায় কাগজেকলমে নারী ডাক্তার থাকলেও বাস্তবে দেখা মেলে না। প্রসব থেকে শুরু করে মেয়েলি নানা সমস্যায় উপজেলার নারী রোগীরা বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। নিকলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, একই সঙ্গে শুরু হওয়া জেলার অপরাপর হাসপাতাল উন্নীতকরণ প্রকল্প শেষ হয়ে দিব্যি কার্যক্রম চলছে। কোন কোনটির পুনঃসংস্কারের কাজও চলছে। এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালটির কাজ শেষই হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে লেখালেখি চলছে। কিন্তু ফল মিলছে না। এ ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল সূত্র জানায়, হাসপাতালটির কাজ এত দিনেও শেষ না হওয়া দুঃখজনক। বিষয়টি বর্তমানে উপরের মহলে আছে। এখন উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। একই কথা জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রও বলছে। নিকলী উপজেলা চেয়ারম্যান কারার সাইফুল ইসলাম জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন বেশকিছু দিন আগে এ ব্যাপারে একটি ডিও লেটার পাঠিয়েছেন। জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সভায়ও বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। রিটেন্ডার দিয়ে শীঘ্রই নতুন ঠিকাদারের মাধ্যমে আবারও কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
×