ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জর্জ বুশ- মৃত্যু, যন্ত্রণা, দুঃখ, অনাহার ও ধ্বংসের জন্য ইরাকীরা যাকে মনে রেখেছে

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮

জর্জ বুশ- মৃত্যু, যন্ত্রণা, দুঃখ, অনাহার ও ধ্বংসের জন্য ইরাকীরা যাকে মনে রেখেছে

শনিবার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের মৃত্যু ইরাকীদের তিক্ত স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ‘মিস্টার এমবার্গো’ নামে পরিচিত বুশই তাদের দেশের ওপর বিপর্যয়কারী নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিলেন। তাদের দেশের ধ্বংসের জন্য তারা এই নিষেধাজ্ঞাগুলোকেই দায়ী করছেন। এএফপি। মার্কিন বহুজাতিক বাহিনীর সৈন্যরা ১৯৯১ সালে কুয়েত থেকে ইরাককে হটিয়ে দেয়। ইরাকের সাবেক একনায়ক সাদ্দাম হুসেন কুয়েতকে ইরাকের ১৯তম প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এ ঘটনায় ইরাককে একঘরে করা হয় ও বেশ কিছু বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পাশাপাশি তেল অবরোধ করা হয়। এতে এক দশক অনেকেই রেশন কার্ড দ্বারা প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় এবং চাকরিতে বেতন অনেক কমে যায়। তাদের পক্ষে এই সময়টা ভুলে যাওয়া সহজ নয়। বাগদাদের বিখ্যাত মুতানাবি সড়কের একটি ক্যাফেতে ৬০ বছর বয়সী লেখক সামেল আব্দুল কাদের বলেন, ইরাকীদের জন্য বুশের বিশেষ কোন খ্যাতি নেই। দায়িত্বের কোন বালাই নেই। তিনি সাবেক মার্কিন নেতাকে একজন অপরাধী ও আক্রমণকারী হিসেবে অভিহিত করেন। ইরাকের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙ্গার জন্য তিনি বুশকে দোষারোপ করেন। ১৯৯০ সালের শুরুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরাকের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যেগুলোকে সংস্থাটির ইতিহাসে সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা হিসেবে দেখা হয়। এর সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অবরোধও ছিল। ২০০৩ সালে বুশের ছেলের ইরাক আক্রমণের পরের বছরগুলোতে এসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। তবে ওইসব নিষেধাজ্ঞার ফলে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল তা আজও ইরাকীদের মনে দগদগ করছে। আব্দুল কাদের বলেন, বুশ ছিলেন মি. এমবার্গো, তিনি ইরাকের লোকজনকে কঠোর আঘাত করেছেন। সবশেষে এরাই ইরাকী লোকজন যারা চরম মূল্য দিয়েছে। ১৯৭০’র দশকে বাগদাদ তুলনামূলক সমৃদ্ধ একটা সময় দেখেছে। তবে অবরোধ অর্থীতিতে মন্দা ডেকে আনে যেটা উত্থিত হয়েছিল ১৯৮০’র দশকে ইরানের সঙ্গে ৮ বছরের নির্মম যুদ্ধ থেকে। অনেক ইরাকীই ১৯৯১ সালে বুশের হস্তক্ষেপ ও দেশটির বর্তমান দুর্দশার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন। ১২ বছর পর তার ছেলের আগ্রহে দেশটিতে পুনরায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযান পরিচালিত হয়। অশ্রুসজল কণ্ঠে ৭০ বছর বয়সী জামলা আল-ইতাবি বলেন, আজকে দেশের এই অবস্থার জন্য বুশ পরিবারই দায়ী। তিনি বলেন, মৃত্যু, যন্ত্রণা, দুঃখ, অনাহার ও অবকাঠামো ধ্বংসের জন্যই শুধু আমরা তাকে স্মরণ করি। ১৯৯১ সালের যুদ্ধে পরাজয়ের পর বাগদাদের বিখ্যাত রাশেদ হোটেলের প্রবেশ পথে বুশের চেহারার মুজায়িক করা হয়। বলা হয়ে থাকে যে সাদ্দামের নির্দেশে এটা করা হয়েছিল যাতে অতিথিরা বুশের মুখের ওপর দিয়ে হেঁটে তাকে অপমান করতে পারে। ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমনের পর খুব দ্রুতই এটি অপসারণ করা হয়। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে অংশ নেয়া ৫২ বছর বয়সী মোহাম্মদ আল শেখ বলেন, বুশ ইরাকের ক্ষতি করেছে। সে শিশু, যুবক ও বয়স্কদের ওপর অন্যায্য বন্দিত্ব চাপিয়ে দিয়েছিল।
×