ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার মন্ত্রীর ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য ॥ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে তীব্র প্রতিবাদ

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

মিয়ানমার মন্ত্রীর ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য ॥ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে তীব্র প্রতিবাদ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মিয়ানমারের বাংলাদেশবিরোধী, রোহিঙ্গাবিরোধী ও ইসলামবিরোধী নীতির তীব্র প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশ। এই বর্ণবৈষম্যমূলক নীতির প্রতিবাদ করার জন্য বুধবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। খবর ওয়েবসাইটের। মেরিটাইম এ্যাফেয়ার্সের সচিব মোহাম্মাদ খুরশিদ আলমের দফতরে ওই বৈঠকে রাষ্ট্রদূতকে এক কাপ চাও দেয়া হয়নি। দশকের পর দশক ধরে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আউং সান সুচি ২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে তারাও সামরিক জান্তাদের নীতি অনুসরণ অব্যাহত রেখেছে। স¤প্রতি মিয়ানমারের ধর্মীয় বিষয়ক মন্ত্রী থুরা উ অং কো গত ২৭ নবেম্বর এক শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে ইসলাম ধর্মকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘চরমপন্থী ধর্ম’ বৌদ্ধদের জন্য একটি বড় ঝুঁকি। তিনি বলেন, ‘বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এক বিয়েতে অভ্যস্ত এবং তাদের এক বা দু’টি সন্তান রয়েছে। উগ্রপন্থী ধর্ম তিন কিংবা চার বিয়ে আর ১৫ থেকে ২০টি সন্তান ধারণে উৎসাহ দেয়’। তিন, চার বা পাঁচ দশক পরে এই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেশে বৌদ্ধরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এরপর গত মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওই মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সাত লাখ রোহিঙ্গা আছে এবং দেশটি রোহিঙ্গাদের ফেরত যেতে বাধা দিচ্ছে এবং বাংলাদেশ এর মাধ্যমে টাকা আয় করছে। থুরা আরও অভিযোগ করেন, রোহিঙ্গা যুবকদের মাথা নষ্ট করা হচ্ছে এবং তারা মিয়ানমারের উদ্দেশে যে কোন সময়ে মার্চ করবে। একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বলেছি তাদের মন্ত্রীর মন্তব্য সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং তার বক্তব্য মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।’ এসময় ওই মন্ত্রীকে এমন মন্তব্য করার জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতেও বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার গত ২৩ নবেম্বর বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার অধিবাসীদের ফেরত পাঠানোর জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং এই চুক্তি অনুযায়ী মন্ত্রী তাদের ‘বাঙালী’ বলতে পারে না বলে তিনি জানান। আমরা রাষ্ট্রদূতকে বলেছি তাদের মন্ত্রীর ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ধর্ম বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই। তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের থেকে সমৃদ্ধিশালী ছিল এবং কখনই বাঙালী সীমান্ত অতিক্রম করে রাখাইনে গিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করেনি। অন্য আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ওই মন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে সাত লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে এবং তারা এর আগে তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল সেটি অস্বীকার করছে। তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা যে বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করছে এবং এর থেকে লাভবান হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের উপস্থিতির কারণে আমাদের আর্থিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের এই রোহিঙ্গাবিরোধী নীতির জন্য ১৫ নবেম্বর একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যেতে রাজি হয়নি।’ নিরাপত্তা, চলাচলে স্বাধীনতা, জীবন যাপনের ব্যবস্থা, মৌলিক সুবিধা প্রাপ্তিসহ নাগরিকত্ব বিষয় নিয়ে রোহিঙ্গাদের উদ্বেগ আছে এবং এ বিষয়গুলো মিয়ানমার কখনই পরিষ্কার করে কিছু বলেনি।
×