ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় বরেণ্য শিল্পী সৌমিত রায়-রুমা চক্রবর্তী

প্রকাশিত: ০৭:২১, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

ঢাকায় বরেণ্য শিল্পী সৌমিত রায়-রুমা চক্রবর্তী

কলকাতার রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সৌমিত রায় ও রুমা চক্রবর্তী ঢাকায় এসেছেন গত ২৮ নবেম্বরে। দুজনই গেয়েছেন রবীন্দ্র উৎসব ২০১৮-এর মঞ্চে। সঙ্গীতশিল্পী, পরিচালক ও শিক্ষক সৌমিত রায় এবারই বাংলাদেশে প্রথম। অন্যদিকে বাংলাদেশে রাবিন্দ্রীক ভুবনে পরিচিত মুখ রুমা চক্রবর্তী । দুজনই সর্বক্ষণ সঙ্গীত নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকেন। রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর সৃষ্ট সুর ও সঙ্গীত তাদের আরাধনা। গত শনিবার এই দুই গুণীর সঙ্গে জমেছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত, সংস্কৃতি এবং এপারবাংলা-ওপারবাংলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনভাল করার আড্ডা। চমৎকার মিষ্টভাষী এই মানুষ দুটি আড্ডায় অনায়াসে উপস্থাপন করেন তাদের ব্যক্তি-কর্মজীবন, সঙ্গীত সাধনার বিভিন্ন অধ্যায়। আড্ডার যে বিষয়গুলো পাঠক কিংবা সঙ্গীতপ্রেমীদের আকর্ষণ করবে তার অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো। শুরুতেই দুজনের কাছে জানতে চাওয়াÑ আপনারা ঢাকায় কার বা কাদের আমন্ত্রণে এলেন। উত্তরে সৌমিত রায় বলেন, আমাদের বন্ধু কবি সংগীত শিল্পী সুলতানা শাহরিয়া পিউ এবং তার অন্যান্য বন্ধু যারা আমাদেরও বন্ধু মূলত তাদের সঙ্গে আমাদের অনেকদিন যাবত কথা হচ্ছিল বাংলাদেশে আসব এবং কয়েকটা গানের অনুষ্ঠান করব। শেষে এবারের রবীন্দ্র উৎসবে সুযোগ করে চলে এলাম। এ যাবত কয়টা অনুষ্ঠানে গান করলেন। রুমা চক্রবর্তী; আমরা এখন পর্যন্ত ঢাকা যাদুঘর মিলনায়তন এবং কুমিল্লার দেবীদ্বার এই দুই জায়গায় গান করেছি। সামনে আকাশ প্রদীপের অনুষ্ঠানে গান করার কথা আছে কিন্তু কবে কোথায় তা আপাতত বলতে পারছি না। সৌমিত রায় আপনি বাংলাদেশে প্রথমÑ রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে এখানকার শ্রোতাদের মনোভাব কেমন দেখলেন? সৌমিত রায়; আমি মনে করি কলকাতার থেকে এখানকার মানুষ রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর গান সম্পর্কে বেশি ওয়াকিবহাল। এখানে যারা গান করেন বা শোনেন তারা রবীন্দ্রনাথকে খুব ভালভাবেই জেনেশুনে ধারণ করেন এবং লালন করেন। যাদেরকে আপনি এই বিষয়ে খুব জানাশোনার মানুষ হিসেবে মানছেন তারা কি বয়সে প্রবীণ নাকি সব বয়সীদের এই কৃতিত্ব দিতে চাইছেন? সৌমিত রায়; দেখুন সবে এলাম, আর অনুষ্ঠান করছি দুটো, তাতে করে সার্বিক ধারণা দেয়া সম্ভব নয়। তবে আপাত দৃষ্টিতে যা দেখেছি তাতে আমার ইতিবাচক ধারণা জন্মেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে গানের অনুষ্ঠান বা গান শোনার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের গানকে ভীষণভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়। আপনাদের ওখানে মানে কলকাতায়ও কি এমনটা হয়? রুমা চক্রবর্তী; না আমাদের ওখানে এ রকম হয় না। জানেনই তো আমাদের ওখানে অনেক ডাইভার্সিটি আছে যেমন, দ্বীজেন্দ্র গীতি, অতুল প্রসাদের গান, আধুনিক গান বা সিনেমার গানসহ আরও অনেক রকম সঙ্গীত থাকাতে আপনাদের মতো করে এতটা ফোকাস করা হয় না। তবে, স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পর্যন্ত রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রাধান্য সর্বত্র। একটা সময় বাঙালীর প্রায় ঘরে গীতবিতান দেখা যেত এবং পারিবারিকভাবে সঙ্গীত চর্চার একটা সামগ্রিক রূপ দেখা যেত। এখন আর সেভাবে দেখা যায় না কারণ হিসেবে দুজনে কী বলবেন? রুমা চক্রবর্তী; দেখুন আপনি যা বলছেন তা মানছি। কিন্তু, জানেন তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুর ধারা বদলে গেছে। এখন বলতে গেলে- সবই হয় প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক। তাই তো আগে যা বাঙালীর ঘরে ঘরে দেখা যেত এখন তা প্রতিষ্ঠানিক রূপে আবির্ভূত হয়েছে। তবে সত্য বলতে আগের সেই সামগ্রিকতায় কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে। আর একটা কথা তো জানেনই, রবীন্দ্রসঙ্গীত মূলত গুরুমুখী শিক্ষা। আপনাদের শিল্পী হয়ে ওঠার গল্প জানতে চাই, পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়া অন্য কোন গান করেন কিনা সে সমন্ধেও একটু বলবেন? সৌমিত রায়; ছোট বেলা থেকেই সঙ্গীতচর্চা করে আসছি, আমি মূলত মায়া সেন ঘরানার শিল্পী। উঁনি আমাকে কি দিয়েছেন, আর কি শিখিয়েছেন তা আসলে বলে বোঝাতে পারব না। তাঁর কাছেই বেশি সময় শিখেছি। এছাড়া জটিলেশ্বর মুখার্জি, দ্বীজেন মুখার্জির কাছে বেশ কিছুকাল শিখেছি। আর রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়া অন্য গান খুব একটা করা হয় না। তবে মাঝে মাঝে বিশেষ অনুরোধে দু’একটা দ্বীজেন্দ্রগীতি গেয়ে থাকি। রুমা চক্রবর্তী; আমার প্রথম গান শেখা প-িত সন্তোষ ঘোষের কাছে। এছাড়া অদিতি গুপ্ত আমার খুব কাছের একজন তার কাছে এখনও শিখি। অনবরত শিখেই চলেছি কারণ রবীন্দ্রসঙ্গীত আমার ধ্যান জ্ঞান, এর বাইরে অন্য গান তেমন করা হয় না। বর্তমান রবীন্দ্রসঙ্গীতের সার্বিক অবস্থা আপনারা কিভাবে দেখেন। বিশেষ করে আগে যেমন পহেলা বৈশাখ কিংবা পঁচিশে বৈশাখে নতুন পুরাতন শিল্পীদের গানের অডিও এ্যালবাম বা সিডি বের হতো যা আমাদের এই বাংলাতে এখন খুব একটা নেই বললেই চলে। আপনাদের ওখানেও হয়ত এমনটা স্পষ্ট। এসব বিষয়গুলো আপনারা কিভাবে দেখেন? রুমা চক্রবর্তী; আপনাদের এখানে কি হয় তা আমি বলতে পারব না। তবে আমাদের ওখানে এখনও বিশেষ দিনগুলোতে রবীন্দ্রনাথের গানের সিডি বা ডিভিডি বের হয়। তবে আগের থেকে অবশ্যই সংখ্যায় কম। আর একটা বিষয় তো জানেনই এখন বেশিরভাগ গান ইন্টারনেট বা ইউটিউবে শ্রোতারা শুনে থাকে। পাইরেসির একটা ভয় আছে। অবশ্য, ই-দুনিয়ার প্রভাবের ভাল-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে। তবে এটা বলতে পারি গানের সামগ্রিকতার দিক থেকে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে বিস্তৃতি বেশি। বাংলাদেশে যারা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছেন তাদের কারও গান আপনারা শোনেন? সৌমিত রায়; অবশ্যই শুনি আপনাকে তো আগেই বললাম এখানে যারা গান করেন তারা রবীন্দ্রনাথকে খুব ভালভাবে জেনেশুনে তাকে ধারণ করেন, আর শিল্পী? রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মিতা হক, লাইসা ইসলাম লিসা, অদিতি মহসিন ছাড়াও আরও অনেকে আছেন যাদের নাম এই মুহূর্তে বলতে পারব না, এরা সকলেই চমৎকার গান করেন। বাংলাদেশে এসে আপনার অভিজ্ঞতা? এক কথায় অসাধারণ! ভাষায় অবর্ণনীয়! রুমা চক্রবর্তী আপনার অভিব্যক্তি? আমাদের ভাষা, কথা বলার ধরন এবং সংস্কৃতি সবই এক। এখানে এসে আমার নতুন কোন অভিজ্ঞতা নেই তবে আপনাকে একটা তথ্য দিই, এই যে আমাদের দীর্ঘ সময়ের সম্প্রতি এবং ভালবাসা এই চিন্তা থেকে দুই বাংলার মানুষদের নিয়ে গড়ে তুলেছি ‘আকাশ প্রদীপ’ নামে একটা সম্প্রীতির সংগঠন। কিছুকাল আগে আমরা কলকাতায় অনুষ্ঠান করেছি। সামনেও আমাদের অনুষ্ঠান আছে ঢাকায়। আশা করি ‘আকাশ প্রদীপ’ এর সফলতার মাধ্যমে আমাদের পারস্পারিক ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা আরও এগিয়ে যাবে। ধন্যবাদ।
×