ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া-ভারত

এ্যাডিলেড টেস্ট দিয়ে শুরু আগুন লড়াই

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

এ্যাডিলেড টেস্ট দিয়ে শুরু আগুন লড়াই

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ গত দুই মৌসুমে কোন টেস্ট সিরিজ সামনে রেখে এত আলোচনা আর কখনোই হয়নি। এমনকি ঐতিহ্যের এ্যাশেজেও নয়। কিন্তু কেন? অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতীয়দের পরিসংখ্যানটাও তো হতাশার! মূল কারণ আসলে সময়। একদিকে সুপার বিরাট কোহলির নেতৃত্বে উড়ছে ভারত। টানা দুই বছর র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। অন্যদিকে বহুল আলোচিত বল টেম্পারিং ইস্যুতে বড় দুই তারকা স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নারকে হারিয়ে মাঠের ক্রিকেটে ধুুঁকছে অস্ট্রেলিয়া। অনেকের মতে বোর্ডার-গাভাস্কার চার টেস্টের এ দ্বৈরথে ভারতই ফেবারিট। বাস্তবতার নিরিখে সমীকরণটা এত সহজ নয়। স্মিথ-ওয়ার্নার না থাকলেও জস হ্যাজলউড, মিচেল স্টার্ক আর প্যাট কামিন্সদের নিয়ে স্বাগতিকদের পেস আক্রমণ এক কথায় অসাধারণ। ঘরের মাটিতে ভয়ঙ্কর এই পেসত্রয়ের সামনে অতিথি শিবিরে এক কোহলি ছাড়া আর কেউই পরীক্ষিত নয়। সাদা পোশাকের আভিজাত সিরিজে লড়াইটা তাই হয়ে উঠতে পারে সমানে-সমান। ২০১১-১২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে চার টেস্টের সিরিজে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হয়েছিল ভারত। সবশেষ ২০১৪-১৫ মৌসুমে সমান ম্যাচে হার ২-০ ব্যবধানে। সেবার মধ্যপথে মহেন্দ্র সিং ধোনি সরে দাঁড়ালে নেতৃত্ব পান কোহলি। সিরিজে দল ব্যর্থ হলেও ব্যাট হাতে তিনি ছিলেন যথারীতি দুরন্ত-দুর্বার, ‘দলগতভাবে আমরা গত দুই সফরের ভুলগুলো শুধরে ফেলতে চাইছি।’ বলেন ভারত অধিনায়ক। তিনি আরও যোগ করেন, ‘কোন দলকেই সহজে হারানো যাবে, এমন ভাবার কারণ নেই। যাই ঘটুক না কেন, স্কিল তো থাকছেই বিপক্ষের সঙ্গে। আর আসল তো হলো স্কিল। কথাবার্তা বা আচরণ নয়, স্কিলই তফাত গড়ে দেয়। ঘরের মাঠে দাপট দেখানোর মতো স্কিল অস্ট্রেলিয়ার রয়েছে। আমরা কোন কিছুই ধরে নিচ্ছি না।’ ইশান্ত শর্মা, মোহম্মদ শামি ও জশশ্রীত বুমরাহ, ভুবনেশ্বর কুমার ও উমেশ যাদবদের নিয়ে ভারতের পেস আক্রমণও কিন্তু বেশ শক্তিশালী। অধিনায়ক কোহলি আরও বলেন, ‘বোলাররা এই মুহূর্তে দক্ষতার শীর্ষে রয়েছে বলে মনে করছে। ওরা এই চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত। কন্ডিশন যেমনই হোক না কেন, ওরা নিজেদের মেলে ধরতে তৈরি।’ তবে অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণ সামলে ভাল কিছু করার দায়িত্বটা ব্যাটসম্যানদেরই নিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। দায়িত্ব নিতে হবে টপঅর্ডারে থাকা মুরলি বিজয়, চেতেশ্বর পুজারা, অজিঙ্কা রাহানেদের। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক টিম পেইন বলেছেন বল টেম্পারিং প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘গত দশ মাসে অনেক আলোচনা হয়েছে এবং তা শুনতে শুনতে সবাই ক্লান্ত। অনেক হয়েছে, এখন সময় কাজের। যা ঘটেছে তা থেকে বের হয়ে আসতে দলের ১১ খেলোয়াড়ই তাদের সেরাটা খেলার চেষ্টা করবে।’ সবশেষ নিজ মাঠে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। স্মিথ তিন সেঞ্চুরি করলেও ভারত সিরিজ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারত কখনও সিরিজ জিতে পারেনি এবং স্বাগতিক পেসার মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজেলউড ও প্যাট কামিন্স ঝলসে উঠলে এবারও সমস্যা পড়তে পারে সফরকারীদের। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক আরও বলেন, ‘দলের প্রতিস্পষ্ট বার্তা হচ্ছে মাথা ঠা-া রাখা এবং সর্বশক্তি দিয়ে খেলা। তবে মৌখিক কথার লড়াই কিছুটা হতেই পারে। এটা কেবলমাত্র আপনার সময়, মোমেন্টামকে জাগিয়ে তোলা এবং দলের প্রয়োজনে যা কিছু করা।’ অস্ট্রেলিয়া হয়ে অভিষেক হতে পারে ব্যাটসম্যান মার্কাস হ্যারিসের। এ্যারন ফিঞ্চের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে দেখা যেতে পারে তাকে। সুস্থ হয়ে ওঠা উসমান খাজাকে দেখা যেতে পারে তিন নম্বরে। তবে পিটার হ্যান্ডসকম্ব কিংবা ট্রাভিস হেড মিডলঅর্ডারের শূন্যতা পূরণ করতে পারেন কি না, সেটাই দেখার বিষয়। ১৯৪৭ সাল থেকে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে দল দুটি। যার মধ্যে অনেক ম্যাচই ছিল আগুন ঝড়ানো। তবে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম দশ হাজার রান পূর্ণ করা বোর্ডার ও গাভাস্কারের নামে ১৯৯৬-৯৭ সাল থেকে এ সিরিজের নামকরণ করা হয়েছে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি। মুখোমুখি ৯৪ টেস্টের ৪১টিতে জয় অস্ট্রেলিয়ার, ভারত ২৬টিতে, টাই ১ ও ড্র হয় ২৬ টেস্ট। অস্ট্রেলিয়া ॥ টিম পেইন (অধিনায়ক), জস হ্যাজলউড, মিচেল মার্শ, প্যাট কামিন্স, এ্যারন ফিঞ্চ, পিটার হ্যান্ডকম্ব, মার্কাস হ্যারিস, ট্রাভিস হেড, উসমান খাজা, নাথান লেয়ন, শন মার্শ, পিটার সিডল, মিচেল স্টার্ক, ক্রিস ট্রেমেইন। ভারত ॥ বিরাট কোহলি , মুরালি বিজয়, লোকেশ রাহুল, চেতেশ্বর পুজারা, আজিঙ্কা রাহানে, হনুমা বিহারি, রোহিত শর্মা, ঋষভ পন্থ, পার্থিব প্যাটেল, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবিন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব, মোহাম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মা উমেশ যাদব, জাসপ্রিত বুমরাহ, ভুবনেশ্বর কুমার।
×