ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘পরিশ্রম, ধৈর্য ও বিশ্বাসের ফল পেয়েছি’

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

‘পরিশ্রম, ধৈর্য ও বিশ্বাসের ফল পেয়েছি’

জাহিদুল আলম জয় ॥ ‘ক্যারিয়ারজুড়ে আমি বুঝেছি যে পরিশ্রম, ধৈর্য, অধ্যাবসায়, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা খুব জরুরী। আমি আহামারি কেউ না হলেও নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি একটা প্রবাদ পছন্দ করিÑ সেরা হওয়া কখনোই সহজ নয়। আমার জন্য এটা সহজ ছিল না। যে সুযোগগুলো এসেছিল, সেগুলো কাজে লাগানো জরুরী ছিল। আমি সেটাই করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ আবেগি এই কথামালা সদ্যই মর্যাদার ব্যালন ডি’অর জয় করে ইতিহাস গড়া লুকা মডরিচের। ২০১৮ সালের পুরোটাই স্বর্ণ সাফল্যে ভাস্বর হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের ক্রোয়েশিয়ান তারকা। এক বছরে এমন সাফল্য বোধ হয় মেসি-রোনাল্ডোও পাননি। এরপরও ক্রোয়েট জাদুকরের সাফল্যকে খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না সময়ের তিন সেরা তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, লিওনেল মেসি ও নেইমার। মডরিচকে মেনে নিতে না পারার কারণেই নাকি প্যারিসে ব্যালন ডি’অরের আলো ঝলমলে অনুষ্ঠানে জাননি এ তিন ত্রয়ী! তবে এসবে কান দিচ্ছেন না ৩৩ বছর বয়সী মডরিচ। বরং তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ এখন ফুটবল দুনিয়া। তাক লাগানো সাফল্যের জন্য অনেকের কাছেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মডরিচ। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দিচ্ছেন সাবেক কোচ জিনেদিন জিদানকে। ফরাসী কোচের অনুপ্রেরণাতেই নাকি মাঠে তিনি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী তারকা জিদানের অধীনে রিয়ালের হয়ে টানা তিন চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছেন ক্রোয়েট তারকা। তিন বছরেরও কম সময়ে ক্লাবকে ৯ শিরোপা এনে দেয়ার পর চলতি বছরের মে মাসে গ্যালাক্টিকো শিবির ছেড়ে গেছেন ফরাসী গ্রেট। বিশ্ব ফুটবলে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য জিদানের অনুপ্রেরণাকেই মূল কারণ বলে মনে করেন মডরিচ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু ঘটনা আমি কখনোই ভুলব না। জিনেদিন জিদান যখন রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হলেন, একদিন অনুশীলনের পর তিনি আমাকে তার কক্ষে ডাকলেন। আমাকে একজন খেলোয়াড় হিসেবে কিভাবে দেখছেন তা তিনি বলেছিলেন। আর বলেছিলেন, আমার থেকে তিনি কি প্রত্যাশা করছিলেন। মডরিচ বলেন, তিনি বলেছিলেন, আমি তার জন্য একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। আরও বলেছিলেন যে তিনি আমাকে ভবিষ্যতের ব্যালন ডি’অর জয়ী হিসেবে দেখেন। যখন জিদানের মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও ক্যারিয়ারের অধিকারী কেউ আপনাকে এমন বলে, এটা আপনাকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস দেয়। আমিও সেই আত্মবিশ্বসের পারদ পেয়েছি জিদানের কাছ থেকে। জিদানের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসার পাশাপাশি পরিবার, ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মডরিচ বলেন, আমার এ সাফল্যে যারা সাহায্য করেছেন আমি তাদের ধন্যবাদ দিতে চাই। ধন্যবাদ আমার সতীর্থদের, কোচদের, স্টাফদের এবং রিয়াল মাদ্রিদে আর যারা কাজ করে তাদের সবাইকে। ধন্যবাদ জাতীয় দলকে। জাতীয় দলের সতীর্থদের; যারা আমাদের ভোট দিয়েছেন। ধন্যবাদ আমার পরিবারকে, যেটি আমাকে ব্যক্তি হিসেবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। গর্বিত মডরিচ বলেন, সব সময় স্বপ্ন ছিল। আমি বড় একটা ক্লাবে খেলতে চেয়েছিলাম, শিরোপা জিততে চেয়েছিলাম। ছেলেবেলা থেকে আমি ব্যালন ডি’অর জয়ের স্বপ্ন দেখতাম। এটা জিততে পারা সম্মানের। এই মঞ্চে থাকতে পারা দারুণ আনন্দের। আমার ভেতরে ভাবনা চলছে, ইতিহাসে অসাধারণ যেসব খেলোয়াড় ব্যালন ডি’অর জিতেছেন তাদের অংশ হতে পারার সঙ্গে আমি অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। এই জয়ীদের অংশ হতে পারাটা দারুণ আনন্দের। প্যারিসে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে জাননি মেসি- রোনাল্ডো-নেইমার। সংবাদমাধ্যমের দাবি, ইচ্ছে করেই নাকি জাননি সময়ের অন্যতম সেরা তিন তারকা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার চেয়ে ভিডিও গেমস খেলে সময় কাটানোকেই প্রাধান্য দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার! ফ্রান্সেরই ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনে খেলেন নেইমার। একই শহরে অনুষ্ঠান হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তার উপস্থিতি কামনা করেছিল ফুটবল বিশ্ব। কিন্তু সবাইকে হতাশ করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে দামী এ খেলোয়াড়। তবে শুধু নেইমারই নয়, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না মেসি-রোনাল্ডোও। তিন ত্রয়ীর অনুষ্ঠানে না যাওয়ার কারণ হিসেবে অনেকের দাবি, তারা নাকি মডরিচের সাফল্যকে আমলে নিচ্ছেন না! অনুষ্ঠানে এমবাপে, গ্রিজম্যান, ভারানে, বুফন, হ্যাজার্ডদের মতো তারকারা থাকলেও তিন তারকার কেউ ছিলেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাই রসিকতা চলেছে, মডরিচের হাতে ব্যালন ডি’অর ট্রফি দেখার কোন ইচ্ছা ছিল না বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা তিন ফুটবলারের।
×