ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্রমেই প্রহসনে পরিণত হচ্ছে নির্বাচন ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

ক্রমেই প্রহসনে পরিণত হচ্ছে নির্বাচন ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ক্রমেই প্রহসনে পরিণত হতে চলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণে রেখে আবারও ক্ষমতায় যেতে চায়। সেজন্য বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, নিপীড়নসহ যত রকম কৌশল আছে প্রয়োগ করছে। বুধবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। ফখরুল বলেন, সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে নির্বাচনকে পুরোপুরিভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। একতরফা নির্বাচনের উদ্দেশেই এ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে পদত্যাগ করুন। ফখরুল বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকে বিএনপি নেতাদের নামে মামলা ও গ্রেফতার বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ১ হাজার ৯৭২ নেতা কর্মীর নামে মামলা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছি যেন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালন করে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা তাদের কাজ। কিন্তু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দূরে থাকুক, এখন চেষ্টা করা হচ্ছে কিভাবে আরও খারাপ করা যায়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতি মুহূর্তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে নির্বাচন কমিশন। পরিপত্র জারি করছে, যেগুলো নির্বাচনের সহায়ক নয়। সরকারী দল প্রতিদিন সভা-সমাবেশ করছে কিন্তু ইসি কিছুই করছে না। নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে দেশবাসীকে বলুন যে স্বাধীনভাবে আমরা দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। দায়িত্ব পালন না করতে পারলে পদত্যাগ করা উচিত। অন্যথায় সংবিধান আপনাদের যে দায়িত্ব দিয়েছে সেই দায়িত্ব নিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। কারণ, দেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। ভয়াবহ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে চলছি আমরা- হাফিজ ॥ বিএনপি যাতে নির্বাচন করতে না পরে সেজন্য চাপ ছিল অভিযোগ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ভয়াবহ একটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে চলছি আমরা। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। হাফিজ বলেন, দেশ ধীরে ধীরে একটি প্রহসনের নির্বাচনের দিকে এগিয়ে চলেছে। এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না তা প্রমাণের জন্যই আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। এটা আমাদের আন্দোলনের একটা অংশ। তিনি বলেন, আমি ভোলা-৩ আসনের একজন প্রার্থী, এ এলাকা থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। আসনটি সহিংসতার আখড়া। ৩০০ আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুন, হত্যা, জখম, নির্বাচনী সহিংসতা এখানে হয়। কিন্তু যারা এ সকল ঘটনা ঘটায় তারা এতই কৌশলী যে এসব ঘটনা পত্র-পত্রিকায় আসে না। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই, সরকার থেকেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বরং আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। হাফিজ বলেন, ৯ তারিখের পর উন্মুক্ত হবে নির্বাচনী প্রচার। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা এলাকায় যেতে পারছে না। আমরা সিইসিকে বিষয়টি জানানোর পরও কোন প্রতিকার পাইনি। তিনি বলেন, দেশ একটা পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে সিইসিকে জানিয়ে দিয়েছেন কোন ট্রান্সফার চলবে না। প্রতিটি নির্বাচনের আগে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য ক্যাম্পেন চলে, কিন্তু এবার তার নাম গন্ধ নেই। তফসিল ঘোষণার আগে বৈধ অস্ত্রধারীদের অস্ত্র জমা দিতে হয়। এই ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি এখন পুনরায় বিবেচনার সময় এসেছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে আমরা অনেক কর্মী হারাব। অনেকের হাত পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, অনেকে জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে থাকবেন। হাফিজ বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে সকল দাবি দাওয়া দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনের কাছে তার একটিও মানা হয়নি। তারপরও আমরা কেন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। নেতাকর্মীদের কাছে এখন এটি চিন্তার বিষয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম প্রমুখ। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সারাদেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের যে তালিকা সরবরাহ করছে সেগুলোই ইউএনওদের মানতে বাধ্য করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় পুরো পরিস্থিতি বদলে যাবে। তবে সুবিধাভোগী কিছু কর্মকর্তা ছাড়া মানুষের অধিকারের বিষয়ে জনপ্রশাসন ও পুলিশের সবাই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, খোলস ভেঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আওয়ামী চেহারা ততই উন্মোচিত হচ্ছে।
×