ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মনোনয়ন ফিরে পেতে বেগম জিয়ার আপীল

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

মনোনয়ন ফিরে পেতে বেগম জিয়ার আপীল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেষ দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপীল করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বগুড়া-৬ ও ৭ এবং ফেনী-১ তিন আসনেই তার পক্ষে কমিশনে আপীল দায়ের করেন তিন আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার। বুধবার দুপুরে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে খালেদা জিয়ার পক্ষে কমিশন সচিবের কাছে আপীল দায়ের করা হয়। শেষ দিনে খালেদা জিয়া ছাড়াও আর ২২২ প্রার্থী মনোনয়ন ফিরে পেতে কমিশনে আবেদন করেছেন। এ নিয়ে গত ৩ দিনে ৫৪৩ আবেদন ইসিতে জমা পড়েছে। গত ২ ডিসেম্বর ৭৮৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এদিকে প্রার্থিতা ফিরে পেতে যেসব প্রার্থী কমিশনে আপীল করেছেন তাদের বিষয়ে শুনানি আজ বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হচ্ছে। আগামী শনিবারের মধ্যে এসব প্রার্থীর আপীল নিষ্পত্তি সম্পন্ন করবে কমিশন। এজন্য প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে শুনানি হবে। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার ১ থেকে ১৬০ জনের আপীল নিষ্পত্তি হবে। শুক্রবার নিষ্পত্তি হবে ১৬১ থেকে ৩১০ জনের এবং শনিবার ৩১১ থেকে ৫৪৩ জনের আপীল নিষ্পত্তি করা হবে। নিষ্পত্তিতে কমিশন সন্তুষ্ট না হলে আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে প্রার্থীদের। আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ওই দিনই চূড়ান্ত হবে এবারের নির্বাচনে কত প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন। ১০ তারিখে প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচারে নামবেন প্রার্থীরা। বুধবার ইসিতে আপীলের শেষ দিনে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীও প্রার্থিতা ফিরে পেতে আবেদন করেছেন। কমিশন জানিয়েছে আপীল নিষ্পত্তিতে কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হবে না। খালেদা জিয়ার পক্ষে আপীল শেষে আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। যদি নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে বিচার করে, তাহলে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বৈধ হবে বলে আমরা আশা করছি। জাতি একটা অংশ গ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন প্রহসনের হবে উল্লেখ করেন। গত ২৮ নবেম্বর সারাদেশে তিনশ আসনে এমপি পদপ্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ২ ডিসেম্বর বাছাইকালে খালেদা জিয়াসহ হেভিওয়েট প্রার্থীদেরও মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়া হয় ঋণ খেলাপী হওয়া ও আদালতে ২ বছরের বেশি সাজা হওয়াসহ নানা কারণে। যদিও আদালতে আগেই এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে ২ বছরের বেশি দ-িতরা নির্বাচন করতে পারবে না। খালেদা জিয়া দুই মামলায় ১৭ বছর সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে জেলে রয়েছেন। ফলে কমিশনের আপীলেও খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইসির আপীল নিষ্পত্তিতে যারা সন্তুষ্ট হতে পারবেন না তারা শেষ ভরসা হিসেবে আদালতে যেতে পারবেন। তবে আদালত থেকে আপীল খারিজ হয়ে গেলে তিনি আর নির্বাচন করতে পারবেন না। রিটার্নিং কর্মকর্তারা যাদের প্রার্থিতা বাতিল করে দিয়েছে তাদের মধ্যে ঋণ খেলাপী ও আদালতে দ-প্রাপ্তরা যেমন রয়েছেন, তেমনি মনোনয়নপত্রে ভুল, তথ্য গোপন ও অসম্পূর্ণ মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার কারণও রয়েছে। তবে ঋণ খেলাপীর কারণেই সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে বলে তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে। এছাড়া ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনযুক্ত স্বাক্ষর জমা না দেয়ায় বড় একটি অংশের প্রার্থিতা বাতিল করে দিয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তারা। বাতিল হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপির প্রার্থী সংখ্যাই বেশি। তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ঋণ খেলাপী ছাড়া অন্য যেসব কারণে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে তার মধ্যে আরও রয়েছে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত, হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকা, তথ্য প্রমাণ যুক্ত না করা, প্রার্থী স্বাক্ষর না করা, রিটার্নের কপি দাখিল না করা, স্থানীয় সরকার পরিষদের পদ থেকে পদত্যাগ না করা, অসম্পূর্ণ, তথ্য, ঋণ খেলাপী, বিল খেলাপী, দলীয় মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর ও নমুনা স্বাক্ষরে মিল না থাকা, হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকা, সরকারী চাকরি থেকে অবসরের পর ৩ বছর পার না হওয়ায়, ভোটারের স্বাক্ষর মিল না থাকা, দলীয় প্রার্থী হয়েও প্রত্যয়ন না থাকা, ২ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হওয়া, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের অনুলিপি না দেয়া, হলফনামায় স্বাক্ষরের পাশে তারিখ উল্লেখ না করা, প্রস্তাবক-সমর্থক-প্রার্থীর ভোটার নম্বর সঠিক না থাকা, হলফনামা দাখিল না করা, ভোটের জন্য ব্যাংক এ্যাকাউন্ট না খোলা, প্রার্থীর আসনে সমর্থকের ভোটার তাকিলায় নাম না থাকা ইত্যাদি কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়া হয়েছে। তবে কমিশনের আপীলে এর মধ্যে ছোটখাটো ভুলে জন্য প্রার্থিতা ফিরে পেলেও বড় ভুলের ক্ষেত্রে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানা গেছে। ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই করে ২ হাজার ২৭৯টি বৈধ ও ৭৮৬টি অবৈধ বলে ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এর মধ্যে-বিএনপির ১৪১টি, আওয়ামী লীগের ৩টি এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) ৩৮টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৩৮৪টি। ৩৯টি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে ৩ হাজার ৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা পড়ে মোট ২ হাজার ৫৬৭টি ও স্বতন্ত্র ৪৯৮টি। বাছাইতে ৭৮৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এর মধ্যে প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইসিতে আবেদন জানিয়েছে ৫৩৪ জন। মির্জা আব্বাসের মনোনয়নপত্র বাতিলে মেননের আবেদন ॥ এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জ আব্বাসের মনোনয়নপত্র বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেমন। বুধবার দুপুরে তার পক্ষে জিয়াদ আল মালুম ইসিতে এই আবেদন জানান। ঢাকা ৮ আসনে নির্বাচনের জন্য মির্জা আব্বাসে মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। একই আসনে মহাজেটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন রাশেদ খান মেনন। জিয়াদ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, হলফনামায় তথ্য গোপন করার অভিযোগে মির্জা আব্বাসের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। মির্জা আব্বাস হলফনামায় তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ঋণখেলাপী এটা গোপন করেছেন। এছাড়া মির্জা আব্বাস হলফনামায় লিখেছেন, তার স্ত্রী তার কাছে ৭৩ লাখ টাকার বেশি পাবেন। আবার স্ত্রী লিখেছেন, তিনি তার স্বামীর কাছে ১ কোটি টাকা পাবেন। ১১টি দলের ধানের শীষে নির্বাচন ॥ ইসিতে বিএনপির চিঠি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও কাদের সিদ্দিকীর বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ছাড়া জোটের ১১টি দল নির্বাচন করবে। বুধবার বিকেলে বিএনপির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি কমিশনে পৌঁছে দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। মির্জা ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে গত ১১ নবেম্বর দেয়া চিঠিতে মোট আটটি দল ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে বলে জানানো হয়েছিল। তবে ইতোমধ্যে আরও তিনটি দল এই আট দলের সঙ্গে যৌথভাবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে বলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি (ইসি) অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো। চিঠিতে উল্লেখিত ১১টি দলের মধ্যে রয়েছে গণ ফোরাম, জেএসডি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপি, খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, জাগপা, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। এদিকে বিএনপির অপর এক চিঠিতে তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে অব্যাহত রয়েছে এমন অভিযোগ করা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। বিএনপির চিঠিতে মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতা-কর্মী, সমর্থকদের গ্রেফতার, হয়রানি বন্ধে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিলেও বাস্তবতা ভিন্ন। তফসিল ঘোষণার পরও প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই নেতাকর্মীদের আটক করা হচ্ছে। এমনকি জামিন নিয়ে ফেরার পথে অভিনব ও বানোয়াট অজুহাতে ফের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
×