ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের অনুষ্ঠানে দুই দলের নেতারা

শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিপরীতমুখী অবস্থানে। এমনকি এ দুই দলের নেতাদের মধ্যে মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। এমন এক পরিস্থিতিতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘শান্তি জিতলে জিতবে দেশ’-এ স্লোগান নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়ে উৎসাহিত করতে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ‘শান্তিতে বিজয়’ ক্যাম্পেইন শুরু করে। এতে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা এক মঞ্চে বসে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে অবদান রাখার জন্য বুধবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ৪০ নেতাকে সম্মাননা প্রদান করে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। তাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্লিন কোয়ান। তিন দলের সিনিয়র নেতারাই অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে পরস্পরের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলার পাশাপাশি মঞ্চের বক্তব্যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অঙ্গীকার করেন। তারা বলেন, দেশের গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বার্থেই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রয়োজন। এ সময় অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সুপারিশ তুলে ধরা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে ৮ দফা ও বিএনপির পক্ষ থেকে তৃণমূল থেকে আসা ৭ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। আর ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা তুলে ধরে সবাইকে তা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে বিএনপির তৃণমূল থেকে উঠে আসা ৭ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দফতর সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক। এই ৭ দফার মধ্যে রয়েছে- শান্তির জন্য সকল দলের প্রার্থীদের শপথ গ্রহণ, সকল দলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সহিংসতা না করার জন্য সকল দলের কর্মীদের প্রতি কেন্দ্রের নির্দেশ, নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে প্রচার চালানো, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের একে অপরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত, সকল প্রতিদ্বন্দ্বীর সহাবস্থানের জন্য নিরপেক্ষ কমিটি গঠন এবং কেউ কারও কর্মসূচীতে বাধা না দেয়া ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য না দেয়া। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে উঠে আসা ৮ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- ভোট কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রাখতে কর্মীদের নির্দেশ, বিরোধী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার না করা, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার উৎসাহ প্রদান, নির্বাচনী প্রচারে নারীদের দায়িত্ব প্রদান, জয়-পরাজয় যা হোক ফলাফল মেনে নেয়া, ইশতেহারে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অঙ্গীকার, প্রতিটি কেন্দ্রে দল থেকে মনিটরিং টিম রাখা এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সকল দলের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা। দলের তৃণমূল নেতা তন্ময় এ ৮ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেন, দেশ আজ যে উচ্চতায় এসেছে তা আরও অনেক দূর এগিয়ে নিতে সবাইকে কাজ করতে হবে। এ জন্য আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে করতে হবে। এবারের মতো এমন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আগে আর হয়নি। তাই এ নির্বাচন হবে দেশের জন্য মাইলফলক। এ নির্বাচনকে আমরা সবাই মিলে শান্তিপূর্ণভাবে করব। তবে এ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অঙ্গীকার করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমরা শান্তি চাই। তবে আমরা কবরের শান্তি চাই না। দেশে সুবিচার ও সুশাসন না থাকলে শান্তি থাকে না। যদি একটি দল কেন্দ্র দখল করে তাহলে কি করে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। তাই সব দল মিলে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে চাইলেই তা হবে। আমরা চাই এবারের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক। সকল দলের জন্য সমান সুযোগ থাকলে নির্বাচনেও সবার জন্য শান্তি থাকবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি বন্ধ না হলে দেশে শান্তি আসবে না। তাই সকল রাজনৈতিক দল একসঙ্গে শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে। দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের স্বার্থেই তা করতে হবে। বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের উন্নয়নে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে হবে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা সরকারী ও বিরোধী দলের নেতারা নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য একত্রিত হয়েছি। দেশের সব জায়গায় যদি আজকের অনুষ্ঠানের মতো শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকত তাহলে দেশ অনেক এগিয়ে যেত। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বাহক নির্বাচন। তাই এ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করে জাতি হিসেবে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি আশা করছি নির্বাচনী প্রচারকালে সারাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে। তবে সমাজে শান্তি ও নির্বাচনে সবার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে সবাইকে সহযোগিতা করবে। তাই আশা করি শান্তিপূর্ণভাবে এবারের নির্বাচনের পর দেশে স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াস সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, দেশে এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। তাই এবারের নির্বাচনও শান্তিপূর্ণ হবে। এবারের নির্বাচনে যাতে কেউ সহিংসতা করতে না পারে সে জন্য সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। এ নির্বাচনের পর দেশের সকল সমস্যা সমাধান করতে পারব বলে আমরা আশাবাদী। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টি সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। জাতীয় পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পর সম্মিলিতভাবে সবাই মিলেমিশে কাজ করলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। দেশ আরও এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, নারী উন্নয়নে দেশ অনেক অগ্রসর হয়েছে। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্লিন কোয়ান বলেন, নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের একটি উৎসব। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। আমরা চাই বাংলাদেশের সকল দল নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবে। এর মাধ্যমে তারা দেশকে আরও এগিয়ে নেবে। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক র‌্যানডেল অরসন বলেন, আসন্ন নির্বাচনে শান্তি জিতলে জিতবে বাংলাদেশ। আমরা আশা করি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য অংশগ্রহণকারী সকল দল সার্বিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবে। আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ এলাকার তৃণমূল নেতা সুমন চন্দ্র ঘোষ বলেন, আমরা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ফেলো হিসেবে নবেম্বর মাসের ২৩, ২৪ ও ২৫ তারিখ ময়মনসিংহ এলাকার ১৩টি নির্বাচনী আসনে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে কাজ করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি এবারের নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে। আর শান্তি জিতলে জিতবে দেশ। অনুষ্ঠানে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য দেশবাসীর ভাবনা শীর্ষক একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এতে বলা হয় সব মানুষের প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। ‘শান্তি জিতলে জিতবে দেশ, সফল হবে বাংলাদেশ’। অনুষ্ঠানে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে অবদান রাখার জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির যে ৪০ জন নেতাকে সম্মাননা প্রদান করা হয় তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাহউদ্দিন সিরাজ, একেএম এনামুল হক শামীম, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শামা ওবায়েদ, শিরিন সুলতানা, এবিএম মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, নেতা রাশেদা বেগম হীরা, জেলেন জেরিন খান, বিলকিস জাহান, নেওয়াজ হালিমা আরলি প্রমুখ। তাদের সবাইকে সম্মাননা ক্রেস্ট দেয়া হয়। অবশ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ কিছু নেতা অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকায় তাদের ক্রেস্টগুলো বাহকের হাতে তুলে দেয়া হয়।
×