ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খেলাপী ঋণ ৯৯ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

খেলাপী ঋণ ৯৯ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকিং খাতে বিপজ্জনক হারে বাড়ছে খেলাপী ঋণ। বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েও খেলাপী ঋণের লাগাম টানা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে খেলাপী হয়ে গেছে ৯৯ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। মূল হিসাব থেকে আলাদা করা (অবলোপন) ঋণ, বিশেষ বিবেচনায় নিয়মিত করা ঋণসহ খেলাপী ঋণের পরিমাণ দুই থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে খেলাপী ঋণ বাড়তে থাকলে ব্যাংকিং খাত ভেঙ্গে পড়বে। এরই মধ্যে খেলাপীর কারণে ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে বিদেশেও ব্যাংকিং খাত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপীর কারণে বিদেশী ব্যাংকে এলসি খুলতে বাড়তি চার্জ দিতে হচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ব্যবসার খরচ। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, প্রতি প্রান্তিকে খেলাপী ঋণ বাড়ছে। সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সরকার উদ্বিগ্ন নয়। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংকিং খাত পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে খেলাপী হয়ে গেছে ৯৯ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। গত জুন পর্যন্ত খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। একে খুবই উদ্বেগজনক বলেছেন অর্থনীতিবিদরা। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে ১ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৮ হাজার কোটি টাকা খেলাপী হয়েছে, মোট ঋণের প্রায় ২৩ শতাংশ। একই সময়ে বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৬ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৩ হাজার কোটি টাকা খেলাপী হয়েছে, যা মোট ঋণের ৬ দশমিক ৫৮ ভাগ। বিদেশী ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খেলাপী হয়েছে, যা বিতরণ করা ঋণের ৭ ভাগ। বিশেষায়িত দুই ব্যাংক ২৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। তার ৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপী হয়ে গেছে, যা বিতরণ ঋণের ২১ ভাগ। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত জুন পর্যন্ত ৮৪ হাজার কোটি টাকার খেলাপী ঋণ পুনর্তফসিল করেছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২২ নবেম্বর পর্যন্ত ব্যাপক হারে ও নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট নিয়ে খেলাপী ঋণ পুনর্তফসিল করা হয়েছে। সে কারণে বর্তমানে পুনর্তফসিলকৃত ঋণের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়ানোর আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। এছাড়া ঋণ পুনর্গঠন হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় খুবই সামান্য। ঋণ অবলোপন আছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রকৃত খেলাপী বা মন্দ ঋণ প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপী ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বাড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে, এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকে জালিয়াতি হওয়ায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রায় সবটাই খেলাপীতে পরিণত হয়েছে। জনতা ব্যাংকে বড় ধরনের জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে। এসব টাকাও এখন খেলাপীতে পরিণত হচ্ছে। অন্য দুটি ব্যাংকেও খেলাপী ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বছরের শুরুর দিক থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপী ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ডিসেম্বরে এসে এর পরিমাণ কমে যায়। তখন ব্যাংকগুলো নিজ নিজ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য খেলাপী ঋণ আদায় বা নবায়ন করে এর পরিমাণ কমাতে থাকে। এবার নির্বাচনের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতা চলছে। এ কারণে ঋণ আদায় হয়েছে খুবই কম।
×