ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক পেশা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক পেশা

পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গত বছর সারাবিশ্বে নিহত হয়েছেন ৭৮ সাংবাদিক। চলতি বছর সংখ্যাটি আরও বেড়েছে। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট নামে (সিপিজে) একটি এনজিও এবং মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল ১৯-এর অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গার্ডিয়ান। মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল ১৯-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কর্তৃত্ববাদী সরকার এবং ইন্টারনেটের ওপর সেন্সরশিপ আরোপের প্রবণতা সাংবাদিকদের কাজের ওপর দ্বিগুণ চাপ তৈরি করেছে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে ৩২৬ সাংবাদিক কারাবন্দী হয়েছেন। এই সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সারাবিশ্বে যত সংবাদিককে আটক করা হয়েছে তার অর্ধেকের বেশি ঘটনা ঘটেছে তুরস্ক, চীন ও মিসরে। আর্টিকেল ১৯-এর নির্বাহী পরিচালক টমাস হিউজ বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার মূল্য এবং তথ্যের মূল্য এখন অনেক বেশি। বেড়েছে হত্যা, নিখোঁজ ও বন্দী হওয়ার আশঙ্কা। যার যার কমিউনিটির মধ্যেও আশঙ্কা বেড়েছে। অর্থবহ আলোচনা এবং মতবিনিময়ের ক্ষেত্রটিও সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। সচেতন নাগরিক, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং আইনের শাসন এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, ‘মিডিয়ার প্রতি শত্রুতামূলক মনোভাব এখন সারাবিশ্বে একটি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। হিউজ বলেন, দেশে দেশে এখন ‘শক্তিশালী’ ও পপুলিস্ট নেতাদের উদ্ভব ঘটছে। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মিডিয়ার প্রতি বিষোদগার করছেন। মিডিয়া কর্মীরা শুধু পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পূর্ব ইউরোপের অবস্থা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। মিডিয়াকে কটাক্ষ করা এখন ট্রাম্পের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। অক্টোবর মাসে তিনি তার রিপাবলিকান পার্টির একজন সদস্যের গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হেনস্থার প্রশংসা করেছিলেন। হাঙ্গেরি থেকে ফিরিপিন্স এবং আলবেনিয়া থেকে কানাডা কোথাও সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ নয়। আর্টিকেল ১৯ আরও জানিয়েছে, ‘সাংবাদিকদের হুমকি দেয়ার বাস্তব প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারী কর্মকর্তারা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছেন। এক বছরের সামান্য বেশি কিছু সময়ের ঘটনা প্রবাহের দিকে তাকালে দেখা যাবে বুলগেরিয়া, স্লোভাকিয়া, রাশিয়া ও মাল্টায় হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। সিপিজের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালটি সাংবাদিকদের জন্য ভিন্ন রকম কিছু ছিল না। বরং এ বছর বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। যুদ্ধ অথবা বিপজ্জনক জায়গার সংবাদ কভার করাসহ বিভিন্নভাবে তাদের ওপর ঝুঁকি বেড়েছে। চলতি বছর ৭৮ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যা সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তৈরি করে। খাশোগি ২ অক্টোবরে ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত প্রয়োজন অফিসিয়াল কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে আর ফেরেননি। পরে জানা যায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার নেপথ্য নির্দেশ দাতা হিসেবে সৌদি যুবরাজ বিন সালমানের নাম আসে। সৌদি আরব একে হত্যাকা- হিসেবে স্বীকার করলেও যুবরাজের সংশ্লিষ্টতার কথা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে। আর্টিকেল ১৯ বলেছে, সারাবিশ্বে সাংবাদিকদের ওপর যত হামলার ঘটনা ঘটে তার সব বিবরণ লিখে রাখা হয় না। বিশেষ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো প্রায় সময় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে চাপা পড়ে যায়।
×