ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিবন্ধী কল্যাণে

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

প্রতিবন্ধী কল্যাণে

সমাজের কেউই অবহেলিত নয়। সবারই রয়েছে মৌলিক অধিকার এবং তার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারের। সমাজের পশ্চাৎপদ বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা মূল ¯্রােতের সঙ্গে সমন্বিত না হলে সমাজ এগিয়ে যেতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য বলেছেন, দেশের কোন শ্রেণীর মানুষ অবহেলিত থাকবে না। সকলকেই মনে করতে হবে, সকলেই আমাদের আপনজন। তাদের কীভাবে আপন করে নেয়া যায়, সেই মানসিকতা যেন সকলের মাঝে গড়ে ওঠে, সেটাই আমরা চাই। এ দেশের বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিবন্ধীরা নিগৃহীত হয়ে আসছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরিবাকরি না পাওয়া, এমনকি শিক্ষার সুযোগও পায় না। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষায় এগিয়ে আসেন। তাদের সমাজ জীবনের মূলধারায় উঠিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা নেন। শেখ হাসিনার অবশ্য উপলব্ধি এই যে, মানুষ হিসেবে প্রতিবন্ধীদের প্রাপ্য অধিকার প্রদান করা সঙ্গত। এমনকি তাদের ভেতরে যে শক্তি আছে, তাকে কাজে লাগানোই হোক লক্ষ্য। প্রতিবন্ধীদের জন্য কল্যাণ ফাউন্ডেশন তৈরি এবং তাদের মধ্যে যারা খেলাধুলায় সম্পৃক্ত, তাদের বিশেষ অলিম্পিকে সম্পৃক্ত করাসহ নানা ধরনের সুযোগ শেখ হাসিনার সরকারই করে দিয়েছে। তারা স্বর্ণ জয় করে আনছে। এর মাধ্যমেই বোঝা যায় তাদের সুপ্ত প্রতিভা। সে হিসেবে দেশের অন্যান্য কাজেও তারা সক্রিয় হতে পারে। এটা তো বাস্তব যে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশের অবহেলিত জনগোষ্ঠী যারা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবন্ধীদের ভেতর যে মেধা ও শক্তি রয়েছে, তাকে কাজে লাগানোর বিষয়টি সহজসাধ্য নয়। কেননা, এদের মধ্যে কর্মক্ষমতা জাগিয়ে তোলা না গেলে কোন প্রণোদনাই কাজে দেবে না। শুধু দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের যোগান দিলেই তো আর সব সমস্যার সমাধান হয় না। প্রয়োজন, তাদের মধ্যে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়া। যাতে সেই আলোয় পথ চিনে নিতে পারে। সব থেকে বড় কথা যে, সমাজের সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতিবন্ধীদেরও একই সঙ্গে চলাফেরা ও তাদের অধিকার যেন প্রতিষ্ঠা হয় সে কাজটি সুচারুরূপে করা গেলে তারাও মানুষ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে প্রেরণা পাবে। এদেশে প্রতিবন্ধীদের নিগৃহীত করা হয় নানাভাবে। পাগল, মাথা খারাপ, জিনের আছর ধরা ইত্যাকারভাবে চিহ্নিত করে উৎপীড়ন করা হয়। প্রতিবন্ধী দেখলেই মানুষ ‘দূর দূর, ছেই ছেই’ করে তাড়িয়ে দেয় এখনও। শুধু সমাজ নয়, পরিবারেও প্রতিবন্ধীরা অমর্যাদা, অবহেলা, ঔদাসীন্যের শিকার যুগের পর যুগ ধরে। অবহেলা, অপমান, লাঞ্ছনা সয়ে সয়ে প্রতিবন্ধীদের অসহায়ত্বকে ধারণ করে গুটিসুটি মেরে কোনভাবে বেঁচে থাকতে হয়। কিন্তু কেউ কোনদিন খুঁজেও দেখেনি কিংবা মনেও আনেনি যে, এদের ভেতরেও রয়েছে মেধা এবং শক্তি। আর তা কাজে লাগানো যায়। এই প্রতিবন্ধীদের অধিকারের কথা এদেশে অনেকেই ভেবেছেন। কিন্তু প্রথম কার্যকরভাবে তাদের সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষায় তার সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে তাদের জীবনে। যে কারণে এই প্রতিবন্ধীদের মধ্য থেকে ক্রীড়াঙ্গনে স্বর্ণজয় করার ঘটনা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। স্পষ্ট হয়েছে, তারাও প্রতিভাবান। কোটার যে নয়া নীতিমালা করা হচ্ছে, তাতে প্রতিবন্ধীদের জন্য চাকরির অধিকার রাখা হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের যাতায়াতের জন্য সুযোগ-সুবিধা রাখা হচ্ছে। বিশেষ টয়লেটের ব্যবস্থাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্য সব স্থানে তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা রক্ষা করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রায় ১৬ লাখের ওপর প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন স্তরে প্রায় দুই কোটি চার লাখ শিক্ষার্থীকে ভাতা দেয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩’ এবং ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩’ নামে পৃথক দুটি আইন পাস করেছে। ইতোমধ্যে এর বিধিবিধানও প্রণয়ন করা হয়েছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের ব্রেইল বই দেয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনার মতো আমরাও চাই দেশের কোন প্রতিবন্ধী যেন না হয় অবহেলিত।
×