ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চীন-আমেরিকা থেকে সমান দূরত্বে থাকতে চায় হ্যানয়

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮

চীন-আমেরিকা থেকে সমান দূরত্বে থাকতে চায় হ্যানয়

ভিয়েতনামের বিগত প্রেসিডেন্ট গত সেপ্টেম্বর মাসে মৃত্যুবরণ করার পর সে দেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নগুয়েন মু ফু ২৩ অক্টোবর প্রেসিডেন্টেরও দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আইন পরিষদের সদস্যরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সেটা অনুমোদন করেন। ১৯৬০ এর দশকে ভিয়েতনামী নেতা হোচি মিনের পর তিনিই হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি একই সঙ্গে এই দুটি পদ ধারণ করলেন। ট্রং পার্টির শুধু প্রধান ব্যক্তিই নন, তিনি দলের একজন তাত্ত্বিকও। চীনের কমিউনিস্ট নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব উত্তরোত্তর বাড়ছে। সে তুলনায় মার্কিন প্রভাব কমেছে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে টিপিপি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আরও কমেছে। এক্ষেত্রে ভিয়েতনাম চীনের নেতা শি জিন পিংয়ের বিশ্বে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণের উদ্দেশ্যে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করছে। তবে ট্রাম্পের ‘আমেরিকাই প্রথম’ এই পররাষ্ট্রনীতির কারণে আঞ্চলিক মৈত্রী দুর্বল হয়ে পড়েছে। চীনের মোকাবেলা করা ভিয়েতনামের পক্ষে আগে যতটা কঠিন ছিল ট্রাম্পের আমলে আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে। ভিয়েতনামের অর্থনীতি এশিয়ার অন্যতম সেরা অর্থনীতি। তার পরও দেশটি চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ওপর দারুণভাবে নির্ভরশীল। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছর চীনের সঙ্গে ভিয়েতনামের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২২৭৬ কোটি ডলার। টিপিপি থাকলে অতটা হতো না। তথাপি হাজার হাজার বছর পদানত থাকার পর চীনভীতি ভিয়েতনামী সমাজের অধিকাংশ মানুষকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। দুটি দেশ সর্বশেষ ১৯৭৯ সালে সীমান্ত যুদ্ধ লড়েছিল। এদিকে চীন যত বেশি নিজের শক্তি জাহির করছে তার পাশাপাশি ভিয়েতনামীদের মধ্যেও চীনের প্রতি বৈরিতা বাড়ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে পরস্পরবিরোধী দাবি নিয়ে। এ অবস্থায় আমেরিকার চীন বিরোধী স্ট্র্যাটেজিতে ভিয়েতনামের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনের সুযোগ আছে। চীনের সঙ্গে ভিয়েতনামের সম্পর্কের মধ্যে ব্যাহত একটা স্ববিরোধিতা আছে। ভিয়েতনামী নেতারা বেজিংয়ের কর্তৃত্ববাদী শাসনকে দেশ শাসনের অনুকরণযোগ্য মডেল হিসেবে দেখে। ভিয়েতনাম পাশ্চাত্যবান্ধব একটি হাইটেক কেন্দ্র হিসেবে নতুন করে পরিচিতি লাভ করতে যাচ্ছে। হ্যানয়ের কেন্দ্রস্থলে গড়ে উঠেছে কয়েক ডজন কোম্পানি সেখানে ল্যাপটপ থেকে শুরু করে অনেক আইটি সামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে। এই এলাকাটিকে বলা হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সিলিকন ভ্যালি সেখান থেকে প্রোগ্রামারদের যুক্তরাষ্ট্র বা সিঙ্গাপুরের তুলনায় এক-পশ্চিমাংশ বেতনে নিয়োগ করা যায়। ভিয়েতনাম দেশটি গত বছর সরাসরি ৩৬৮৮ কোটি ডলারের বৈদেশিক বিনিয়োগ মূলধন আকৃষ্ট করেছিল যা ছিল পূর্ববর্তী বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেশি। তবে বিদেশী টেক কোম্পানিগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ কঠোরতর করার জন্য আগামী বছর দেশটিতে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন চালু হবে। এটা হবে ইতোমধ্যে চীনে প্রবর্তিত একটি আইনের প্রতিচ্ছবি। এ থেকে বোঝা যায় যে ভিয়েতনামী নেতারা প্রায়শই বেজিংয়ের কর্তৃত্ববাদী পথ অনুসরণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রং চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তিনি বিনিময় কর্মসূচীর অধীনে তরুণ ক্যাডারদের চীনে পাঠিয়েছেন এবং শি জিন পিকে অনুকরণ করে স্বদেশে ব্যাপক দুর্নীতি দমন অভিযান চালিয়েছেন যে অভিযানে ব্যবসায়ী মহল, সামরিক বাহিনী এমনকি খোদ কমিউন্টি পার্টিও ভেতরকার রুই- কাতলারা ধরা পড়েছে। বিরুদ্ধবাদীদের প্রতি ভিয়েতনামের নীতিও চীনের অনুরূপ। গত জানুয়ারি পর্যন্ত কমপক্ষে ১১৯ জন বিবেকের বন্দী জেলে রয়েছে। ভিয়েতনামের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে চীনা ফার্মগুলোর প্রাধান্য রয়েছে। এত কিছুর পরও নিজের সার্বভৌমত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জকে ভিয়েতনাম কখনই সহজভাবে নেয়নি। দক্ষিণ চীন সাগর অর্থাৎ সেখান দিয়ে যাবতীয় সমুদ্র বাণিজ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিচালিত হয়ে থাকে সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ পাথুরে দ্বীপগুলোতে চীনের সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে ভিয়েতনাম বিশেষভাবে সোচ্চার। চীনের প্রতি আমেরিকার কঠোর নীতিকে ভিয়েতনাম স্বাগত জানায়। তাই বলে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র এই দেশটি কখনই হতে পারবে না বলেই মনে হয়। এর কারণ ভিয়েতনামের পররাষ্ট্রনীতি তিনটি মৌলিক শর্ত দ্বারা পরিচালিত। প্রথমত কোন সামরিক জোটে আবদ্ধ হওয়া নয়, ভিয়েতনামে কোন বিদেশী ঘাঁটি হতে দেয়া নয় এবং নিজের প্রতীক্ষার জন্য অন্য কোন দেশের ওপর নির্ভরশীলতা নয়। তাই দেখা যায় যে স্থায়ুযুদ্ধের পর থেকে দেশটা প্রধানত রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনছে। গত সেপ্টেম্বরে ভিয়েতনাম এক শ’ কোটি ডলার মূল্যের পাঁচ মিশালী রুশ অস্ত্রের ফরমায়েস দিয়েছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×