ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোনাল্ডো-মেসি যুগের অবসান ঘটালেন মডরিচ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮

রোনাল্ডো-মেসি যুগের অবসান ঘটালেন মডরিচ

জাহিদুল আলম জয় ॥ সেই ২০০৭ সালে সর্বশেষ ব্যালন ডি’অর ও ফিফা বর্ষসেরা হয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার কাকা। এরপর গত ১০ বছর এই গৌরবময় এ্যাওয়ার্ড দু’টি জিতেছেন শুধুই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও লিওনেল মেসি। দু’জনে পাঁচবার করে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। অবশেষে দুই সুপারস্টারের দীর্ঘ রাজত্বের অবসান ঘটেছে। কাকার পর দুই তারকার বাইরে আগেই ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার লুকা মডরিচ। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন ৩৩ বছর বয়সী এ মিডফিল্ডার। এর আগে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় এবং উয়েফারও বর্ষসরো হন মডরিচ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের আরেকটি মর্যাদার এ্যাওয়ার্ড জিতেছেন তিনি। সোমবার রাতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আলো ঝলমলে অনুষ্ঠানে ফরাসী সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’ কর্তৃক দেয়া ব্যালন ডি’অর এ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছেন মডরিচ। গৌরময় এ পুরস্কার জয়ের পথে তিনি পেছনে ফেলেছেন রোনাল্ডো ও এ্যান্টোনিও গ্রিজম্যানকে। সেরা তিনে জায়গা না পাওয়া মেসি পেয়েছেন পঞ্চম স্থান। আর সেরা উদীয়মান তারকা হয়েছেন ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ী সুপারস্টার কিলিয়ান এমবাপে। এ বছর রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও জাতীয় দল ক্রোয়েশিয়ার হয়ে চোখ ধাঁধানো সাফল্যের কারণেই সব ব্যক্তিগত এ্যাওয়ার্ড নিজের শোকেসে ভরতে পেরেছেন মডরিচ। এর আগে ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছিল ফ্রান্সের ফুটবল ম্যাগাজিন। এরপর ১৮০ দেশের সাংবাদিকদের দেয়া ভোটে নির্বাচিত করা হয়ে সেরা খেলোয়াড়কে। তবে অবাক করা ব্যাপার সেরা দশের মধ্যেই নেই নেইমার। ব্রাজিলিয়ান তারকা হয়েছেন ১২তম। চতুর্থ হয়েছেন বিশ্বকাপে সিলভার বল জেতা এমবাপে। রিয়ালের হয়ে গত মৌসুমে উয়েফা সুপার কাপ, স্প্যানিশ সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা জেতেন মডরিচ। আর রাশিয়া বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে তুলতে বড় অবদান রাখেন। টুর্নামেন্টজুড়ে ধারাবাহিকভাবে দারুণ খেলেন তিনি, দুটি গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করান ১টি। জেতেন আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘গোল্ডেন বল’। ফিফার বর্ষসেরা ও ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীর ব্যালন ডি’অর পুরস্কার শুরুতে আলাদাভাবে দেয়া হতো। পরে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছয় বছর দুটি পুরস্কার একীভূত করে দেয়া হয়। এরপর ২০১৬ সাল থেকে আবারও আলাদাভাবে দেয়া হচ্ছে পুরস্কার দুটি। শুধু কাকার পর জয়ের রেকর্ডই না, ব্যালন ডি’অরের ইতিহাসে মডরিচ হলেন দ্বিতীয় ফুটবলার যিনি এত বয়সে এই খেতাব জিতেছেন। এর আগে ২০০৬ বিশ্বকাপ জেতার পর ডিফেন্ডার ও ইতালিয়ান তৎকালীন অভিনায়ক ফ্যাবিও ক্যানাভারো ৩৩ বছর বয়সে এই সম্মান পেয়েছিলেন। গৌরবময় এ্যাওয়ার্ড জয়ের পর মডরিচ বলেন, শৈশবে সব শিশুরই কিছু স্বপ্ন থাকে। আমার স্বপ্ন ছিল বড় ক্লাবের হয়ে খেলব আর ভাল ভাল ট্রফি জিতব। ব্যালন ডি’অর খেতাব পাওয়াটা সেই স্বপ্নের চেয়েও অনেক অনেক বেশি। এই ট্রফিটা হাতে পাওয়া একটা বিশাল সম্মান আর অধিকারের ব্যাপার। তবে মেসি-রোনাল্ডোর আধিপত্য ভাঙ্গলেও তাদের প্রশংসা করতে ভুল করেননি ক্রোয়েট তারকা। তিনি বলেন, গত দশ বছরে এ দু’জন অনেকটা অসাধারণ পর্যায়ে ছিল। অতীতে জাভি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, ওয়েসলি স্নেইডারের মতো খেলোয়াড়রা এটা জিততে পারত কিন্তু সেটা হয়নি। শেষ পর্যন্ত মানুষ, আমি জানি না তারা অন্যকিছু চেয়েছিল। আমি মনে করি এটা (ব্যালন ডি’অর পাওয়া) ফুটবলের বিজয়। আমি খুশি যে আমি এটা জিতেছি। কিন্তু এই পুরস্কার তাদের জন্যও যারা সম্ভবত জেতার যোগ্য হয়েও জিততে পারেনি। চলতি মৌসুমের ব্যালন ডি’অর যে রোনাল্ডো পাচ্ছেন না তা আগে থেকেই অনেকটা অনুমিত ছিল। আগের দুই আসরের টানা ব্যালন ডি’অর জয়ী পর্তুগীজ সুপারস্টার নাকি মাফিয়ার কারণে জিততে পারেননি। ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রামে সিআর সেভেনের বোন লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে এমন একটা পৃথিবীতে বাস করি যেটা পচে গেছে। টাকা এবং মাফিয়ার দ্বারা সব নিয়ন্ত্রণ হয়। তবে এসব আবর্জনার চেয়ে ঈশ্বরের ক্ষমতা অনেক বড়। ঈশ্বর তার সময় নিচ্ছেন কিন্তু সে হারবে না।’
×