ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনায় গুলিতে নিহত দুজনের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ, আল্টিমেটাম

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮

পাবনায় গুলিতে নিহত দুজনের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ, আল্টিমেটাম

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ৪ ডিসেম্বর ॥ সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গুলিতে নিহত লস্কর খান ও আবদুল মালেকের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকাল থেকে নিহত দুইজনের মরদেহ নিতে ভাঁড়ারা থেকে কয়েক হাজার নারীপুরুষ পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভিড় করে। এ সময় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হাসপাতালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে নিহত লস্কর খানের ছেলে সুলতান আহমেদের কাছে মরদেহ দুটি হস্তান্তর করে। মরদেহ নিয়ে কড়া পুলিশী প্রহরায় গ্রামে ফেরার পথে তারা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভকারীরা হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বিভিন্ন সেøাগান দেয়। সোমবার সন্ধ্যায় ভাঁড়ারা ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ ও ইউপি নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান খান দু’ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিতে এ দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা বিভিন্ন মহল থেকে প্রচার করা হলেও এদিন দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। সুলতান খানের বাবা লস্কর আলী খান ও আবদুল মালেক গল্প করার সময় প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর গুলি চালায়। এসময় লস্কর আলী খান ও আবদুল মালেক নিহত হন। এ ঘটনায় ১০/১২ জন আহত হওয়ার কথা দাবি করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন আহতের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এদিকে বালিমহল দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষ সংঘর্ষের ঘটনা বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হলেও এলাকার অনুসন্ধানে তারও সত্যতা পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী জানিয়েছে, এলাকার বালিমহল ভাঁড়ারা ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাইদের একক দখলে রয়েছে। প্রতিপক্ষের বালিমহল দখলের কোন প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। তবে এলাকায় আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ ও সুলতান খানের মধ্যে মাঝে মধ্যেই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে আসছিল। গত ইউপি নির্বাচনে আবু সাইদের বিরুদ্ধে সুলতান খান জাসদের মশাল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ নির্বাচনে সুলতান খান অভিযোগ করেন অন্তত তিনটি ভোটকেন্দ্রে কারচুপি করে তার বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। নির্বাচনের পরে আবু সাইদের পক্ষের লোকজন সুলতান খানসহ অন্তত তিনটি বাড়ি ও দোকান আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে নির্বাচনের পর থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলতে থাকে। এ ঘটনায় আদালতে মামলাও চলছে। এলাকার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সুলতান খান যেভাবে সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করে দিনের পর দিন এগিয়ে যাচ্ছিল যা ভাঁড়ারা ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদের জন্যে আগামীদিনে অশনি সঙ্কেত হয়ে উঠছিল। আগামী ইউপি নির্বাচনে সুলতান খানের কাছে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও প্রতিপক্ষ গ্রুপের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলছিল। এছাড়াও সুলতান খানের প্রভাব দিনের পর দিন বেড়ে যাওয়ায় এলাকার বালিমহল হাতছাড়া হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দেয়। এরই জের ধরে প্রতিপক্ষ সুলতান খানের বাবা লস্কর খান ও আবদুল মালেককে গুলি করে হত্যা করে বলে এলাকার সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এ কথাই ভেসে বেড়াচ্ছে। হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত দাবি করে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাঁড়ারা ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের গ্রেফতার ও ফাঁসি দাবি করে সুলতান আহমেদ বলেন, আগামী তিনদিনের মধ্যে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা না হলে পুরো পাবনা শহর অবরোধ করে অচল করে দেয়া হবে। নিহত লস্কর খানের পুত্র সুলতান খান আরও বলেন, বিগত ইউপি নির্বাচনে আবু সাঈদ খানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তার ওপর ক্ষিপ্ত হয় সে। এরই জেরে আমাকে হত্যার উদ্দেশে সোমবার সন্ধায় আবু সাঈদ খান সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা করে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বাবা ও চাচাকে হত্যা করেছে। ঘটনার বিষয়ে ভাঁড়ারা ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খান বলেন, সোমবারের ঘটনার সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। সুলতানের সঙ্গে তার কোন পূর্ববিরোধ নেই। শত্রুতাবশত সুলতান এই ঘটনার সঙ্গে তাকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। ইউপি নির্বাচনে হেরে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। সুলতান আওয়ামী লীগের কেউ নয়, তার পরিবার জামায়াত বিএনপির এজেন্ট এবং সে জাসদ করত। পাবনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন বলেন, সুলতান আহমেদ দুই বছর পূর্বে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তবে এই ঘটনা রাজনৈতিক নয়। ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে হয়েছে আমরাও এই হত্যাকা-ের বিচার দাবি করি। পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অপারেশন) জালাল উদ্দিন বলেন, সোমবার সন্ধ্যার সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত থানায় মামলা দায়ের হয়নি। ওই এলাকার আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, সোমবার সন্ধ্যায় পাবনা সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়নের আওরঙ্গবাদ খয়েরবাগান এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আবদুল মালেক ও লস্কর আলী খান গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
×