ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত খাতে সহায়তা সম্প্রসারণে নেপাল বাংলাদেশ কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮

বিদ্যুত খাতে সহায়তা সম্প্রসারণে নেপাল বাংলাদেশ কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নেপাল-বাংলাদেশ বিদ্যুত খাতে সহায়তা সম্প্রসারণে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে সোম এবং মঙ্গলবার দুদিনের বিদ্যুত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে কমিটি দুটি গঠন করা হয়। একটি কমিটি কারিগরি দিক পর্যবেক্ষণ করবে। অন্যটি নেপালে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ বিষয়ে পর্যালোচনা করবে। নেপালে জলবিদ্যুত উৎপাদন খাতে বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের এই প্রত্যাশা এবার পূরণ হতে চলেছে। নেপাল-বাংলাদেশ দুই দিনের বৈঠকে নেপাল এবং বাংলাদেশের বিদ্যুত সচিবরা নেতৃত্ব দেন। এজন্য বিদ্যুত সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নেপালে রয়েছে। ওই কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব, একজন যুগ্ম সচিব, পিডিবি চেয়ারম্যান, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ছাড়াও পিডিবির কর্মকর্তারা রয়েছেন। ভারতের পর এবার প্রতিবেশী দেশ নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুত খাতে সহায়তা সম্প্রসারণ করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ চেষ্টা করছে একইভাবে মিয়ানমার এবং ভুটানের সঙ্গে সহায়তা সম্প্রসারণের। দুটি দেশেই জলবিদ্যুত উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যুত খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন নেপাল, ভুটান এবং মিয়ানমারে বিনিয়োগ করা সম্ভব হলে দুভাবে দেশ লাভবান হবে। এক, সস্তায় বিদ্যুত পাওয়া যাবে। অন্যটি হচ্ছে দেশগুলোতে শীতে বিদ্যুত রফতানি করা যাবে। কাঠমান্ডু থেকে পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ টেলিফোনে জনকণ্ঠকে জানান, আমাদের এখানে দুদিনের বৈঠকে আমরা নেপাল এবং বাংলাদেশ যৌথভাবে জলবিদ্যুত উৎপাদন নিয়ে আলোচনা করেছি। আলোচনায় দুটি দিক প্রাধান্য পেয়েছেÑএকটি হচ্ছে এখান থেকে বিদ্যুত বাংলাদেশে কিভাবে নেয়া সম্ভব; অন্যটি হচ্ছে কোথায় কোথায় কেন্দ্র নির্মাণ করা যেতে পারে। এজন্য দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি কমিটি কারিগরি বিষয় পর্যালোচনা করবে। অন্যটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখবে। বাংলাদেশকে বিনিয়োগ করতে দিতে নেপাল সম্মতি দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, এই কমিটি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেবে। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নেপাল-বাংলাদেশ বিদ্যুত আমদানি-রফতানির প্রধান বাধা ভারতীয় নীতি। ভারত তাদের দেশের ভূখ- ব্যবহার করে বিদ্যুত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে কঠোর নীতি প্রণয়ন করেছে। ওই নীতিতে বলা হচ্ছেÑ যে কেন্দ্র থেকে প্রতিবেশী দেশ বিদ্যুত ক্রয়-বিক্রয় করবে সে কেন্দ্রে ভারতের সরকার অথবা বেসরকারী খাতের কোন কোম্পানির অংশিদারিত্ব থাকতে হবে। তবে প্রতিবেশী দেশের অনুরোধে ভারত এই নীতিকে শিথিল করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে ভারতের বিদ্যুত সচিব বলেন, আমরা প্রতিবেশী দেশের সুবিধার কথা চিন্তা করে নীতিমালার পরিবর্তন করছি। শীঘ্রই নীতিমালার খসড়া বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশে প্রেরণ করা হবে। যদিও এখনও ভারত নীতির খসড়া বাংলাদেশের কাছে প্রেরণ করেনি। ভারতের এই নীতির দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলো। ভারত নীতি সংস্কারের বিষয়ে উদার হলে দ্বিপাক্ষিকভাবে বাংলাদেশ নেপালের সঙ্গে কেন্দ্র নির্মাণসহ অন্য বিষয়গুলো সমাধান করতে পারবে। অন্যথায় এই চুক্তিতে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নেপালে ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও দেশটি বর্তমানে সামান্য পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন করছে। এখানেও ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি কয়েকটি জলবিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, নেপালে জিএমআর নামে ভারতীয় একটি কোম্পানি জলবিদ্যুত উৎপাদন করছে। তারা বাংলাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বিক্রির প্রস্তাবও দিয়েছে সরকারকে। এছাড়া ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি এনভিভিএন নেপাল থেকে ৫০০ হতে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশে বিক্রি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার অথবা বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুত বিক্রি চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের আগেই এই বিদ্যুত বাংলাদেশ আমদানি করতে পারে। নেপাল এবং ভুটানের উদ্যোগের সঙ্গে মিয়ানমারকে যুক্ত করতে পারলে আরও বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। দেশটিতে আর ৪০ হাজার মেগাওয়াটের জলবিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। অবশ্য মিয়ানমার এরই মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করছে। যারা এসব বিষয়ে আগে থেকে পারদর্শী। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে এখনও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কোন আলোচনা করেনি। তবে চীনা কোম্পানিগুলো মিয়ানমারের সঙ্গে ইতোমধ্যে কয়েকটি চুক্তি করেছে। প্রসঙ্গত, গত ১০ আগস্ট নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুত খাতে সহায়তা সম্প্রসারণে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর পর দুই দেশই যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করে। এটি দুই দেশের স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম বৈঠক।
×