ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘন কুয়াশায় শাহজালাল বিমানবন্দরের যানজট নিরসনের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮

ঘন কুয়াশায় শাহজালাল বিমানবন্দরের যানজট নিরসনের উদ্যোগ

আজাদ সুলায়মান ॥ শীতে ঘন কুয়াশায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ যানজট নিরসনে পুলিশের সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপ নিয়েছে সিভিল এভিয়েশন। অন্যান্যবারের মতো এবার যাতে এ সংকটে মামলার মুখোমুখি হতে না হয়-সেজন্য আগেভাগেই ব্যাপক প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। সুবিন্যস্ত করা হয়েছে ওই এলাকার রাস্তা, কার পার্কিং, যান চলাচলের পদ্ধতি। অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন ও কিছু রাস্তা সাময়িক বন্ধ করার পাশাপাশি কয়েকটি অস্থায়ী উন্মুক্ত স্থানে কারপার্কিং স্পট তৈরি করা হচ্ছে। ট্রাফিক নর্থ জোনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের পথে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক নির্দেশের পর ঢাকা নর্থ জোনের ট্রাফিক ও সিভিল এভিয়েশন এ সংক্রান্ত একাধিক বৈঠকে কিছু ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এসব বৈঠকে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়- ঘন কুয়াশার দরুন ব্যাপক হারে ফ্লাইট সিডিউল বিপর্যয়ে হাজার হাজার গাড়ি বিমানবন্দরের সামনে ও আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি করে। এতে আব্দুল্লাহপুর থেকে দক্ষিণে বনানী পর্যন্ত অচলাবস্থা দেখা দেয়। এমন জটিল অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। সেখানে উপস্থিত ট্রাফিক পুলিশের নর্থ জোনের ডিসি প্রবীর কুমার রায় প্রাথমিকভাবে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে এ যানজটের কারণ চিহ্নিত এবং আশু করণীয় বৈঠকে উপস্থাপন করেন। তিনি বৈঠকে জানান, বিমানবন্দরের কারপার্কিং সুবিধা খুবই অপ্রতুল। তার ওপর উপরের বহুতল পার্কিংয়ের গাড়ির ভাড়া বেশি হওয়ায় চালকরা নিচে খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত কারপার্কিংয়ে থাকতে ভিড় জমায়। ভাড়া কমানো হলে বহুতল কারপার্কিংয়ে যানবাহন রাখায় আগ্রহী হবে চালকরা। আগে বহুতল পুরো যানবাহনে পূর্ণ করতে হবে। তারপর নিচে। এতে অনেক গাড়ির পার্কিং সংকুলান হবে। পুলিশের দ্বিতীয় প্রস্তাব মতে, জরুরীভাবে বিমানের সদর দফতর বলাকার পাশে ভিআইপি লাউঞ্জ রাস্তার কোল ঘেঁষে দক্ষিণ দিকের খোলা জায়গায় অস্থায়ী অন্তত এক হাজার গাড়ির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি উন্মুক্ত কারপার্কিং তৈরির কাজও চলছে। যাতে বিমানবন্দরের সামনে ঢুকতে না পারলেও এখানে পার্কিং করা যায়। একইভাবে পদ্মার নিকটবর্তী উন্মুক্তস্থানে আরও একটি অস্থায়ী কারপার্কিং জোন তৈরি করা হচ্ছে। হোটেল লা মেরিডিয়ান থেকে উত্তরপাশের বাগান দিয়ে ভেতরে চলাচলের রাস্তাটিও সাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখার উপযোগী করার কাজ চলছে। এ বিষয়ে ডিসি প্রবীর কুমার রায় জানান, দক্ষিণ দিক থেকে যারা গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরে আসবেন- তাদের বলাকার সামনে থেকে রাস্তার বাঁ দিকে আলাদা লেন দিয়ে গোলচক্করের কাছে এসে সরাসরি ঢুকে যাবে টার্মিনাল ভবনে কোন ধরনের ট্রাফিক বাধা ছাড়াই। যদি এখানে এসে বিমানবন্দরের ভেতরে গাড়ির স্থান সংকুলান না হয়, সেক্ষেত্রে কোন গাড়ি আটকা পড়ে, তাহলে তাকে সরাসরি সোজা চলে যেতে হবে গোলচক্কর পেরিয়ে উত্তর দিকে সিভিল এভিয়েশন সদর দফতরের প্রবেশ পথ দিয়ে (ছাপড়া মসজিদ সংলগ্ন পশ্চিমদিকের রাস্তা) কাস্টমস হাউসের পাশের কারপার্কিংয়ে। এখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বিমানবন্দরের কারপার্কিং মসজিদের পাশ দিয়ে টার্মিনালে প্রবেশের সুযোগ থাকবে। এতে দক্ষিণ দিক থেকে আসা যানবাহন গোলচক্করের কাছে এসে আর যানজটের শিকার হবে না। অর্থাৎ দশটা গাড়ির জন্য শত শত গাড়ি গোলচক্কররের সামনে আটকা পড়বে না। টার্মিনালের ভেতরের স্থানসংকুলানের অভাবে কোন গাড়ি যদি গোলচক্কর থেকে পশ্চিম দিকে ঢুকতে না পারে তাকে সোজা উত্তর দিক দিয়ে ঘুরে কাস্টমস হাউস হয়ে টার্মিনালে ঢুকতে হবে। তিনি বলেন, সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেশ কিছু জরুরী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যেগুলো হয়তো সময়সাপেক্ষ। যেমন বহুতল কারপার্কিং ভবনের ওপরে আরও কয়েক তলা তৈরি করতে হবে। সিভিল এভিয়েশন নীতিগত ভাবে তা মানতে রাজি হয়েছে। এ ছাড়া লা মেরিডিয়ান হোটেলের উত্তর দিক দিয়ে মেন রোড থেকে বাগানের ভেতর রাস্তাটা সাময়িক খুলে দেয়া হলেও বিমানবন্দরের টার্মিনাল প্রবেশমুখী সব গাড়ি যথাসময়ে পৌঁছতে পারবে। এতে কোন যাত্রী আর যানজটে পড়ে ফ্লাইট মিস করবে না। জানতে চাইলে ডিসি (নর্থ) প্রবীর কুমার রায় বলেন, ইতোমধ্যে টার্মিনালের দক্ষিণে ফ্লাইং ক্লাবের সামনের উন্মুক্ত স্থানে একটি অস্থায়ী কারপার্কিং তৈরি করা হয়ে গেছে। বলাকার দক্ষিণ পাশের বাগানেও একটি অস্থায়ী কারপার্কিংয়ের নির্মাণ কাজ চলছে। এ দুটোতে হাজারখানেক গাড়ির সংকুলান হবে। এ ছাড়া শীতের দু’মাস জরুরীভিত্তিতে বিমানবন্দরে অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন, লোকজন যাতে অহেতুক ঘোরাফেরা না করে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় গাড়ি নিয়ে কারপার্কিংয়ে বসে না থাকে, বহুতল কারপার্কিং খালি রেখে নিচে গাড়ি না ঢোকানোর মতো বেশ কিছু প্রস্তাব দেয়া হয় সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানের কাছে। তিনি এগুলোর যৌক্তিকতা অনুধাবন করে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। এভাবেই আপাতত চলতি শীতের ঘন কুয়াশাজনিত যানজট মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আশা করা যায় এবার আর তেমন জটিলতা দেখা দেবে না। এ বিষয়ে মঙ্গলবার সর্বশেষ অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সিদ্দিকুর রহমান ভুঁইয়া নির্মাণাধীন অস্থায়ী কার পার্কিংয়ের কাজের তদারকি করছেন। তিনি জানান, ট্রাফিকের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের পথে। গোলচক্কর দিয়ে টার্মিনাল ভবনে প্রবেশে কিছুতেই যানবাহনের জটলা হতে দেয়া যাবে না। যারা বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের রিসিভ করতে আসবেন তারা যদি এখান দিয়ে ভেতরে ঢুকতে না পারেন উত্তর দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। যারা বিদেশমুখী যাত্রী তারা যদি গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢুকতে না পারেন, অন্তত গোলচক্কর থেকে লাগেজ নিয়ে হেঁটে হলেও যাতে টার্মিনালে ঢুকতে পারেন সেজন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। এতে আর যাই হোক কোন যাত্রী ফ্লাইট মিস করবেন না। উল্লেখ্য প্রতিবছর শীতে ঘন কুয়াশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামা করতে না পারায় হাজার হাজার যাত্রী আটকা পড়ে শাহজালালে। কার পার্কিং সুবিধা না থাকায় হাজার হাজার গাড়ির যানজট দেখা দেয়। এ যানজটের কারণে বিমানবন্দরের উত্তর দক্ষিণ ও পূর্বপাশে অচলাবস্থা দেখা দেয়। শাহজালালের এ যানজট ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও। এতে অনেক যাত্রী ফ্লাইটও মিস করে। এ কারণে গত বছর কানাডার এক নাগরিক তার ফ্লাইট মিস করে মামলা ঠুকে দেয়ায় তোলপাড় হয়। মূলত তখন থেকেই ট্রাফিক নর্থ জোনের ডিসি প্রবীর কুমার রায় এ সংকট মোকাবেলায় জরুরী করণীয় বিষয় নিয়ে সিভিল সহ বিভিন্ন পুিলশের শীর্ষপর্যায়ে একের পর এক বৈঠক করেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও একাধিক বৈঠকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কিছু পরিকল্পনা নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে ট্রাফিক নর্থ জোন।
×