ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ ফোরাম গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত

পোশাক খাতে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮

পোশাক খাতে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে

এম শাহজাহান ॥ পোশাক খাত উন্নয়নে ভারত-বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ ফোরাম গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে টেক্সটাইল খাতে বিদেশী বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে। গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ-ভারত সচিব পর্যায়ের টেক্সটাইল গার্মেন্টস শিল্পের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই আলোচনার পর প্রস্তাবিত ফোরামে বাংলাদেশ কমিটি গঠনের জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে। প্রস্তাবিত এ ফোরামের টার্মস অব রেফারেন্স পারস্পারিক পরামর্শের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। প্রস্তাবিত কমিটিতে ভারতের পক্ষ থেকে আট সদস্যের একটি কমিটি চূড়ান্ত করে সরকারকে দেয়া হয়েছে। ভারতীয় কমিটির সদস্যদের মধ্যে চেয়ারম্যান কটন টেক্সটাইল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল (টেক্সপ্রোসিল), চেয়ারম্যান পাওয়ার লুম ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল, চেয়ারম্যান সিনথেটিক এ্যান্ড র‌্যায়ন টেক্সটাইল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল, নির্বাহী পরিচালক টেক্সপ্রোসিল ইন্ডিয়া, ভারতের বাণিজ্য ও টেক্সটাইল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে। শীঘ্রই বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও এ ধরনের একটি কমিটি গঠন করে ভারতের বাণিজ্য ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়কে দেয়া হবে। এদিকে টেক্সটাইল খাতে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ রয়েছে। এ খাতে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরই বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিশেষ করে টেক্সটাইল ও জ্বালানি খাতে বরাবরই বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে টেক্সটাইল খাতে অনেক শিক্ষিত, দক্ষ ও সহজলভ্য জনবল রয়েছে। ইতোমধ্যে বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার বিদেশী বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও বিশেষ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেছে। এ কারণে ভারত ও জাপানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশও টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ করতে চায়। শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভারতের বাজারে পোশাক রফতানি হয়। টেক্সটাইল খাতে ভারতীয় বিনিয়োগ আসলে উভয় দেশ লাভবান হবে। জানা গেছে, গত ২০০৯ সালে পোশাকখাতে রফতানি আয় ছিল ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলার যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৬১ কোটি ডলার। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রফতানিকারক দেশ যা দেশজ রফতানির ৮৩ শতাংশ। ২০২১ ও ২০২৫ সালে পোশাক খাত থেকে রফতানি যথাক্রমে ৫ হাজার ও ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার। এছাড়া হোম টেক্সটাইল খাতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল ৮০ কোটি ডলার যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৮৭ দশমিক ৮৬ কোটি ডলার। ফলে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। সরকার নতুন টেক্সটাইল মিল তৈরি করার পাশাপাশি অচল টেক্সটাইল মিলগুলো সচল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শুধু তাই নয়, বস্ত্র ও পোশাক খাতে ১ হাজার ৫শ’ একরের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছে সরকার। যার ফলে ২০২১ সালের মধ্যে দক্ষ ও অদক্ষ মিলিয়ে প্রায় ৫৫ লাখ কর্মীর প্রয়োজন হবে। এছাড়া বেসরকারী খাতের ৯ সহ¯্রাধিক পোশাক কারখানায় ৪০ লাখের অধিক শ্রমিক কাজে নিয়োজিত রয়েছে। যাদের আবার ৭৬ শতাংশ নারী। পোশাক শ্রমিকদের এখন সর্বনি¤œ মজুরি ৮ হাজার টাকা যা ২০১০ সালে ছিল ৩ হাজার টাকা। জানা গেছে, ভারতের পাশাপাশি জাপানী উদ্যোক্তাদের টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে সরকার। জাপানের ওসাকা রাজ্য টেক্সটাইল হাব হিসেবে বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে পরিচিত। এ কারণে এই অঞ্চলের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে টেক্সটাইল খাত উন্নয়নে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ইকোনমিক জোন বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। বিদেশী উদ্যোক্তারা এখন বাংলাদেশের শিল্প খাতে শতভাগ বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং যে কোন সময় মুনাফাসহ বিনিয়োগকৃত অর্থ ফিরিয়ে নিতে পারবেন। ওসাকায় অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রয়েছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন। তারা এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এগিয়ে আসতে পারেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বস্ত্র ও পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের সক্ষমতা এখন বিশ্ব স্বীকৃত। আর সে সক্ষমতা কাজে লাগাতে এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ইতোপূর্বে মধ্যে বাংলাদেশ সফরে এসে পোশাক কারখানা পরিদর্শনও করেছে কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের (সিআইআই) টেক্সটাইল মিশন। ঢাকায় এসে প্রতিনিধিদলটি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বস্ত্র ও পোশাক শিল্প মালিকদের তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক শিল্পে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন তারা। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, কয়েক বছর ধরেই টেক্সটাইল খাতে বিদেশী বিনিয়োগ আনার চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় আগ্রহী ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায়িক ধারণা সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। এসব ধারণার মধ্যে ছিল, সরাসরি বা যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের বিনিয়োগ। একইভাবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও ভারতে বিনিয়োগ করতে চায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সামর্থ্য কাজে লাগানো হয়নি, এমন খাতগুলোতেই যেন বিনিয়োগ করেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে টেক্সটাইল খাতে ভারতীয় বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বিজিএমইএর সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, বিজিএমইএ এদেশে সব বিদেশী বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের পশ্চাত সংযোগ শিল্প খাত ও হাই-ভ্যালুড পণ্য খাতে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এ খাতগুলোতে একক অথবা যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে এলে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরাই উপকৃত হবেন।
×