ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তবলীগ জামাতের সঙ্কট সারাদেশে সহিংসতা ছড়াতে পারে ॥ আশঙ্কা সাদ অনুসারীদের

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

তবলীগ জামাতের সঙ্কট সারাদেশে সহিংসতা ছড়াতে পারে ॥ আশঙ্কা সাদ অনুসারীদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তবলীগ জামাতের বিরাজমান সঙ্কটে সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন ভারতের তবলীগ জামাতের মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভির অনুসারীরা। তাদের অভিযোগ, মাওলানা জুবায়ের গ্রæপের মুসল্লিদের রবিবার বায়তুল মোকাররমে উত্তর গেটে উস্কানিমূলক বক্তব্যের জের ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে তারা। জঙ্গী কায়দায় তাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ সাত অনুসারীদের। মাদ্রাসার কিশোর ছাত্রদের হাতে লাঠি তুলে দিয়ে তাদের মধ্যে উগ্রতা ও জঙ্গী মনোভাব তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একই সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন থেকে ৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন থেকে সা’দ কান্ধলভির অনুসারীরা এসব কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা আশরাফ আলী। তিনি জানান, শনিবারের সংঘর্ষে নিহত ইসমাইল মণ্ডল ছিলেন সা’দ অনুসারী। সংবাদ সম্মেলনে নিহত মণ্ডলের ছেলে জাহিদ হাসান উপস্থিত ছিলেন। বাবা হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি। যদিও রবিবার সা’দবিরোধীরা এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, নিহত ইসমাইল মণ্ডল তাদের পক্ষের লোক। মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, মাদ্রাসার কিশোর ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়ে নির্মম হামলা চালানো হয়েছে। আগে থেকে অস্ত্র, বাঁশের লাঠি নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন জুবায়ের অনুসারীরা। তারা আগে থেকেই রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল প্রতিটি ওজাহাতি জোড়ে। তারা সারা দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে বিচারের দাবি জানান সা’দ অনুসারীরা। মাওলানা আশরাফ বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন বলা হয়েছিল, যে যার মতো কাজ চালাবে, এক পক্ষ অন্য পক্ষের কাজে বাধা দেবে না। ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক তবলীগের কার্যক্রম পরিচালনার পরিপত্র সময়োপযোগী ছিল। কিন্তু ২৪ সেপ্টেম্বর তা স্থগিত করা হয়। এর ফলে গত ২ বছরের চলমান সমস্যা মাথাচাড়া দেয়। এতে করে জুবায়েরপন্থীরা মারমুখী হয়ে উঠেছে। সংঘর্ষ তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে- এমন আশঙ্কা করে মাওলানা আশরাফ বলেন, আমাদের সাথীরা সকাল থেকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিল। কিন্তু তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। তিনি অভিযোগ করেন, মাদ্রাসার ছাত্রদের তবলীগের বিবাদে ও মারামারিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোমলমতি মাদ্রাসার ছাত্রদের হযরত মাওলানা সাদ অনুসারী বয়স্ক নিরীহ তবলীগের সাথীদের মারধর, ভয়ভীতি দেখানো, মসজিদ হতে জামাতকে বের করে দেয়া, কাকরাইল মসজিদে মুরব্বিদের কামরা ভাংচুর, টঙ্গী মাঠ দখল প্রভৃতি অবৈধ ও বেআইনী কাজে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, বহুবার তবলীগ জামাতের সমস্যা সমাধানের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলা হয়, প্রশাসনে চিঠি পাঠানো হয় ১০০ বারের বেশি। কিন্তু কেউ আমলে নেয়নি। সরকারের কোন এক পক্ষের অবহেলায় টঙ্গীর সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষে তৃতীয় পক্ষের অবস্থান আছে বলে ধারণা করছেন মাওলানা সা’দের সমর্থকরা। পাশাপাশি টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে তবলীগ জামাতের মুসল্লিদের ওপর হামলাকারীদের বিষয়ে তদন্ত করে তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন মাওলানা সাদপন্থী আলেমরা। ওই দিনের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে টঙ্গীর হামলার ঘটনায় নিহত তবলীগের সদস্য ইসমাইল মন্ডলের ছেলে জাহিদ হাসান উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, কাকরাইল মসজিদের মুরুব্বি মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ, মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ, মাওলানা আবদুল্লাহ, মাওলানা সাইফুল প্রমুখ। ‘সেদিন পুলিশের ভ‚মিকা ছিল রহস্যজনক’ ॥ স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে জানান, টঙ্গীতে তবলীগ জামাতের দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের ভ‚মিকা ছিল রহস্যজনক- এমনই দাবি করেছে জোবায়ের অনুসারীরা। সোমবার জোবায়ের অনুসারী মুরব্বিরা তবলীগের সাথীদের ওপর সা’দ অনুসারীদের হামলার প্রতিবাদে গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে ৬ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দিয়েছে। জয়দেবপুরে তবলীগ জামাতের জোবায়ের অনুসারীরা সোমবার দুপুরে টঙ্গীর এজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে ৬ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি পেশ করেন। এতে মাওলানা আশেকে মুস্তফা, মুফতি মাসউদুল করীম, মুফতি লেহাজ উদ্দিন ভ‚ইয়া, মুফতি নূরুল ইসলাম, মুফতি আতাউর রহমান, মাওলানা ফজলুর রহমান প্রমুখ নেতৃত্ব দেন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, গত শনিবার টঙ্গীর এজতেমা ময়দানে জামাত করে মাঠে কাজরত অবস্থায় তবলীগের সাথী ও মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর নিজামুদ্দিনের মাওলানা সা’দ অনুসারীরা সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এ সময় সেখানে উপস্থিত পুলিশ দাঁড়িয়ে নীরব ভ‚মিকা পালন করেছে। শুধু তাই নয় ওই দিন গেট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকতে পুলিশ সা’দপন্থীদের সহায়তা করেছে। টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি মোঃ এমদাদুল হক পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শনিবার সংঘর্ষের দিন ময়দানের ভেতর থেকেই প্রথমে মুসল্লিদের ওপর ঢিল ছুড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।
×