ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চারণকবি বিজয় সরকারের ৩৩তম প্রয়াণ দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৭:১২, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

চারণকবি বিজয় সরকারের ৩৩তম প্রয়াণ দিবস আজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নড়াইল ॥ ‘এই পৃথিবী যেমন আছে, তেমনিই ঠিক রবে, সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে’। এই গানের রচয়িতা অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা চারণকবি বিজয় সরকারের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বার্ধক্যের কারণে ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতের হাওড়ার বেলুডে পরলোকগমন করেন বিজয় সরকার। পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়। বিজয় সরকার ১৩০৯ বঙ্গাব্দের ৭ ফাল্গুন নড়াইলের নিভৃতপল্লী ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মা হিমালয়া দেবী। বিজয় সরকারের দুই স্ত্রী বীণাপানি ও প্রমোদা অধিকারীর কেউই বেঁচে নেই। সন্তানদের মধ্যে কাজল অধিকারী ও বাদল অধিকারী এবং মেয়ে বুলবুলি অধিকারী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছেন। ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ও পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ বিজয় সরকারের রচনা পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। রবীন্দ্রভারতী ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় বিজয় সরকারের ওপর গবেষণার জন্য পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করেছে। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি। এবার ‘কণ্ঠযোদ্ধা’ হিসেবে বিজয় সরকারকে মরণোত্তর ‘স্বাধীনতা পদক’ দেয়ার দাবি উঠেছে। এদিকে বিজয় সরকারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে আজ থেকে দু’দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বিজয় সরকার কবিগান গেয়ে যে টাকা উপার্জন করতেন, তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করতেন। তাই ‘কণ্ঠযোদ্ধা’ হিসেবে বিজয় সরকারকে ‘স্বাধীনতা পদক’ দেয়ার দাবিসহ জাতীয় চারণকবির স্বীকৃতি প্রদান, বিজয় সরকারের নামে নড়াইলে ফোকলোর ইনস্টিটিউট নির্মাণ এবং পাঠ্যপুস্তকে কবির রচনা ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠেছে। মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা চারণকবি বিজয় সরকারের বসতভিটা এখন সংরক্ষণের অভাবে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। ২০০৯ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বিজয় সরকারের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদিতে ভবন ও বিজয় মঞ্চ নির্মিত হলেও অযতœ-অবহেলায় তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমেছে। সংগ্রহশালা নির্মাণের দাবিও রয়ে গেছে উপেক্ষিত। এদিকে, তার বাড়িটি দেখভালের জন্য নেই কোন লোকবল। মাত্র দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার কারণে দর্শনার্থীরা পড়েন বিপাকে। গ্রাম্য মেঠোপথের মতোই রয়ে গেছে রাস্তাটি। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। বিজয় সরকার একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। ১৮০০-র বেশি গান লিখেছেন এবং সুর ও সঙ্গীত করেছেন। তিনি গানের কথায়, সুরের মাঝে বেঁচে আছেন হাজারো মানুষের হৃদয়ে। বিজয় সরকারের গানগুলো আজও মানুষের মুখে মুখে সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে দেয়। শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন বিজয় সরকার। চারণকবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের যুগ্ম-আহ্বায়ক এস এম আকরাম শাহীদ চুন্নু জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বিজয় সরকারের অবদান রয়েছে। তিনি কবিগান গেয়ে যে টাকা উপার্জন করতেন, তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করতেন। তাই ‘কণ্ঠযোদ্ধা’ হিসেবে বিজয় সরকারকে ‘স্বাধীনতা পদক’ দেয়ার দাবি জানান তিনি। ‘কণ্ঠযোদ্ধা’ হিসেবে বিজয় সরকারকে ‘স্বাধীনতা পদক’, পাঠ্যপুস্তকে কবির রচনা ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা এবং কবিকণ্ঠের গান পা-ুলিপি আকারে সংরক্ষণসহ বিজয় সরকারের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী তার জন্মভূমি নড়াইলের ডুমদিতে পালনের জোর দাবি জানিয়েছেন বিজয়ভক্তরা।
×