ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিসেম্বরের মধ্যে রাইটের টাকা ব্যবহার করবে বিডি থাই

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

ডিসেম্বরের মধ্যে রাইটের টাকা ব্যবহার করবে বিডি থাই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিডি থাই এ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে রাইট শেয়ার ইস্যু করে ৫২ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। গতবছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাইটের অর্থ ব্যয়ের কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরো অর্থ ব্যয় করতে পারেনি কোম্পানিটি। এ পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারহোল্ডার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাইটের অর্থ ব্যয়ের সময় সীমা বাড়ানো হয়। তবে দ্বিতীয়বার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনার পাশাপাশি সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে কোম্পানিটি। ফলে এবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রাইট তহবিলের অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির কর্মকর্তারা। বিডি থাই এ্যালুমিনিয়ামের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোঃ জাহিদুল আলম রাইট তহবিলের অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে বলেন, এরই মধ্যে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও আনা হয়ে গেছে। আশা করছি, এ মাসের মধ্যেই রাইটের পুরো অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে। রাইটের অর্থে ব্যবসা সম্প্রসারণের পর কোম্পানির উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বাড়লেও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কারণে ঠিকাদাররা বর্তমানে কিছুটা রক্ষণাত্মক অবস্থানে রয়েছেন। তবে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বাড়তি কার্যাদেশ পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। রাইট তহবিল ব্যবহার-সংক্রান্ত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ম্যাবস এ্যান্ড জে পার্টনার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ বছরের জুন পর্যন্ত রাইটের মাধ্যমে সংগৃহীত ৫২ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার ২৮০ টাকার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৪৪ কোটি ৩৪ লাখ ৫৫ হাজার ১৩৫ টাকা। অব্যবহৃত থাকে ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার ১৫৫ টাকা। এর মধ্যে যন্ত্রপাতি আমদানি বাবদ ৪ কোটি ৫ লাখ ও চলতি মূলধন বাবদ ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা অব্যবহৃত ছিল। তবে কোম্পানির কর্মকর্তাদের তথ্য অনুসারে এ বছরের জুনের পর বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানির পাশাপাশি প্রকল্পের অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনক্রমে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ৫ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার ২৮টি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৫২ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূলধন উত্তোলন করে বিডি থাই এ্যালুমিনিয়াম। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাইটের পুরো অর্থ ব্যয় না হওয়ায় এ সময়সীমা আরও এক বছর বাড়াতে কোম্পানির ৩৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনক্রমে বিএসইসির কাছে আবেদন করা হয়। কোম্পানিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাসে বিএসইসি রাইটের অর্থ ব্যয়ের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন করে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জানায়, রাইটের অর্থে অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে ব্যয় করা হয়েছে। এরই মধ্যে চতুর্থ এক্সট্রুুশন প্রেস, এ্যান্ডোলাইজেশন প্লান্ট-২ ও সাবস্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া পাউডার কোটিং প্লান্টের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানায় দুটি নতুন ডিজেল জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে কোম্পানির বিদ্যমান উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণে উন্নীত হয়েছে। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে কোম্পানিটির বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১৬০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা এর আগের হিসাব বছরে ছিল ১০৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, বিডি থাইয়ের বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৩৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময় ছিল ৩৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময় ছিল ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। সর্বশেষ রেটিং অনুসারে দীর্ঘমেয়াদে বিডি থাই এ্যালুমিনিয়াম লিমিটেডের ঋণমান ‘এ প্লাস’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘এসটি-টু’। ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির নিরীক্ষিত, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও হালনাগাদ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রত্যয়ন করেছে এআরজিইউএস ক্রেডিট রেটিং সার্ভিসেস লিমিটেড। উল্লেখ্য, ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরের জন্য ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ সুপারিশ করেছে বিডি থাই এ্যালুমিনিয়ামের পর্ষদ। বিদায়ী হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়ায় ১ টাকা ২ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৬০ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ২৮ টাকা ৭৯ পয়সা। এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই- সেপ্টেম্বর) বিডি থাই ২১ পয়সা ইপিএস দেখিয়েছে, আগের বছর একই সময় যা ছিল ১৯ পয়সা।
×