ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পোল্যান্ড জলবায়ু সম্মেলন

বিপর্যয়ের সন্ধিক্ষণে পৃথিবী

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

বিপর্যয়ের সন্ধিক্ষণে পৃথিবী

জলবায়ু ইস্যুতে পোল্যান্ডের কাটোইস শহরে শুরু হয়েছে কপ ২৪ সম্মেলন (কনফারেন্স অব পার্টিস-কপ ২৪)। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব হুমকির মুখে পড়েছে। তারা বলছেন, পৃথিবী এখন বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। একে বাঁচাতে হলে এখনই জরুরী ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। বিবিসি। রবিবার শুরু হওয়া জলবায়ু সম্মেলন চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রায় ২শ’ দেশ এবারের সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আয়োজিত এ সম্মেলন শুরুর একদিন আগে সংস্থার চারজন অভিজ্ঞ সাবেক কর্মকর্তা এক বিশেষ আলোচনায় অংশ নেন। তারা জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহ্বান জানান। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম বিপর্যয়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছে পৃথিবী। সাধারণত কোন সম্মেলন শুরুর নির্ধারিত দিনের আগেই আলোচনা শুরু হয় না। জলবায়ু নিয়ে পরিস্থিতি এতটাই সঙ্কটজনক যে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে তাগাদা দেয়ার জন্য আলোচনায় বসেন। ফিজির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক বাইনিমারামা, মরক্কোর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালাহেদ্দিন মেজোয়ার, ফ্রান্সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লরা ফাবিয়াস এবং পেরুর সাবেক পরিবেশমন্ত্রী মানুয়েল পুলগার ভিদালু জলবায়ু পরিবর্তন সীমিতকরণ নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের উদ্যোগে ওই আলোচনায় যোগ দেন। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির পর এবারের সম্মেলনটি জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা তাদের বৈঠক শেষে দেয়া বিবৃতিতে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি মেনে চলার জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। ওই চুক্তির মূল কথা ছিল বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে সীমিত রাখার জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা ৪৫ শতাংশের মধ্যে কমিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কা আছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, কার্বন নিঃসরণের মাত্রা গত চার বছরে তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। জাতিসংঘের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ গ্রুপ এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে । তারা বলেছেন জরুরী ভিত্তিতে এই নিঃসরণ কমাতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিকে তারা সন্ধিক্ষণ হিসেবে অভিহিত করেন। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে শনিবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে হাজার হাজার মানুষ র‌্যালি করে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় তারা প্যারিস চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়। বিশ্বব্যাংকও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য আগামী পাঁচ বছরে ২শ’ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বৈশ্বিক রাজনীতি একটি বড় ইস্যু। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবর জলাবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্ব অস্বীকার করে এসেছেন। তিনি তার দেশকে জলবায়ু চুক্তি থেকে বের করে এনেছেন। ব্রাজিলের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর ট্রাম্পের অনুসরণ করে তার দেশের সরকারী জলবায়ু এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়েছেন। কয়লা বান্ধব পোলিশ সরকারের জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজক দেশ হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন অনেক পর্যবেক্ষক। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন লক্ষ্য হলো জলবায়ু ইস্যুতে নিরপেক্ষ থাকা। গত এক বছরের চরম আবহাওয়ার বিষয়ে আশঙ্কা করা হলেও নবায়নযোগ্য শক্তির সর্বনিম্ন মূল্য বেশ ইতিবাচক রয়েছে। বিগত জলবায়ু সম্মেলনগুলোর সাবেক সভাপতিরা এক যৌথ বিবৃতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নেয়া পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘সময় যত পার হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ততই ভয়াবহভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠছে আমাদের সামনে’।
×