ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এএসপি-ওসিসহ আহত অর্ধশত, ভাংচুর, সড়ক অবরোধ

ফতুল্লার গার্মেন্টসে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

ফতুল্লার গার্মেন্টসে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীতে শ্রমিকদের উৎপাদন মজুরি বৃদ্ধির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা হামলা চালিয়ে ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ২৫টি গার্মেন্টস কারখানার জানালার কাঁচ ভাংচুর করে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি গাড়ির কাঁচ ভাংচুর চালায়। দুই ঘণ্টার দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় শিল্পাঞ্চল পুলিশের এএসপি সুমন মিয়া ও ফতুল্লা মডেল থানার ওসি এসএম মঞ্জুর কাদের, ১২-১৩ পুলিশ সদস্য ও শ্রমিকসহ কমপক্ষে অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাক-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় রাস্তার দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সোমবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। পরে শ্রমিকরা রাস্তা থেকে চলে গেলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। জানা গেছে, উৎপাদনে মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে বিসিকে অবস্থিত ফকির নীটওয়্যার কারখানার শ্রকিদের মধ্যে গত তিনদিন ধরে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। মালিকপক্ষ মজুরি বৃদ্ধি করলেও দাবি অনুযায়ী বৃদ্ধি না হওয়ায় শ্রমিকরা রবিবার কারখানাটির অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করে। এ অসন্তোষ নিরসনে কারখানাটির মালিকপক্ষ সোমবার সকালে বিসিক শিল্পমালিক সমিতি, বিকেএমইএ ও শ্রম অধিদফতরের কর্মকর্তাদের নিয়ে ফকির নীট ওয়্যারে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এসময় শ্রমিকদের বেশ কিছু দাবি দাওয়া উপস্থাপন করেন। আলোচনার মাধমে শ্রমিকদের বেশ কিছু দাওয়া মেনে নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মুজরি বৃদ্ধির বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত হয় আশপাশের আরও আট দশটি ফ্যাক্টরির রেট যাচাই-বাছাই করে তাদের মজুরি বৃদ্ধি করা হবে। কিন্তু শ্রমিকরা এতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে কারখানা থেকে বের হয়ে এসে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় তাদের সঙ্গে এসে আশপাশের আরও বেশ কয়েকটি গার্মেন্টসের শ্রমিক বেরিয়ে এসে যোগ দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বিসিক শিল্পনগরীর সকল ফ্যাক্টরি একযোগে ছুটি দিয়ে দেয়া হয়। পরে বিক্ষোভরত শ্রমিকরা যাওয়ার সময় বেশ কয়েকটি কারখানায় হামলা চালিয়ে ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এমভি নীট ওয়্যার, এসম এস ডাইং, পেনটেক্স, রবিনটেক্স, বিসিক শিল্পনগরীর বাইরে চর নসিংপুর সাহিল গার্মেন্টস, তারা স্পিনিং মিলস, হাসেম স্পিনিংসহ কমপক্ষে ২৫ কারখানায় ভাংচুর করা হয়। খবর পেয়ে শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও ফতুল্লা থানা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারাসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এতে শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ব্যাপক ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে শুরু হয় শ্রমিক-পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের এমভি নীটওয়্যার কারখানার পকেট গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে একটি প্রাডো গাড়ি ও একটি টয়োটা প্রাইভেটকারসহ ফ্যাক্টরিতে ভাংচুর চালায়। এ সংঘর্ষের সময় শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন মিয়া ও ফতুল্লা থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ও ১২-১৩ জন পুলিশ সদস্যসহ প্রায় অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়। শ্রমিক রাশেদ আলম, রাজ্জাক, সুমন মিয়া জানান, কয়েক মাস ধরে ফকির নীট ওয়্যার কারখানায় উৎপাদন মজুরি আগের চেয়ে কমিয়ে দেয়া হয় এবং হেলপারহীন চাইনিজ লাইন পদ্ধতি চালু করা হয়। এ কারণে শ্রমিকদের বিরতিহীনভাবে আট থেকে নয় ঘণ্টা টানা কাজ করতে হয়। কিন্তু টানা কাজ করলেও উৎপাদন মজুরি বাড়ানো হয়নি। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। শ্রমিক আল-আমিন জানান, সংঘর্ষের সময় পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। বিসিক শিল্পমালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ফকির নীটওয়্যার কারখানায় শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে ত্রিপক্ষীয় সভায় আলোচনার মাধ্যমে শেষে পর্যায়ে ছিল। কিন্তু মজুরি বৃদ্ধির দাবির বিষয়টি সমাধানের জন্য এক দিন সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু শ্রমিকরা তা না মেনে রাস্তায় নেমে আসে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে মিশে কিছু বহিরাগত চিহ্নিত সন্ত্রাসী লাঠিসোটা নিয়ে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। তার নিজের ফ্যাক্টরি এমভি নীট ওয়্যারে পকেট গেট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে শ্রমিকরা তা-ব চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি সরকারের উচিত এসব বহিরাগতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জনান। শিল্পাঞ্চল পুলিশ, নারায়ণগঞ্জ-৪ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাবুব-উন-নবী জানান, বিসিক শিল্পনগরীতে মজুরি বুদ্ধির দাবিতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে যানচলাচল বন্ধ করে দেয় এবং গার্মেন্টস কারাখানায় ভাংচুর করছে এমন খবর পেয়ে পুলিশ এসে শ্রমিকদের নিবৃত্ত করা চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিকরা মারমুখী হয়ে উঠে। কিন্তু পুলিশ তাদের ওপর বল প্রয়োগ করে নাই। তাদের শান্তিপূর্ণভাবে সরিয়ে দেয়া হয়। আমরা শ্রমিকদের ওপর আঘাত করা হয়নি। শ্রমিকরা পুলিশের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেক করে। এ ঘটনায় আমাদের একজন সহকারী পুলিশ সুপার সুমন মিয়াসহ ১২-১৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কে যানচলাচল শুরু হয়।
×