ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে অপরাধ করে এসেও অনেকে প্রার্থী

শুধু জামিনের আশায়ও বিএনপির মনোনয়ন নিয়েছেন অনেকেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

শুধু জামিনের আশায়ও বিএনপির মনোনয়ন নিয়েছেন অনেকেই

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সন্ত্রাসী, অপরাধী, দুর্নীতিবাজ, গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ বহু মামলার আসামিদের মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এসব মামলার আসামিদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে এই অজুহাতে দেদার জামিন লাভের সুযোগ পাচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। অনেকেই শুধু জামিন লাভের আশায় বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনী মাঠে অবতীর্ণ হয়েছেন। এমনকি বিদেশে অপরাধ করেও দেশে এসে নির্বাচন করছেন বিএনপির কোন কোন প্রার্থী। তাদের মনোনয়নও গ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি দলীয় বিভিন্ন মামলার আসামি, গ্রেফতারি পরোয়ানার (ওয়ারেন্ট) আসামি, সন্ত্রাসী, অপরাধীরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার কারণে তাদের গ্রেফতারে ইতঃস্তত দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ছেন মাঠ পর্যায়ের অনেক পুলিশ কর্মকর্তা। নির্বাচনে অংশ নেয়ার নামে ডজন ডজন মামলার আসামি হয়েও জামিন লাভের সুযোগটি গ্রহণের কৌশল নিয়েছে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বিএনপির এই ধরনের প্রার্থীর কারণে নির্বাচনী মাঠ কলুসিত হওয়ার আশঙ্কা করছে পুলিশ। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে, মামলায় ওয়ারেন্ট জারি করা আছে, সন্ত্রাসী ও অপরাধী রয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করতে যাচ্ছে না পুলিশ। উদাহরণ হিসেবে ২৬৭টি মামলার আসামি হয়েও ঢাকা-১২ আসনে বিএনপির বৈধ প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব। একই আসনে বিএনপির প্রত্যয়নপত্র নিয়ে প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান, তার বিরুদ্ধেও রয়েছে ৭২টি মামলা। একই ঘটনা ঘটেছে ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোঃ নবীউল্লাহর ক্ষেত্রে। তার বিরুদ্ধে ১২১টি মামলা রয়েছে বলে মনোনয়ন বাছাইয়ের সময় জানানো হয়। ঢাকা-৮ আসন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বৈধ প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ৪২টি মামলা রয়েছে। ঢাকা-৯ আসন থেকে বিএনপির বৈধ প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ, তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৮০টি মামলা। ঢাকা-১০ আসনে বিএনপির প্রত্যয়নে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া নাসিরউদ্দিন আহমেদ অসীমের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ঢাকা-১১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপত্র দাখিল করা এ জি এম শামসুল হকের বিরুদ্ধে ২২টি মামলা রয়েছে। ঢাকা-১৩ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সবাই বৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন এমন দুইজন প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম ও আরেক বৈধ প্রার্থী আতিকুল ইসলাম মতিন। সালামের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা এবং আতিকুলের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৫টি মামলা। ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপির বৈধ প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন মোঃ আমিনুল হক ও মুন্সি বজলুল বাসিদ আঞ্জু। তাদের মধ্যে আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ৬টি ও আঞ্জুর বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে। ঢাকা-১৫ আসনে বিএনপির মনোনয়নে দুইজন প্রার্থী বৈধতা পেয়েছেন। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা এবং বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এস এম আসাদুজ্জামান রিপনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। ঢাকা-১৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়া মোহাম্মদ আহসান উলাহ হাসানের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা রয়েছে। ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির দুই প্রার্থী বৈধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে এসএম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে রয়েছেন ১৩৮টি মামলা। বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রশিদ, নাসিরউদ্দিন আমেদ অসীম, জি এম শামসুল হক, আতিকুল ইসলাম মতিন, মোঃ আমিনুল হক ও মুন্সি বজলুল বিরুদ্ধে শতাধিক পর্যন্ত মামলা থাকলেও তাদের মনোনয়নপত্র গৃহীত হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে বহু মামলা ও ওয়ারেন্ট থাকা সত্ত্বেও দিনের পর দিন ধরে খোদ পল্টনের বিএনপি অফিসে বসবাস করে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করেই যাচ্ছেন তিনি। প্রায় প্রতিদিনই অভিযোগ করাই যেন তার রুটিন কাজে পরিণত হয়েছে। অথচ পুলিশ গ্রেফতার করছে না রুহুল কবির রিজভীকে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০০১ সালের নির্বাচনকে ভিত্তি ধরে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। দলটি শেষ পর্যন্ত জামায়াতকেও ২৫টি ধানের শীষ প্রতীক দিয়েছে। এর সঙ্গে জামায়াত আরও ২২টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। এতে নির্বাচনী মাঠে সহিংস রাজনীতির পথকেই প্রশস্ত করে তুলছে। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল বিএনপি-জামায়াত তাদের নেতাকর্মীরা ডজন ডজন মামলা মাথায় নিয়েও নির্বাচনে অংশ নেয়ার যে সুযোগ পাচ্ছে, জামিন লাভ করার কৌশল নিয়ে নির্বাচনী মাঠকে কলুসিত করে তুলছে।
×